সালেক সুফী
সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বয়সভিত্তিক দল, নারী ক্রিকেট দল সাফল্য পেলেও ধারবাহিকভাবে সকল ফরম্যাটে সবার কাছেই হারছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল/মেয়েরা পারলে, যুবারা পারলে কেন পারছে না বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল? এই সঙ্গত প্রশ্নগুলো ওঠাই স্বাভাবিক। তাহলেকি সামর্থ্যের ঘাটতি? নাকি বাংলাদেশের ক্রিকেট পরিবেশ পরিস্থিতিতে মেধা অন্নেষণ, পরিচর্যা আর বিকাশের ব্যাবস্থাপনায় গলদ। যুবারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বুক চেঁচিয়ে লড়ছে। ইতি মধ্যেই বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে জয় করেছে একাধিক শিরোপা, অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপ জয় করেছে, মেয়েরাও জিতেছে এশিয়া কাপ। কিন্তু অবারিত সুযোগ সুবিধা পেয়েও বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাফল্য সীমিত। সব ফরম্যাটে আইসিসি রাংকিংয়ে সবার তলানিতে। বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত কিছু কনটেন্ট ক্রিয়েটার, কিছু ভিউ ব্যাবসায়ী এনিয়ে বিনিয়ে নানা মুখরোচক কথা বলেন। প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিসিবির ক্রিকেট পরিকল্পনা, অপারেশন নিয়ে নানা বিশ্লেষণ মূলক কথা হয়. কিন্তু কুম্ভ করনের ঘুম ভাঙে না। ২৪ বছর হয়ে গেলো বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের কুলিন পরিবারের সদস্য। কিন্তু এখনো টেস্ট ক্রিকেটে পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। সেই যে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলের সঙ্গে খেলার আগের দিন বাংলাদেশের তৎকালীন হেড কোচ ক্রিকেট কিংবদন্তি স্যার গর্ডন গ্রিনিজ বলেছিলেন, ” টেস্ট খেলার জন্য প্রস্তুত নয় বাংলাদেশ”। আজ ২০২৪ এসে বাংলাদেশের করুন অবস্থা দেখে কি মনে হয়না বাংলাদেশ এখন দেশে বিদেশে টেস্ট খেলার জন্য অনুপযোগী। এই তো সেদিন টেস্ট মর্যাদা পাওয়া আফগানিস্তানের সঙ্গেও টেস্ট সহ নানা ফরম্যাটে কুলিয়ে উঠতে পারছে না বাংলাদেশ। শীর্ষ স্থানীয় দলগুলোর কথা নাই বা বলি.
মানলাম ২০০৯-২০২৪ কর্তৃত্ববাদী সরকারের সময় একশ্রেণীর শোষক চর দখল করে রেখেছিলো ক্রিকেট অঙ্গন। কিন্তু জুলাই আগস্ট পরিবর্তনের পর কি খুব পাল্টেছে সব কিছু? কিছু পরিবর্তন হলেও বিসিবি চলছে জোড়াতালি দিয়ে। অনেক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে, দ্রুত তলানির পথে ক্রিকেট। পতনের কালো গহ্বর থেকে ক্রিকেটকে বাঁচাতে অচিরে সম্পূর্ণ ঢেলে সাজানো প্রয়োজন ক্রিকেট প্রশাসন। ক্রিকেটকে মীরপুর শেরে বাংলা অবগুন্ঠন থেকে মুক্ত করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন। ঘরোয়া ক্রিকেট অবকাঠামোকে প্রয়োজন উন্নয়ন মুখী করা। প্রয়োজন জেলা উপজেলা পর্যায়ে বয়স ভিত্তিক সহ নানা পর্যায়ের ক্রিকেটের নিয়মিত আয়োজন। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন ক্রিকেট অবকাঠামো, প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান। একসময়ের সারা জাগানো স্কুল ক্রিকেট প্রতিযোগিতা, আন্ত জেলা, আন্ত বিশ্ববিদ্দালয় প্রতিযোগিতা। প্রয়োজন বিভিন্ন কেন্দ্রে স্পোর্টিং উইকেট স্থাপন করে সকল ধরণের বলার পেস, স্পিন খুঁজে বের করে পরিকল্পিত উপায়ে মেধা বিকাশের সুযোগ করে দেয়া। ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান পারলে বাংলাদেশ কেন পারছে না? বয়স ভিত্তিক পর্যায় থেকে মেধাবী তরুণরা কেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের হারিয়ে ফেলছে? তিন ফরম্যাটে খেলার মত মান সম্পন্ন পর্যাপ্ত খেলোয়াড় কেন নেই বাংলাদেশের?
আমরা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আতুর ঘরে দেখেছি। কোথায় কি অসুখ ,কি দাওয়া দিতে হবে. কারা হতে পারে প্রকৃত চিকিৎসক কিছু ধারণা রাখি। এখন সুযোগ এসেছে ঘুরে দাঁড়াবার। আমি মনে করি জাতীয় দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ফিরে আসার পর অংশীজনদের নিয়ে ক্রিড়া উপদেষ্টা বিস্তারিত আলোচনা করা উচিত। দেশে প্রকৃত প্রস্তাবে অনেক বিজ্ঞ ক্রিকেট সংগঠক, ব্যাবস্থাপক আছেন। তাদের মতামত নিয়ে আইসিসির সম্মতি স্বাপেক্ষে একটি গতিশীল বিসিবি গঠন করে অচিরে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।