বৃষ্টি বাধা পার হলেই বাংলাওয়াশ

সালেক সুফী

পাকিস্তানকে পাকিস্তানের আঙিনায় বাংলাওয়াশ করতে এখন বাধা শুধু বৃষ্টি বজ্র বৃষ্টি। কাল রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠানরত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৪৩ রান। হাতে আছে ১০ উইকেট। প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটে পরাজয়ের পর ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কৃতকল্প ছিল পাকিস্তান। টেস্টের প্রথম দিন বৃষ্টি বিঘ্নিত হয়ে খেলা হয়নি। দ্বিতীয় দিনে টসে হেরে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ মিরাজের স্পিন জাদু আর তাসকিনের পেস সামাল দিতে বার্থ হয়ে ২৭৪ রানে গুটিয়ে যায়।

তৃতীয় দিন সকালের সেশনে উইকেট, পরিবেশের সুযোগ নিয়ে চেপে ধরেছিল পাকিস্তান বাংলাদেশকে। ২২/৬ অবস্থান থেকে দেয়ালে পিঠ রেখে অবিস্মরণীয় লড়াই করে লিটন এবং মিরাজ। বিশ্ব রেকর্ড (১৬৯) করে ওরা দলকে পাকিস্তান স্কোরের কাছাকাছি নিয়ে যায়। ২৬২ রানে শেষ হয় বাংলাদেশ ইনিংস। ব্যাবধান মাত্র ১২ রানে।

পাকিস্তানের করার ছিল দ্রুত রান করে বাংলাদেশকে একটি কঠিন টার্গেট দেওয়া। শেষ দুই দিন বৃষ্টি বাগড়া দিবে জানাই ছিল। বাংলাদেশ পেসারত্রয় হাসান মাহমুদ (৫/৪৩), নাহিদ রানা (৪/৪৪) এবং তাসকিন (১/৪০) তুখোড় বোলিং করে ১৭২ রানে সীমিত করলো পাকিস্তান ইনিংস। উইকেট যে খুব পেসবান্ধব ছিল বলবো না, তবে আকাশে মেঘ ছিল।

নাহিদ ১৪৫-১৫০ কিলোমিটার বেগে অগ্নি গোলা ছুড়লো। হাসান মাহমুদ গতির সঙ্গে সুইং। ভড়কে গেলো পাকিস্তান। বাংলাদেশকে ১৮৫ রানের টার্গেট দিলো টেস্ট এবং সিরিজ ধবল ধোলাই অর্জনের। আলোক স্বল্পতার কারণে দিনের খেলা শেষ হবার আগে বাংলাদেশ ৬ ওভারে করেছে ৪২/০। জিততে হলে শেষ দিন করতে হবে ১৪৩ রান। হাতে আছে সব গুলো উইকেট। তবে দিন জুড়েই বৃষ্টি বজ্র বৃষ্টির পূর্বাভাস।  সিরিজে ১-০ এগিয়ে বাংলাদেশ। সিরিজ জয় মোটামুটি নিশ্চিত। বাংলাওয়াশ হতে হলে অন্তত ৩৫-৪০ ওভার খেলা প্রয়োজন।

কাল টেস্টের চতুর্থ দিন সকালে  ৯/২ অবস্থানে দ্বিতীয় ইনিংসের খেলা শুরু করে পাকিস্তান। উইকেটে বাউন্স সুইং স্বাভাবিক থাকলেও আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল। বদলে যাওয়া বাংলাদেশের চৌকষ বোলিং আক্রমণ চাপে রেখেছিলো পাকিস্তানকে।  আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান সাইযুম আয়ুবকে ফেরালো তাসকিন। নাহিদ রানা গতির ঝড় তুলে পাকিস্তান দলের অস্বস্তি সৃষ্টি করলো। ক্রমাগত ১৪৫-১৫০ কিলোমিটার বোলিং খেলতে কোন ব্যাটসম্যান স্বস্তি পায় না।

অন্য প্রান্তে হাসান মাহমুদ বিচক্ষণতার সঙ্গে বোলিং করলে পাকিস্তান  চেষ্টা করেও টিকে থেকে বাংলাদেশকে কঠিন টার্গেট দিতে পারেনি। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মোট কোনো দলের ইনিংসে ১০টি উইকেট তুলে নিলো তিন বাংলাদেশ পেসার হাসান মাহমুদ (৫/৪৩), নাহিদ রানা (৪/৪৪) এবং তাসকিন (১/৪০)।

১৭২ রানে গুটিয়ে গেলো পাকিস্তান।  বাংলাদেশের জন্য টেস্ট জয়ের টার্গেট ১৮৫। আলোক স্বল্পতা আর বৃষ্টি শুরুর আগে সম্ভব হলো মাত্র ৬ ওভার খেলা। দারুন শুরু করে বাংলাদেশ বিনা উইকেটে করেছে ৪২ রান। এখনো বাকি ১৪৩।  প্রশ্ন হলো শেষ দিনের খেলা আদৌ হবে কি না।  রাতে এবং দিনের শুরুতে বৃষ্টি এমনকি বজ্র বৃষ্টির পূর্বাভাস।

সে যাই হোক ১-০ এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে গেছে বলা যায়। পুরো সিরিজ জুড়ে দাপুটে ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশ পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে ধবল ধোলাই করলে হবে বিশাল অর্জন। দলটি যেন কোনো এক জিওন কাঠির ছোঁয়ায় জেগে উঠেছে। বোলিং আক্রমণকে তুখোড়, সাফল্য ক্ষুধার্থ মনে হচ্ছে।  উইকেট সহায়ক হোক বা না হোক পেস বোলিং বা স্পিন সমানভাবে কার্যকর হচ্ছে।

ব্যাটসম্যানরা সম্পন্ন বা বিপন্ন মুহূর্তে হাল ধরছে। তিন জন পেসারদের সঙ্গে ভাবুন শরিফুল, খালেদ আছে, ফিরে আসার অপেক্ষায় এবাদত।  আছে একজন রিশাদ হোসেন। তরুণ কিছু মেধাবী ব্যাটসম্যান সুযোগের অপেক্ষায়।  আলো ঝলমলে আগামী দিন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে মহিমান্বিত করবে বলে আশা করতেই পারি। এই বাংলাদেশকেই আমরা ভালোবাসি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × four =