মঞ্চনাটকে প্রথম পারিশ্রমিক পেলেন আসাদুজ্জামান নূর

পাঁচ দশক কাটিয়ে দেওয়ার পর মঞ্চে অভিনয়ের জন্য পারিশ্রমিক পেলেন আসাদুজ্জামান নূর। তার প্রথম আর্থিক সম্মানী এল হৃৎমঞ্চ প্রযোজিত রিমান্ড নাটকে অভিনয় করে।

গত রোব ও সোমবার টানা দুই সন্ধ্যায় ঢাকার জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে মঞ্চায়িত হয় ‘রিমান্ড’। গত জানুয়ারি মাসে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় ও মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশনের প্রণোদনায় নাটকটি মঞ্চে আসে। এরই মধ্যে নাটকটির পাঁচটি প্রদর্শনী হয়েছে।

নাটকটিতে একজন লেখকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আসাদুজ্জামান নূর। সোমবার পঞ্চম প্রদর্শনী শেষ হওয়ার পর রিমান্ড নাটকের নির্দেশক শুভাশিস সিনহা এবং হৃৎমঞ্চ নাট্যদলের প্রধান সমন্বয়ক পাভেল রহমান অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের হাতে সম্মানী তুলে দেন।

এ সময় রিমান্ড নাটকের অভিনয়শিল্পী জ্যোতি সিনহা, কামালউদ্দিন কবির, সউদ চৌধুরী, আনিসুর রহমান রিমন, শাহনাজ জাহান, বর্ষা রহমান, সৌম্য সিংহ, সজিব হোসেন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শাহজাদা সম্রাট, মাহফুজ সুমন, রাকিবসহ অনেকে।

উপস্থিত সবাই আসাদুজ্জামান নূরের সম্মানী গ্রহণের মুহূর্তটিকে করতালির মাধ্যমে উদযাপন করেন।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “আজকে হৃৎমঞ্চ আমার হাতে যে অর্থ তুলে দিলেন সেটি আমি খুব আনন্দের সাথে এবং গর্বের সাথে গ্রহণ করছি এই কারণে যে মঞ্চে এতদিন ধরে নাটক করছি, ১৯৭৩ সাল থেকে মঞ্চনাটক করছি, কিন্তু কখনোই মঞ্চনাটকে অভিনয়ের জন্য টাকা পাইনি।

“বিভিন্ন জায়গায় আমন্ত্রিত হয়ে আমরা নাটক করে যে টাকা পেয়েছি, সেটি আমাদের নাট্যদলের ফান্ডেই জমা হত। আমরা শিল্পীরা কখনও কোনো আর্থিক সম্মানী গ্রহণ করিনি বা আমাদের দেওয়ার মতো অবস্থাও ছিল না।”

এই আর্থিক সম্মানীকে ‘উপার্জন’ উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “প্রথম মঞ্চ নাটক করে অর্থ পেলাম। এটাকে আমি ‘অর্থ উপার্জন’ শব্দটাই বলতে চাই।

“সারা পৃথিবীতেই যারা শ্রম দিয়ে কিছু পায়, সেটিকে পারিশ্রমিক হিসেবেই দেখে। আমি মনে করি শ্রমের জন্য পারিশ্রমিক শব্দটাই সবচেয়ে ভালো, সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ। আজকে মঞ্চনাটকের জন্য আমি পারিশ্রমিক পেলাম। এই পারিশ্রমিক আমার জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। হৃৎমঞ্চকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”

রিমান্ড নাটকের টিকেট বিক্রির টাকা থেকে নাটক মঞ্চায়নের বিভিন্ন কারিগরী খরচ মেটানোর পর বাকি টাকা থেকে নাটকে সংশ্লিষ্টদের আর্থিক সম্মানী দেওয়ার চেষ্টা করা হয় বলে জানান হৃৎমঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক পাভেল।

তিনি বলেন, “আসাদুজ্জামান নূরের মতো খ্যাতিমান এই শিল্পীকে যে আর্থিক সম্মানী দেওয়া হয়েছে, এটা নিছকই একটি সংখ্যা মাত্র। টাকার অংকে উনার মতো এত বড় মাপের শিল্পীকে বিবেচনা করা সাধ্য আমাদের নেই। এটা সম্ভবও নয়।”

হৃৎমঞ্চকে ‘রেপার্টরী নাট্যদল’ উল্লেখ করে পাভেল রহমান বলেন, “এই দলটি একেবারেই তরুণদের একটি প্লাটফর্ম। আসাদুজ্জামান নূরের মতো এত বড় মাপের শিল্পী হৃৎমঞ্চের প্রযোজনায় একটি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন, এটি আমাদের জন্য পরম পাওয়া। উনার সঙ্গে এই কাজের মধ্য দিয়ে হৃৎমঞ্চ টিম সমৃদ্ধ হয়ে চলেছি। এজন্য বরেণ্য শিল্পী আসাদুজ্জামান নূরের কাছে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। একদিন নিশ্চয় নাট্যকর্মীরা মঞ্চে নাটক করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। আমরা সেদিনের স্বপ্ন দেখি।”

রিমান্ড নাটকের রচয়িতা শুভাশিস সিনহা, মঞ্চে নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। নাটকে লেখকের চরিত্রে অভিনয় করছেন আসাদুজ্জামান নূর, আর পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে অভিনেত্রী জ্যোতি সিনহা। আরও অভিনয় করছেন কামাল উদ্দীন কবির, সজীব হোসেন, সউদ চৌধুরী, শাহনাজ জাহান, আনিসুর রহমান রিমন, বর্ষা, সৌম্য, শাকিল, শম্পা।

রিমান্ড’র মঞ্চ পরিকল্পনা করছেন কামাল উদ্দীন কবির। আলো পরিকল্পনায় সুদীপ চক্রবর্তী। পোশাক পরিকল্পনা করেছেন আইরিন পারভীন লোপা এবং দ্রব্যসামগ্রী পরিকল্পনায় আছেন শাহনাজ জাহান।

এছাড়া প্রযোজনা ব্যবস্থাপনায় আছেন পাভেল রহমান এবং প্রকাশনা ব্যবস্থাপনায় অপু মেহেদী। পোস্টার করেছেন সজলকান্তি সিংহ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × four =