ভারতে বৃটিশদের ক্রিকেট বিশ্বশাসন সাঙ্গ হবার পথে

সালেক সুফী
কাল ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে বাঁচা মরার ক্রিকেট যুদ্ধে নিঃশর্ত আত্ম সমর্পণ করছে ইংলিশ লায়ন্স। প্রথমে ব্যাটিং করে শ্রীলংকার আগ্রাসী বোলিং এবং তুখোড় ফিল্ডিং মোকাবেলায় মাত্র ৩৩.২ ওভারে ১৫৬ রানে গুটিয়ে যায় পমিদের ইনিংস। হেসে খেলে ১৪৬ বল হাতে রেখে ১৬০/২ করে ৮ উইকেটে বিশাল জয় পায় শ্রীলংকা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ২০২৩ বিশ্ব কাপ স্বপ্ন ভারত মহাসাগরে নিমজ্জিত বলা যায়। বর্তমান অবস্থান থেকে বাকি চারটি ম্যাচ জিতেও ওদের সম্ভাবনা থাকছে না সেমি ফাইনালে পৌঁছানোর। অপর দিকে কালকের ম্যাচ জয় শ্রীলঙ্কাকেও যুক্ত করলো সেমি ফাইনাল দৌড়ে।
প্রাক ২০২৩ বিশ্ব কাপ আলোচনা পর্যালোচনায় সাদা বলের তুখোড় দল ইংল্যান্ড ছিল হট ফেভারিট। বৃহত্তর ভারত দীর্ঘহীন শাসন করার সময় ক্রিকেট শিখিয়েছে ব্রিটিশ রাজ্। ১৯৪৭ ভারত ছেড়ে যাবার পর অনেক গুলো স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। একে একে আফগানিস্তান , শ্রীলংকার হাতে নাজেহাল হয়ে ক্রিকেট রাজত্ব হারাতে বসেছে ওরা। এখন তো আর ক্লাইভের মত ছলে বলে কলে কৌশলে ক্রিকেট মসনদ জয়ের সুযোগ নেই। তাই লগন ছায়াছবির মত পরাজয় মেনে নিয়ে শুন্য হাতেই ফিরতে হবে বিশ্ব মোড়লদের। পাঁচ খেলার চার টিতে হেরেছে। খেলতে হবে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে। আমি একটির বেশি জয়ের সম্ভাবনা দেখি না।
বিশ্ব কাপ বলেন আর ওডিআই ক্রিকেট বলেন ইংল্যান্ড এবং শ্রীলংকার রেকর্ডস কিন্তু সমানে সমান। কাল নিয়ে ৭৯ টি ওডিআই ম্যাচে ইংল্যান্ডের জয় ৩৮, শ্রীলংকার ৩৭ , ১ টি টাই , ৩টিতে জয় পরাজয় নির্ধারিত হয় নি। কাল কিন্তু পাত্তাই পেলো না ইংল্যান্ড।
টস জয় করে ব্যাঙ্গালুরু ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্তে গলদ ছিল না ইংল্যান্ডের। কিন্তু উজ্জীবিত লংকান বোলিং, ফিল্ডিয়ের মোকাবেলায় তাসের ঘরের মতোই ভেঙ্গে পড়ে ইংলিশ ব্যাটিং দুর্গ। করেছিল আনফিট অধিনায়ক দাসুন শানাকার প্রতিস্থাপক হিসাবে খেলতে আশা বর্ষীয়ান আঞ্জেলা ম্যাথিউস। ভালো খেলতে থাকা ডেভিড মালানের উইকেট তুলে নেবার পর শ্রীলংকার পেস বোলার লাহিরু কুমারা (৩/৩৫) এবং কাশুন রাজিথা ( ২/৩৬) নিয়মিত বিরতিতে ইংলিশ উইকেটের পতন ঘটায়। বেন স্টোকস ( ৪৩), জনি বেয়ারস্ট ( ৩০) , ডেভিড ম্লান (২৮) ছাড়া কেউ দাঁড়াতেই পারেনি জয়ের নেশায় মত্ত লংকানদের সামনে। ৩৩.২ ওভারে মাত্র ১৫৬ রানে লেজ গুটায় ইংরেজ সিংহ।
এই রান তাড়া করে ৮ উইকেটে জয় তুলে নিতে আদৌ বেগ পেতে হয়নি লংকানদের। শুরুতে ২ উইকেট হারানোর পর পিথুন নিঃশঙ্কা (৭৭*) এবং সাদীরা সামারাবিক্রমা (৬৫*) অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৩৭ যোগ করে সহজ জয় এনে দেয় লংকানদের। এই পরাজয়ে নিভে যায় ইংল্যান্ডের থাকার স্বপ্ন। সবার হয়তো স্মরণে আছে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে বিশাল ব্যাবধানে হেরেছিল ইংল্যান্ড নিউ জিল্যান্ডের কাছে। এর পর একে একে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা। এবারের পরাজয়ে ৫ ম্যাচে ৪ হার নিয়ে পয়েন্ট তালিকায় ৯ নম্বরে ওদের অবস্থান। এভাবে টুর্নামেন্ট শেষ হলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে পারবে না ওরা।
কেমন এমন হলো। ভারতের মাটিতে বিভিন্ন ধরণের উইকেটে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে খেলার মত ম্যাচ জয়ী খেলোয়াড় ওদের ছিল না। ভারত উইকেটে বাসবল কৌশল বার্থ হয়েছে। নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা না হয় সমশক্তির দল। কিন্তু আফগানিস্তান, শ্রীলংকার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে দাঁড়াতে না পারার জন্য নিঃসন্দেহে দলের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক জবাবদিহি করবে।
আপাতত সাদা বল ক্রিকেটে ইংরেজ রাজত্বের অবসান হলো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × two =