ভারতীয় খাদ্যপণ্যে গোবর-গোমূত্র, ক্যান্সারের উপাদান ও করণীয়

মাহবুব আলম

৫২৭টি ভারতীয় পণ্যে ক্যান্সার উপযোগী উপাদান পেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০২০ এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ এর এপ্রিলের মধ্যে ইউরোপীয় খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ ভারতের পণ্যে এই ক্যান্সার উপযোগী দূষিত উপাদান খুঁজে পেয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বাদাম, তেল বীজ (৩১৩টি), ভেষজ মসলা (৬০টি), ডায়াবেটিক খাবার (৪৮টি) সহ অন্যান্য পণ্য।

এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসামাত্রই ৮৭টি পণ্যের চালান প্রত্যাখ্যান করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাকিগুলোর মধ্যে অনেক পণ্য বাজার থেকে সরিয়ে নিয়েছে। এই সকল পণ্যের মধ্যে ইথিলিন অক্সাইড পাওয়া গিয়েছে। সেটি মুখ্য ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান। এ বিষয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে হংকং ও সিঙ্গাপুরে আমদানিকৃত ভারতীয় পণ্য থেকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান পাওয়া গিয়েছিল। এরপরই দুই দেশ ভারতীয় এইসব পণ্য নিষিদ্ধ করে।

ইথিলিন অক্সাইড মূলত বর্ণহীন গ্যাস। কীটনাশক রাসায়নিক পদার্থ এবং জীবাণুমুক্ত স্প্রে হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এবং নিউকোমিয়া ক্যান্সার প্রতিরোধে জীবাণুমুক্ত রাসায়নিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

অপর এক খবরে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনেকগুলো ভারতীয় পণ্যে গোবর ও গোমূত্রের সন্ধান পেয়েছে। এর পরিমাণ ১৮ শতাংশ। এফডিএ ইতিমধ্যে তাদের এই অনুসন্ধান তথ্য কানাডা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে অবহিত করেছে।

ভারতের খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যে গোবর ও গোমূত্রের ব্যবহার এবং ক্যান্সার উপযোগী উপাদানের বিষয়টি অত্যন্ত উদ্যেগজনক। কারণ বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য আমদানি হয়। এর মধ্যে চিপস, জুস, শিশুখাদ্য, মধুসহ অসংখ্য খাদ্যপণ্য রয়েছে। তাই এই বিষয়ে এখনই সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেইসাথে ক্রেতা সাধারণকে সচেতন হতে হবে ভারতীয় পণ্য কেনার ক্ষেত্রে।

এমনিতেই আমাদের দেশে খাদ্যপণ্য সহ বিভিন্ন পণ্যের ভেজালে আমরা বিপদের মধ্যে আছি। সরকারের দুর্বল দেখভাল ও মানুষের সচেতনতা ও প্রতিরোধের অভাবে আমরা ভেজাল পণ্য ব্যবহার করে নিজেদের বিপদ ডেকে আনছি। তারপর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে বিভিন্ন দেশ থেকে বিপদজনক পণ্য আমদানি ও তার ব্যবহার মরার উপর ঘাড়ার ঘা। তারপর খাদ্যপণ্যে গোমূত্রের ব্যবহার রীতিমতো অসভ্যতা, ইতরামি।

এখানে বলা দরকার ভারতে হিন্দুত্বের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এক শ্রেণির মানুষের গোমূত্র পানের ছবি আমরা দেখেছি। দেখেছি করোনার সময় গোমূত্র পান ও শরীরের গোবর মাখার দাওয়াই ও তার ব্যবহার। শুধু তাই নয় মুম্বাইয়ের জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকাদের অনেক প্রকাশ্যে বলেছেন, গোমূত্র স্ট্যান্ডার্ড ড্রিংক। এর মধ্যে অক্ষয় কুমার, সায়নী ঘোষ ও মহুয়া মিত্রের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শেষের দুইজন আবার তৃণমূলের টিকিটে সদ্য বিদায়ী সংসদ সদস্য। এবারও তারা লোকসভায় ভোটে প্রার্থী হয়েছে।

আধুনিক যুগে গোমূত্রকে যারা স্ট্যান্ডার্ড ড্রিংক বলতে পারে সেই দেশের ব্যবসায়ীরা খাদ্যপণ্যে গোমূত্রে ব্যবহার করবে এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া গরুর গোবর দিয়ে কেক বানানোর খবরও আমরা পত্রিকায় পড়েছি। তাই এই বিষয়ে এখনই সতর্ক হতে হবে। যেন ভারতীয় খাদ্যদ্রব্য খেয়ে ও খাইয়ে গোমূত্র না খেয়ে ফেলি। এটা একদিকে যেমন অস্বাস্থ্যকর, বিপজ্জনক অন্যদিকে অসভ্যতা ও অরুচিকরও।

ধর্মান্ধ হিন্দু ভক্তরা খায় খাক তাতে আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু আপত্তি হলো এটা ওরা অন্যদের খাওয়াতে পারে না। এটা অপরাধ পাপ। তাই পাপ থেকে ওদের বিরত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বাংলাদেশকেও ব্যবস্থা নিতে হবে। আশা করি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবে। যা অতি জরুরি ও আবশ্যক জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: সমসাময়িক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × three =