ব্যাট-বোলিং নৈপুণ্যে চালকের আসনে বাংলাদেশ

দিনের শুরুটা ভালো না হলেও পরবর্তীতে বোলার ও ব্যাটারদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ৯ উইকেট হাতে নিয়ে ৩৭০ রানের বড় ব্যবধানে এগিয়ে থেকে  চালকের  আসনে বসে গেছে  স্বাগতিক বাংলাদেশ।

আজ সকালে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩৮২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এরপর আফগানিস্তানকে প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রানে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশের বোলাররা। এতে প্রথম ইনিংস থেকে টাইগাররা ২৩৬ রানের লিড পেলে ফলো-অনে পড়ে আফগানিস্তান। কিন্তু আফগানিস্তানকে ফলো-অন না করিয়ে ম্যাচের তৃতীয় ইনিংসে দ্বিতীয়বারের মত ব্যাট হাতে নেমে দ্বিতীয় দিন শেষে ১ উইকেটে ১৩৪ রান করে বড় লিড দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশ।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম দিন শেষে ৭৯ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৬২ রান করেছিলো বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত ১৪৬, মাহমুদুল হাসান জয় ৭৬ রানে আউট হন। দিন শেষে মুশফিকুর রহিম ৪১ ও মেহেদি হাসান মিরাজ ৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।

আজ, দ্বিতীয় দিন ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশের পরের দিকের ব্যাটাররা। বাকী ৫ উইকেটে মাত্র ২০ রান যোগ করতে পারে বাংলাদেশ। ৯ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় টাইগাররা। এরমধ্যে ৩টিই নেন আফগানিস্তানের হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা নিজাত মাসুদ।

মুশফিক ৭৬ বলে ৪টি চারে ৪৭ ও মিরাজ ৮টি চারে ৮০ বলে ৪৮ রানে আউট হন। লোয়ার অর্ডারে তাসকিন আহমেদ ২, তাইজুল শূন্য, শরিফুল ইসলাম ৬ রানে আউট হন। বল হাতে আফগানদের পক্ষে সেরা বোলার ছিলেন প্রথম দিন ২ উইকেট নেয়া মাসুদ। ১৬ ওভারে ৭৯ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি।

নিজেদের প্রথম ইনিংসে খেলতে নেমে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান ও আব্দুল মালিক। ৫ ওভারে ১৭ রান তুলে ফেলেন তারা। অবশ্য দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে বিচ্ছিন্ন হতে পারতেন জাদরান ও মালিক। শরিফুলের বলে লিটনের হাতে জীবন পান জাদরান।

জীবন পেয়ে সুবিধা করতে পারেননি জাদরান। ষষ্ঠ ওভারে শরিফুলের শিকার হন তিনি। ৬ রান করেন জাদরান। এরপর আফগানিস্তানের উপর চাপ বাড়ান আরেক পেসার এবাদত। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে আফগানদের ২ উইকেট তুলে নেন এবাদত। মালিককে ১৭ ও রহমত শাহকে ৯ রানে শিকার করেন এবাদত। এতে ৩ উইকেটে ৩৫ রান নিয়ে বিরতিতে যায় আফগানিস্তান।

বিরতি থেকে ফিরে আফগানিস্তান শিবিরে দ্বিতীয়বারের মত আঘাত হানেন শরিফুল। অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদিকে ৯ রানে থামান তিনি। এতে ৫১ রানে ৪ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। এ অবস্থায় দলের হাল ধরে বাংলাদেশের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন  আফসার জাজাই ও নাসির জামাল। জুটিতে ৭৩ বলে ৬৫ রান তুলে উইকেটে সেট হয়ে যান তারা। এ অবস্থায় জুটি ভাঙ্গতে মরিয়া ছিলো বাংলাদেশ।

অবশেষে দলীয় ১১৬ রানে জামালকে লেগ বিফোর আউট করে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন মিরাজ। ৬টি চারে ৩৫ রান করেন জামাল।

মিরাজের ব্রেক-থ্রুর পর আফগানিস্তানকে চেপে ধরেন এবাদত ও তাইজুল। এতে ৩৯ ওভারে ১৪৬ রানে শেষ হয় আফগানদের প্রথম ইনিংস।  আফগানদের পক্ষে জাজাই সর্বোচ্চ ৩৬ ও জানাত ২৩ রান করেন।

এবাদত ৪৭ রানে ৪টি, শরিফুল ২৮ রানে, তাইজুল ৭ রানে এবং মিরাজ ১৫ রানে ২টি করে উইকেট নেন। ইনিংসে ২ উইকেট নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৫০ ও মিরপুরের ভেন্যুতে ৫০ শিকার পূর্ণ করেন মিরাজ।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩৮২ রানের জবাবে ১৪৬ রানে অলআউট হয়ে  ফলো-অনে পড়ে আফগানিস্তান। কিন্তু আফগানদের ফলো-অন না করিয়ে ম্যাচের ২৩৬ রানে এগিয়ে থেকে তৃতীয় ইনিংসে আবারও ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ।

জাকির হাসানকে নিয়ে ইনিংস শুরু করে প্রথম ওভারের শেষ বলে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান মাহমুদুল হাসান জয়। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে আফগানিস্তানের বাঁ-হাতি স্পিনার আমির হামজার বলে আউট হন ৪টি চারে ১৩ বলে ১৭ রান করা জয়।

দলীয় ১৮ রানে জয়ের বিদায়ের পর জাকিরকে নিয়ে ওয়ানডে স্টাইলে খেলেছেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্যক্তিগত ৯ রানে জীবন পেয়ে আহমাদজাইর করা ১৮তম ওভারে শেষ চার বলে চারটি বাউন্ডারি মারেন শান্ত।

ইনিংসের ২১তম ওভারে বাউন্ডারি মেরে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান জাকির। পরের ওভারের প্রথম বলে চারের সহায়তায় টেস্টে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি করেন শান্ত। হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে অবিচ্ছিন্ন থেকে দিন শেষ করেন জাকির ও শান্ত। দু’জনই ৬৪ বল করে খেলে সমান ৫৪ রানেই অপরাজিত আছেন। জাকির ৬টি ও শান্ত ৮টি চার মারেন।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

10 − 6 =