লোক নাট্যদলের দর্শকপ্রিয় নাটক বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বৈকুন্ঠের খাতা’ ৫০তম মঞ্চায়ন হতে যাচ্ছে ১৯ জুন (শুক্রবার) সন্ধে সাড়ে ৬টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’র পরীক্ষণ থিয়েটার হলে। এ উপলক্ষ্যে আরও আয়োজন করা হয়েছে ‘বৈকুন্ঠের খাতা মঞ্চায়নের পঞ্চাশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালার। অনুষ্ঠানে সন্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ইন্টরন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সান্মানিক সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। এই আয়োজনে নাটকের কলা-কুশলীদের ৫০তম মঞ্চায়নের স্মারক প্রদান করা হবে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক অনুদানে ২০১১ সালের ২ জুন ‘বৈকুন্ঠের খাতা’র প্রথম মঞ্চায়ন হয়েছিলো। সরকারের আর্থিক অনুদানে প্রযোজিত নাটকগুলোর মধ্যে বৈকুন্ঠের খাতা ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে এবং এখনো সগৌরবে নিয়মিত মঞ্চস্থ হচ্ছে। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন কামরুন নূর চৌধুরী।
চাটুকারীতা ও তোষামোদির মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি, লোলুপতা ও আকাঙ্খাকে চরিতার্থ করার যে প্রবণতা মানবসমাজে রয়েছে তারই সরল ব্যাঙ্গাত্মক কাহিনী বর্ণনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ তার ‘বৈকুন্ঠের খাতা’ নাটকে। বলাবাহুল্য, এ নাটকের বিষয়বস্তু এ যুগেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
নাটকের গল্পে দেখা যায়, বৈকুন্ঠ একজন লেখক, যিনি একমাত্র অবিবাহিত ছোট ভাই, বিধবা মেয়ে ও দীর্ঘদিনের চাকর ঈশেনকে নিয়ে বসবাস করেন। বৈকুন্ঠের লেখার বিষয়বস্তু মূলত সঙ্গীত, এবং প্রাচ্য-প্রাশ্চাত্যের সঙ্গীতশাস্ত্রের উৎপত্তি, ইতিহাস ইত্যাদি। এসব বিষয়ে দেশ-বিদেশের বই সংগ্রহ করাও তার অন্যতম শখ। তবে সংসারের নানা টানা-পোড়েনে নিতান্ত সহজ সরল ও উদার প্রকৃতির মানুষ বৈকুন্ঠে’র এসব সাহিত্যকর্মের ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদের আগ্রহ কম। তার ঐকান্তিক ইচ্ছা এসব লেখা শুনে পরিবারের সদস্যরা মতামত প্রদান করবে।
এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ধূর্ত ও সুযোগ সন্ধানী কেদারের আবির্ভাব ঘটে, যে তোষামোদ করে বৈকুন্ঠের লেখা শোনার ভান করে এবং লেখার ভূয়সী প্রশংসা করে। তার মন জয় করার চেষ্টা করে। উদ্দেশ্য, তার অবিবাহিত শ্যালীকার সাথে বৈকুন্ঠের ছোট ভাই অবিনাশের বিয়ে দিয়ে বৈকুন্ঠের বাড়ীতেই আত্মীয়-পরিজন-বেষ্টিত হয়ে বসবাস করা এবং বৈকুন্ঠকে উচ্ছেদ করা। কেদার এ ব্যাপারে সফলতা অর্জন করতে থাকে। ফলে বৈকুন্ঠের সাদা-মাটা সুখি পরিবারে আস্তে আস্তে নানা বিপর্যয় নেমে আসে, আপনজনের সম্পর্কগুলোতে ক্রমশ চিড় ধরতে থাকে।
‘বৈকুন্ঠের খাতা’ নাটকটি বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে এবং একাধিকবার ভারতের ত্রিপুরা এবং আসামে অনুষ্ঠিত উৎসবে মঞ্চস্থ হয়েছে। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদুর রহমান পিপলু, আবদুল্লাহ আল হারুন, খায়রুল আলম টিপু, আনোয়ার কায়সার, জাহিদ চৌধুরী, মনিকা বিশ্বাস, বাসুদেব হালদার, নাদিত নূর চৌধুরী, সুধাংশু নাথ, মিনহাজুল হুদা দীপ, তানজিনা রহমান, তৌহিদুল ইসলাম, সাদেক ইসলাম প্রমুখ। মঞ্চ পরিকল্পনায় জাহিদুর রহমান পিপলু, আবহ সঙ্গীত মুজাহিদুল হক লেনিন, আলোক পরিকল্পনায় জি. এম. সিরাজুল হোসেন।
সারাবাংলা