বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম ওডিআই কাদের রক্ষা করলো?

সালেক সুফী

ইংল্যান্ডে এখন শীতের সময় বৃষ্টি নিত্যসঙ্গী। এমনিতেই ক্রিকেট জননীর দেশে বৃষ্টি কম বেশি খেলায় বিঘ্ন ঘটায়।  আর এই বৃষ্টির কারণেই আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ওডিআই সিরিজটি আয়ারল্যান্ড থেকে ইংল্যান্ডে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। আর সেই বৃষ্টিই একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্ভাব্য ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় কোন দল পর্যায় এড়ালো বোঝা গেলো না। বলা যায়, তিন ম্যাচের একটি এভাবে শেষ হওয়ায় আয়ারল্যান্ডের সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ আর রইলো না।

পুরোপুরি বিপরীত আবহাওয়া এবং পরিবেশে টসে হেরে বাংলাদেশ ভালো বোলিং মোকাবিলায় প্রথম ব্যাটিং করে মোটামুটি চ্যালেঞ্জিং ২৪৬/৯ রান সংগ্রহ করেছিল। উইকেটে যথেষ্ট সুইং ছিল, অসম বাউন্স ছিল। বাংলাদেশ বোলাররা ১৬.৩ ওভারে পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে ১৬.৩ ওভারে আয়ারল্যান্ডের ৩ উইকেট তুলে নিয়েছিল। বাংলাদেশের ইনিংসে দেখা গিয়েছিলো মাঝপথে সুইং কমে গেলে উইকেট ব্যাটিং উপযোগী হয়ে যায়। বলছি না আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশের ভারসাম্যমূলক বোলিং মোকাবিলায় ম্যাচ জিতে নিতো। কিন্তু খেলাটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতে পারতো। তাই বৃষ্টি কোন দলকে পরাজয় এড়াতে সহায়তা করলো নিশ্চিত করে বলা যাবে না।

সবুজ ঘাসে ঢাকা ইংল্যান্ডের এসেক্স কাউন্টি দলের ক্লাউড মাঠে বাংলাদেশ ব্যাটিং সূচনায় বিশাল ধাক্কা খায়। আইপিএল ফেরত জস লিটল প্রথম ওভারেই দুর্দান্ত এক ইনসুইংগিং ইয়র্কার দিয়ে লিটনকে ফেরত পাঠায় শূন্য রানে। লিটল-আদায়ের জুটি উইকেটের সহায়তা কাজে লাগিয়ে এই ধরনের উইকেটে অনভ্যস্ত তামিম, শান্তদের নাভিশ্বস তুলেছিল। কেন জানি কয়েকটি ভালো স্ট্রোকস নেওয়া তামিমের ছটফটানি ছিল। আদায়ের যে বলটিতে তামিম আউট হয় সেটি খেলার প্রয়োজন ছিল না।

মাত্র চতুর্থ ওভারে ১৫ রানে দুই ওপেনার হারানো বাংলাদেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। বলবো ভালো খেলছিল শান্ত। পপিং ক্রিজ থেকে একটু এগিয়ে সুইং নিয়ন্ত্রণ করে স্থির মাথায় খেলছিল। সাকিব শুরুতে অনিশ্চিত থাকলেও কয়েকটি ভালো স্ট্রোকস খেললো।  জুটিতে ৩৭ রান যোগ হবার পর সাকিব ২১ বলে ২০ রান করে যেভাবে উইকেট ছুড়ে দিয়েছে তার রিপ্লে দেখে নিজেও লজ্জা পেয়ে থাকবে। আমি মনে করি ৫২/৩ থেকে শান্ত, হৃদয় জুটি ভালোভাবে সামাল দিয়েছে। ওদের যোগাযোগে চতুর্থ উইকেট জুটি ৫০ রান যোগ করে ইনিংসে ধস নামেনি।

যদিও ৪৪ রানে আউট হওয়া শান্ত আরো একটু সংযমী হতে পারতো। মুশফিক নতুন অবস্থান ৬ নম্বরে স্বভাবসুলভ সপ্রতিভ ছিল। তাওহীদ হৃদয় ওর রোল মডেল মুশফিকের সঙ্গে জুটি আরো বড় করতে পারলে বাংলাদেশ ৩০০ রান হয়তো করা অসম্ভব ছিল না। আয়ারল্যান্ড বোলাররা একটু বেশি খাটো লেংথে বোলিং করে প্রাথমিক সুবিধা হারায়।

যাহোক, তরুণ হৃদয় হিউমের অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে যেয়ে উইকেট বিলিয়ে দিলে সেই সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটে। বাংলাদেশ ইনিংসের সেরা জুটি ছিল মুশফিক, মেহেদী মিরাজের। ওদের ৬৫ রানের জুটি দলকে স্বস্তির স্থানে নিয়ে যায়। বাংলাদেশ ৭ জন স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান নিয়ে হয়তো বাড়তি ঝুঁকি নিয়েছিল এই ম্যাচে।

তামিম, সাকিবের দায়িত্বহীন ব্যাটিং দলকে বিপদে ফেলতো যদি না দলের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক ৬১ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলতো। আমার মনে হয় এই ব্যাটিং লাইন আপে মুশফিক এখনো ৪ নম্বর স্পটে ব্যাটিং করা উচিত।  আমি একজন টেকনিক্যালি কুশলী ব্যাটসম্যানকে লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করানো কখনোই সমর্থন করি না।

হয়তো মাহমুদুল্লাহ দলে নেই বলেই হাতুরাসিংহে পরীক্ষা করছেন। তবুও বলবো সেরা ব্যাটসম্যানকে বেশি বল খেলার সুযোগ দেয়া উচিত। বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের লম্বা লেজ কোনোভাবে ২৪৬/৯ উইকেট পর্যন্ত যেতে পারে যা উইকেট এবং পরিবেশ অনুযায়ী অন্তত ২৫-৩০ অপর্যাপ্ত ছিল। জস লিটল (৩/৬১), মার্ক আদায়ার (২/৪৪) এবং গ্রাহাম হিউম (২/৩২) ভালো বোলিং করে সহায়ক উইকেটে পেস আক্রমণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দুর্বলতা উন্মুক্ত করে দেয়।

জবাবে স্বাগতিকরা ব্যাটসম্যানরা  এসে বাংলাদেশের ভারসাম্যপূর্ণ বোলিং সামাল দিতে বিপদে পড়ে। শরিফুল, হাসান মাহমুদ, তাইজুল একটি করে উইকেট তুলে নিলে ১৬.৩ ওভারে রান দাড়ায় ৬৫/৩। আমরা দেখেছি বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকায় বৈরী পরিবেশে টেক্টর, টাকার এবং কাম্ফার ভালো ব্যাটিং করেছে। তাই বলা সহজ নয়, বৃষ্টি এসে কোন দলকে রক্ষা করেছে। জানিনা বাকি দুটি ম্যাচ বৃষ্টি বাধায় পড়বে কি না।

বাংলাদেশকে কিন্তু অনেক ভালো ব্যাটিং করতে হবে। সব ধরনের উইকেট এবং পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে হবে বাংলাদেশকে বড় দল হয়ে উঠতে হলে। কেউ কি অস্বীকার করবেন লোয়ার মিডল অর্ডারে বাংলাদেশ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে মিস করেছে। সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশ এবং উইকেটে এই সিরিজ খেলা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে কি ভূমিকা রাখবে?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twelve + fifteen =