বেঙ্গল টাইগার্স বাংলাদেশের স্বপ্নের সওদাগর

সালেক সুফী

অনেক আলোচনা সমালোচনার তরঙ্গ পেরিয়ে বিশ্বসেরা ক্রিকেট অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এশিয়া কাপ মিশনে এখন শ্রীলংকায়। বিশ্বজোড়া বাংলাদেশি ক্রিকেট প্রেমিকদের বুকভরা তুখোড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে নিজেদের সেরাটুকু নিংড়ে দিয়ে টিম টাইগার্স বরাবরের মতো বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশিদের গর্বিত করবে।

প্রথম রাউন্ডে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকা আর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী আফগানিস্তানের বাধা পেরিয়ে পৌঁছাবে গ্রুপ ফোরে।  সেখানে পাবে বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা দুই দল ভারত, পাকিস্তানকে। নিজেদের দিনে বাংলাদেশ অন্তত ওডিআই ফরম্যাটে যে কোনো দল থেকে জয় ছিনিয়ে নেয়ার সক্ষমতা রাখে।

কাগজে কলমে যাই লেখা থাক এগারোজন বাংলার বাঘ গর্জে উঠলে কোনো কিছুই বাংলাদেশের সাধ্য আর সামর্থের অতিরিক্ত বলে মনে করি না। এখন যে দলটি খেলতে শ্রীলংকায় আসুন সবাই মিলে ওদের সমর্থন করি। ওদের জয় বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে আমাদের ভাবমূর্তি সমুজ্জল করবে।  আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত হবে আমাদের কৃষকদের ঘরের আংগিনা।

বাংলাদেশ দল: সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, মোহাম্মদ নাঈম, তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হাসান শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, মুশফিকুর রহমান, আফিফ হোসেইন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, শেখ মেহেদী, শামীম পাটোয়ারী এবং তানজিব হাসান শাকিব।

ছয় দলের দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বকাপ মর্যাদার এশিয়া কাপের বাংলাদেশ গ্রুপে আছে সম শক্তির দুই দল শ্রীলংকা এবং আফগানিস্তান। গ্রুপ অফ ফোরে খেলতে হলে বাংলাদেশকে অন্তত একটি ম্যাচ জিততেই হবে। কাজটি কিন্তু আদৌ সহজ হবে না। এমনিতেই শ্রীলংকা এবং আফগানিস্তান এই মুহূর্তে ক্রমাগত খেলায় থেকে দারুনভাবে প্রস্তুত।  উপরন্ত মাঠের বাইরের কিছু বিতর্কের কারণে বাংলাদেশ দলের উপর কিছু ধকল গাছে।

সবাই জানি কোমরের ব্যথা সুশ্রষা করে বাংলাদেশের সেরা ওপেনিং ব্যাটসম্যান এখন ম্যাচ ফিটনেস পেতে অনুশীলনরত।  বিকল্প হিসেবে দলে আছে মোহাম্মদ নাঈম এবং তরুণ তানজিদ হাসান তামিম। অপর ওপেনার মেধাবী লিটন দাস কিছুটা অসুস্থ থাকায় দলের সঙ্গী হননি। হয়তো আজ পৌঁছে যাবে।

বাংলাদেশের প্রথম খেলা বর্তমান এশিয়া কাপ শিরোপাধারী শ্রীলংকার বিরুদ্ধে সুন্দর শহর ক্যান্ডিতে ৩১ আগস্ট।  তামিমের অবর্তমানে বাংলাদেশের প্রথম চ্যালেঞ্জ। লিটন সম্প্রতি কিছুটা ফর্মহীনতায় ভুগছে। মোহাম্মদ নাঈম নিজেকে প্রমাণে ক্রমাগত সফল হয়নি। তরুণ তামিমের জন্য এবারের চ্যালেঞ্জ স্বভাবসুলভ ভয় ডরহীন ক্রিকেট।

কিছুটা শঙ্কার কারণ নাজমুল শান্ত কিছুদিন যাবৎ ফর্মে নেই। কিন্তু সদ্য পিতা হয়ে শান্ত ফর্মে ফিরবে বলে আশা করি। এশিয়া কাপের খেলাগুলো স্পোর্টিং উইকেটে হবে। প্রতিটি ম্যাচে ৩০০+ রান হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।  সেই কারণে টপ অর্ডারকে ভালো সূচনা দিতেই হবে। তাহলেই তাওহীদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমরা দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যাবে।

স্মরণে রাখতে হবে কোনো কারণে টপ অর্ডার ব্যর্থ হলে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বহু জয়ের নায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ কিন্তু দলে নেই। নিজেদের সাধ্য এবং সামর্থের সবটুকু নিবেদন করে আফিফ, শামীম পাটোয়ারীকে নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিতে হবে। শ্রীলংকা এবং আফগানিস্তানের বিশ্বমানের স্পিন আক্রমণ মোকাবিলা করা কিন্তু তরুণদের এতো সহজ হবে না।

সেই ক্ষেত্রে সাকিব, মুশফিক এবং সাম্প্রতিক সময়ে দারুন খেলতে থাকা তাওহীদ হৃদয়ের অন্তত দুই জনকে প্রতি ম্যাচে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে লম্বা ইনিংস খেলতে হবে। বাংলাদেশের আরো একটি দুর্বলতা লম্বা লেজ এবং শেষ স্লগ ওভারগুলোতে পাওয়ার হিটার না থাকা।  আগেই বলেছি প্রতি ম্যাচে অন্তত ৩০০ করতে হবে অথবা তাড়া করে ম্যাচ জিততে হবে।

বাংলাদেশের পেস আক্রমণ এখন অনেক উন্নত।  তাসকিন, শরিফুল, হাসান মাহমুদ , মুস্তাফিজের সঙ্গে যোগ হয়েছে তরুণ তানজিব হাসান শাকিব। অন্তত তিন জন পেসারের সঙ্গে সাকিব মেহেদী মিরাজের স্পিন এবং উইকেট অনুযায়ী নাসুম অথবা শেখ মেহেদী ফিল্ডিং সহায়তা পেলে ৩০০ রান ডিফেন্ড করে ম্যাচ জেতাবে ভরসা রাখি।

মনে রাখতে হবে ১৭ কোটি ক্রিকেট পূজারীর স্বপ্নের সওদাগর হিসাবে প্রথম রাউন্ড থেকে অন্তত গ্রুপ অফ ফোরে উন্নীত হতেই হবে বাংলাদেশকে। তখন দেখা যাবে ভারত, পাকিস্তানের মোকাবিলায় কি করে বাংলাদেশ। আশায় আশায় থাকতেই হবে সবাইকে।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four + thirteen =