সালেক সুফী
কাল মহারাষ্ট্রের পুনেতে চলতি বিশ্বকাপের হট ফেভারিট স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। দলে ছিলোনা অন্যতম বিশ্বসেরা চৌকষ খেলোয়াড় অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সহজ ব্যাটিং উইকেটে উড়ন্ত সূচনা করেছিল লিটন দাস এবং তানজিদ তামিম। সুযোগ ছিল তার সঠিক ব্যবহার করে ভালো টার্গেট ছুড়ে দিয়ে ভারতকে চ্যালেঞ্জ করার। কিন্তু ব্যাটিং সম্পদের পরিমিত, পরিকল্পিত ব্যবহার না করায় ৭ উইকেটে বিশাল ব্যাবধানে পরাক্রমশালী ভারতের কাছে হলো বাংলাদেশ। এই দলে অবশ্যই অভিজ্ঞ এবং প্রমাণিত মুশফিক এবং মাহমুদুল্লাহকে ৬, ৭ নম্বরে ব্যাটিং না করিয়ে ৪, ৫ নম্বরে ব্যাট করানো হলে বাংলাদেশের স্কোর ২৫৬/৮ না হয়ে ৩০০ বা আরো বেশি হওয়ার সুযোগ ছিল। সেটি হলে হয়তো ভারত হেসে খেলে ৪১.৩ ওভারে ২৬১/৩ করে অনায়েসে ৭ উইকেটে ম্যাচ জয় করা সহজ হত না। যাহোক কেন হয় নি সেটি বাংলাদেশের সাধারণ অন্তপ্রাণ ক্রিকেট প্রেমিকদের মত প্রশ্ন তুলেছেন কাল ধারাভাষ্যকার এবং ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ লেজের সঙ্গে ব্যাটিং করে ৩৬ বল খেলে ৩ চার এবং ৩ ছয়ে ৪৬ রান করে প্রমান করেছে বিশ্বমঞ্চে অভিজ্ঞতার বিকল্প হয়না। যাহোক ভারত তুখোড় এবং নিয়ন্ত্রিত বোলিং, চমৎকার ফিল্ডিং এবং স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে সহজেই ৭ উইকেটে ম্যাচ জিতে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখে। বিশ্বের সর্বকলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি অপরাজিত ১০৩ রান করে আরো এ কটি দৃষ্টি নন্দন শত রান উপহার দেয়। চার ম্যাচের তিনটিতে বিশাল পরাজয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন বর্ণহীন দূসর।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত বাংলাদেশের ওডিআই মোকাবেলা উত্তম সময়। বাংলাদেশ কিন্তু শেষ চার ম্যাচের তিনটি জিতে ৩-১ এগিয়ে ছিল. কিন্তু বিশ্ব কাপ ভিন্ন প্রসঙ্গ। স্বাগতিক ভারত এবারের টুর্নামেন্টে ভালো দল নিয়ে তুখোড় ফর্মে আছে। ঠিক বিপরীত অবস্থান বাংলাদেশের। নানা বিতর্কের পর প্রশ্ন বিদ্ধ স্কোয়াড নির্বাচন, ভুলে ভরা ম্যাচ পরিকল্পনা, একাদশ নির্বাচন এবং ম্যাচ পরিকল্পনায় আনাড়িপনার কারণে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ। অনেক দিন পর ভারতের মুখোমুখি কি করে দেখার আগ্রহ ছিল অনেকের। তামিমের ফিটনেস নিয়ে এতো কথা সেই ফিটনেসের কারণেই কাল দলে ছিল না সাকিব আল হাসান। তবুও কাল টস জয় করে উড়ন্ত সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। লিটন, জুনিয়র তামিমের যোগাযোগে ১৪.৪ ওভারেই সংগ্রহীত হয়েছিল ৯৩ রান। প্রথম বারের মত কাল চমৎকার স্ট্রোকস সমৃদ্ধ ৫১ রান করেছিল তানজিদ। লিটন ছিল স্বভাব সুলভ ছন্দে। দুইজনের একজন ইনিংসটি আরো বড় করতে পারলে দলের সংগ্রহ আরো বেশি হত। কাল কিন্তু সুযোগ ছিল দলের দুই পরীক্ষিত সৈনিক মুশফিক এবং মাহমুদুল্লাকে মেহেদী মিরাজ এবং তাওহীদ হৃদয়ের আগে ব্যাটিং করার সুযোগ দিয়ে পরিস্থিতির সঠিক ব্যাবহার করা। বার্থ হয়েছে মিরাজ, হৃদয়। মুশফিক (৩৮) এবং মাহমুদুল্লাহ (৪৬) করলেও ওরা বল খেলার সুযোগ পেয়েছে অপেক্ষাকৃত কম। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং মোকাবিলায় ২৫৬/৮ উইকেটে অপ্রতুল ছিল।
জবাবে রোহিত (৪৮), সুবমান গিল (৫৩) উড়ন্ত সূচনা করে শক্ত প্ল্যাফর্ম গড়ে দিল। বিশ্ব সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি উপমা ধর্মী শত রান (১০৩*) রান উপহার দিয়ে ৭ উইকেটের বিশাল জয় এনে দিলো ভারতকে। বেশ কয়েকটি অঘটন ঘটে যাওয়া বিশ্ব কাপে ভারত এবং নিউজিল্যান্ড এখনো জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ চার ম্যাচের তিনটি হেরে এখন সম্মান রক্ষার জন্য অন্তত কয়েকটি জয়ের সন্ধান করতে হবে। কাল সূচনা ভালো হলো যেটি ছিল মাথা ব্যাথার কারণ, কিন্তু ব্যাটিং পরিকল্পনার অভাবে ভালো শুরুকেও ম্যাচ জয় সম্ভবা অবস্থানে নেয়া গেলো না। দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট পরিস্থিতি অনুযায়ী সঠিক কাজটি করতে পারছে না। বিশ্ব কাপে সময়ের কাজ সময়ে না করলে সাফল্য আশা করা অমূলক।