ভালো নেই রিংকু, গানে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ

২০০৫ সালের ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরিচিতি পান রিংকু। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বাউল, মরমি ও সুফি ঘরানার গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন। প্রায় চার বছর হতে চলল রিংকু আর গাইছেন না আগের মতো। চারবার স্ট্রোক করে রিংকু লড়াই করছেন সুস্থ হওয়ার জন্য।

২০২০ সালে দুবার স্ট্রোক হয় রিংকুর। দ্বিতীয়বার স্ট্রোকের পর তাঁর ডান হাত ও পা প্যারালাইজড হয়ে যায়। এরপর তিনি ফিরে যান নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বড় সাওতা গ্রামের নিজ বাড়িতে। ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়েছে তাঁর হাত-পা, তবে গান গাওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা আসেনি এখনো। চার বছর ধরে চিকিৎসা ব্যয়ে ফুরিয়ে এসেছে সঞ্চিত টাকা। স্বজনদের সহায়তায় চলছে চিকিৎসার খরচ।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা হয় রিংকুর। কেমন আছেন জানতে চাইলে রিংকুর উত্তর, ‘চারবার স্ট্রোক করার পর আর কতটা ভালো থাকা যায়। কখনো ভাবিনি এমন দিন আসবে। আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থ হয়েছি। সব মিলিয়ে আছি ভালো-মন্দের মাঝামাঝি।’

ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতায় লোকগান ও বাউলগান গেয়ে আলোচনায় এসেছিলেন রিংকু। ছিলেন সেরা পাঁচে। লালনের ‘এসব দেখি কানার হাটবাজার’ গেয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন রিংকু। প্রতিযোগিতা শেষে প্রকাশ করেন ‘পাগলা ঘণ্টা’, ‘বাউল মন’ ও ‘জগৎ বন্ধু’ নামের অডিও অ্যালবাম। প্রতিটি অ্যালবামই শ্রোতাদের মন জয় করে। লালনের গান এবং সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা লোকগান সংগ্রহে কাজ করেন রিংকু। ‘সম্পর্ক’ নামে একটি গানের প্রতিষ্ঠানও গড়েছিলেন রাজধানীর মগবাজারে।

২০১৯ সালে প্রকাশ করেন ‘জিকির’ শিরোনামে একটি গান। এরপর স্ট্রোক হলে গানে অনিয়মিত হয়ে পড়েন রিংকু। ২০২১ সালের আগস্টে ঢাকায় ফিরে অংশ নেন কনসার্টে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সর্বশেষ মুক্তি পায় তাঁর গাওয়া গান ‘রঙিলা নৌকা’।

স্ট্রোক করার পর রিংকুর চিকিৎসা হয়েছে রাজধানীর কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে। সাভারের সিআরপিতেও চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। এখন পর্যন্ত পরিবারের সহায়তায় চলছে চিকিৎসা। সঙ্গে ফুরাচ্ছে রিংকুর সঞ্চয়। তাঁর কথায়, ‘অসুস্থ হওয়ার পর থেকে গান গাওয়া হচ্ছে না। কনসার্টে যেতে পারছি না। তাই আমার আর্থিক অবস্থাও ভালো না। পরিবার আমার চিকিৎসা চালাচ্ছে। সঞ্চয় বলতে যা ছিল, তা-ও শেষের দিকে।’

বাবার বাড়ি ‘মাতৃছায়া’তে কাটে রিংকুর সময়। প্রতিদিন অনেক মানুষ আসেন দূরদূরান্ত থেকে, অনুরোধ করেন গানের। রিংকু জানান, যান্ত্রিক শহর ছেড়ে গ্রামে ভালোই আছেন। নিজের প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে ঢাকা আসা হলেও তেমন কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয় না, ব্যবহার করেন না পুরোনো মোবাইল নম্বর। গানের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা নেই বলে অন্যের গানের খবরও জানেন না। রিংকু বললেন, ‘আগের থেকে শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ হয়েছি, চলাফেরা করতে পারছি। তবে গানে কবে ফিরতে পারব, জানি না। গান গাওয়ার মতো সুস্থ হইনি। যদি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারি, যদি ঠিকভাবে গাইতে পারি, তবেই আমার ফেরা হবে গানে। নয়তো আর ফিরব না গানে।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twelve − three =