বেরসিক বৃষ্টির হানায় নিষ্ফলা পরিসমাপ্তি ক্রিকেট মহারণের

সালেক সুফী

এশিয়া কাপ ২০২৩ পাকিস্তান ভারতের পরম কাঙ্ক্ষিত ক্রিকেট মহারণ বেরসিক বৃষ্টি হানায় নিস্ফলা শেষ হয়েছে। শ্রীলংকার শৈল শহর ক্যান্ডির পালেকেলিতে টস জয় করে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারত পাকিস্তানের উঁচু মার্গের পেস বোলিং মোকাবিলায় শুরুতেই তীব্র চাপের মুখে পড়েছিল। শাহীন আফ্রিদির গতি এবং সুইংয়ের সাথে হারিস রউফের প্রচণ্ড গতির শিকার হয়ে স্বল্প পুঁজিতেই ফিরেছিল রোহিত শর্মা (১১), বিরাট কোহলি (৪), শুভমন গিল (১০) এবং শ্রেয়াস আইয়ার (১৪)।

১৪.১ ওভারে ৬৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছে ভারত তখন দুই তরুণ ঈশান কিষান (৮২) এবং হার্দিক পান্ডিয়া (৮৭) পঞ্চম উইকেটে প্রতিআক্রমণ করে ১৩৮ রান জুড়ে দেওয়ার পর আক্রমণে ফিরে আবারো ইনিংস গুটিয়ে দিলো শাহীন আফ্রিদি (৪/৩৫), নাসিম শাহ (৩/৩৬) এবং হারিস রউফ (৩/৫৮) . ২৬৬ রানে শেষ হলো ভারতের ইনিংস।

ভারত ইনিংসে কয়েকবার বৃষ্টি বিঘ্ন ঘটালেও ইনিংস শেষে মুশল ধারার বৃষ্টি এসে খেলাটির নিষ্ফলা পরিসমাপ্তি ঘটালো। পয়েন্ট ভাগাভাগি হওয়ায় পাকিস্তান টুর্নামেন্টে প্রথম দল হিসাবে গ্রুপ অফ ফোরে উন্নীত হলো। ভারত কাল ৪ সেপ্টেম্বর নেপালের সাথে খেলে হয়তো পৌঁছে যাবে লক্ষ মঞ্জিলে।

পাকিস্তানের বিশ্বসেরা পেস আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারতের বিশ্ব সেরা ব্যাটসম্যানদের মল্লযুদ্ধ দেখার অপেক্ষায় থাকা ক্রিকেট বিশ্ব কাল দেখেছে তুখোড় লড়াই। রোহিত, কোহলি, শ্রেয়াস আয়ার বা শুভমন গিলকে যেভাবে আফ্রিদি এবং হারিস ফিরিয়েছে সেই বলগুলো নিঃসন্দেহে ক্রিকেট প্রেমীদের তৃপ্তি দিয়েছে। আফ্রিদি যে বল দুটিতে রোহিত এবংবিরাটের উইকেট ভেঙে দেয় সে দুটি ছিল চোখ চেয়ে দেখার মতো।

পাশাপাশি ক্রমাগত তীব্র গতিতে (১৪৫+/ঘণ্টা) বোলিং করে হারিস ফিরিয়ে দেয় আয়ার এবং গিলকে। ৬৬ রানে ৪ উইকেট হারানো ভারত ইনিংস যখন গুটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তখন রুখে দাঁড়ায় দুই মেধাবী তরুণ ঈশান কিষান (৮২) আর হার্দিক পান্ডিয়া (৮৭) । বলতেই হবে পাকিস্তানের স্পিনার শাদাব খান (০/৫৭) এবং মোহাম্মদ নেওয়াজ (০/৫৫) দলের আক্রমণের ধারা বজায় রাখতে পারেনি।  ফিল্ডিং ভালো হয়নি।

ভারতের পঞ্চম উইকেট জুটি ১৩৮ রান করে বিশাল স্কোর গোড়ার পর্যায়ে আক্রমণে ফিরে এসে হারিস রউফ, শাহীন আফ্রিদি এবং নাসিম শাহ আবারো ধস নামায়।  ভারত ৬২ রানে শেষ ৬ উইকেট হারালে ২৬৬ রানে শেষ হয় ইনিংস। ভারত ইনিংসে পান্ডিয়া ৯০ বলে সাতটি চার  একটি ছয় দিয়ে ৮৭ রান এবং ঈশান ৮১ বলে নয়টি চার আর দুটি ছয়ে ৮২ রান করে ১৩৮ রান জুড়ে না দিলে ভারত ইনিংস মুখ থুবড়ে পড়তো।

তবে পাকিস্তান বোলাররা ইনিংসের শুরুতে এবং শেষে যেভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে তা থেকে অনুমান করা যায় দল দুটির  টুর্নামেন্টে আগামীর খেলাগুলো তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ হবে। পাকিস্তান হয়তো একজন বাড়তি পেস বোলিং অলরাউন্ডার যুক্ত করবে।  ভারত হয়তো ব্যাটিং নিয়ে ভাববে।

বৃষ্টি আসি আসি করেও ভারত ইনিংসে খুব একটা বাগড়া দেয়নি। কিন্তু ইনিংস বিরতিতে শুরু হওয়া বৃষ্টি খেলাটির নিষ্ফলা পরিসমাপ্তি ঘটানোয় ক্রিকেট প্রেমিকরা উপভোগ্য খেলা দেখতে বঞ্চিত হয়। খেলা হলে ম্যাচটি উভয় দলের জন্যই উন্মুক্ত ছিল। দেখা যেত ফ্লাড লাইটের নিচে ভারত বোলিং পাকিস্তানের মেধাবী ব্যাটিং লাইন আপের বিরুদ্ধে ২৬৭ রানের লক্ষ প্রতিরক্ষা করতে পারে কি না।

যাহোক অমীমাংসিত ফলাফলের কারণে উভয় দল পয়েন্ট ভাগাভাগি করে পাকিস্তান পৌঁছে যায় গ্রুপ অফ ফোরে।  ভারতের অপেক্ষা নেপালের বিরুদ্ধে ৪ সেপ্টেম্বর খেলা ম্যাচটির।  এই টুর্নামেন্টে আরো দুবার না হলেও অন্তত একবার দুটি দল আবারো মুখোমুখী হবে। দেখার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে কোটি কোটি ক্রিকেট অনুরাগী।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

11 − one =