বিসিবি নির্বাচনে সরকার, বিএনপি কেউ জিতেনি

আমিনুল ইসলাম বুলবুল, ফারুখ আহমেদ, খালেদ মাসুদ পাইলট, আসিফ আকবর প্রায় প্রতিদ্বন্দ্বীতা বিহীন নির্বাচনে বিসিবির ২০২৫-২৯ পর্বে নির্বাচিত হয়েছে। বিসিবির খণ্ডকালীন দুই সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং ফারুখ আহমেদ এখন একসাথে সভাপতি এবং সহসভাপতি হিসাবে বাংলাদেশের বিশাল জনপ্রিয় খেলাটির প্রশাসন দায়িত্বে থাকবেন।

শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশের অন্যতম ক্রিকেট কিংবদন্তি তামিম ইকবালসহ ঢাকার ক্রিকেট ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিরা নির্বাচন বর্জন করেছে। সরকারের কৌশলের কাছে একটি রাজনৈতিক দলের বিসিবি দখল মিশন ব্যর্থ হলেও বিতর্কিত বিসিবি নির্বাচন বিজয়ী বুলবুলের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। ঢাকার ক্লাবগুলোর এক অংশের কর্মকর্তারা তাদের মতে সরকার প্রভাবিত নির্বাচনকে সাজানো আখ্যা দিয়ে অসহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে।

নতুন কার্যকরী পরিষদকে এখন সবপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। স্বল্প সময়ের অবস্থানে বুলবুল সূচিত সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটের খোলনলচে পাল্টে ফেলতে হবে। রাজনীতির বিষবাষ্পে দূষিত ক্রিকেট দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনায় কখনোই শাসক দলের প্রভাবমুক্ত ছিল না।

ফলশ্রুতিতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির আড়াই দশক পরেও বাংলাদেশ ক্রিকেট একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে খাবি খাচ্ছে। কয়েকজন বিশ্বমানের ক্রিকেটার সাকিব, মাশরাফি, মুশফিক, তামীম, রিয়াদের কখনো একক কখনো সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিজয় আসলেও ধারাবাহিকতা সৃষ্টি হয়নি। তৃণমূলে অসামান্য জনপ্রিয়তা থাকলেও ঘরোয়া ক্রিকেট সংগঠন অগোছালো, অবিন্যস্ত।

এশিয়া ক্রিকেট কনফারেন্স এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলে নিবিড়ভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতায় বুলবুল চ্যালেঞ্জগুলো জানে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকায় বুলবুল ইতিমধ্যেই তৃণমূলে ক্রিকেটকে সাজানোর কিছু সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নিয়েছে। বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ে সিরসিকেট সংগঠনগুলোকে সচল করা হচ্ছে।

ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতে ভালো উইকেট এবং পরিবেশে নিয়মিত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট আয়োজনের ব্যবস্থা, উন্নত উইকেট, অনুশীলন সুবিধা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোচ ,আম্পয়ার্সদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

বয়সভিত্তিক ক্রিকেটারদের পরিকল্পনামাফিক বিকশিত করার উদ্যোগ চলমান। আইসিসি সহযোগী দেশগুলোর ক্রিকেট বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা রাখা বুলবুলের নীল নকশা সফল হলে ক্রিকেট ৩-৫ বছরে পাল্টে যাবার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এতদিনের সুযোগসন্ধানী দুর্নীতিবাজ বিসিবি কর্মকর্তাদের দূষিত অবস্থানকে কত শীঘ্র নতুন পরিচালনা পরিষদ দুর্নীতি মুক্ত করতে পারবে সেটি দেখার বিষয়।

শুরুতেই বিভাগীয় ক্রিকেট সংগঠনগুলো সক্রিয় করতে হবে, বিপিএলকে ব্র্যান্ডিং করে ক্রিকেটকে পণ্য বানাতে হবে। সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। ক্রিকেট পরিকল্পনা, ক্রিকেট অপারেশন, সিইও তিনটি স্থানে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন দক্ষ জনকে দায়িত্ব দিতে হবে। সভাপতির ভাবমূর্তি অনেকটাই নির্ভর করে দক্ষ সিইওর উপর।

একই সঙ্গে ক্রিকেটের সকল পর্য‍ায় থেকে দুর্নীতি বিশেষত ম্যাচ ফিক্সিং বিষয়ে কঠোর নীতি গ্রহণ করতে হবে। খেলোয়াড়দের নির্বাচন পদ্ধতি স্বচ্ছ, নির্মোহ এবং মেধাভিত্তিক হতে হবে। দেশি বিদেশী কোচ নির্বাচন এবং নিয়োগ পদ্ধতিতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। মিডিয়ার সঙ্গে সংযুক্তি বিষয়ে সতকর্তা থাকতে হবে।

আমি নতুন কার্যকরী পরিষদের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি। তৃণমূলে ক্রিকেট সুসংগঠিত হলে ৩-৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবস্থান সকল ফরম্যাটে শীর্ষ ৫ উন্নীত হওয়ার স্বর্ণালী সম্ভাবনা  রয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fourteen − 12 =