মমিনুলকে এখনই অব্যাহতি দেওয়া অপরিহার্য নয়

সালেক সুফী: দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে শোচনীয় ধবল ধোলাইয়ের পর জোরেসোরে আওয়াজ উঠেছে মিডিয়ায় মমিনুল হককে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার। আমি যতটা না ওর নেতৃত্ব নিয়ে শংকিত তারও চেয়ে বেশি ভাবছি ওর ব্যাটে রান খরা নিয়ে। এমনিতেই টেস্ট ক্রিকেটে টপ অর্ডার ব্যাটিং ধসে পড়ছে বারবার।  এই আছে এই নাই তামিম। কতজন এলো গেলো ওপেনার হিসাবে। শান্ত মোটামুটি মানিয়ে যাচ্ছে ৩ নম্বর পজিশনে। অনেক প্রতিশ্রুতি নিয়ে আশা মমিনুল দেশের মাটিতে ধীর, নিচু, টার্নিং উইকেটে সফল হলেও বিদেশের মাটিতে নড়বড়ে।

একটা বিশেষ পরিস্থিতির কারণে অধিনায়ক হবার পর ব্যাটিং করতে যেন ভুলে গাছে। আন্ডারডগ টিমকে নেতৃত্ব দিতে হলে অনেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন প্রখর মানসিকতার হতে হয়। এমনিতেই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ককে বোর্ড সভাপতি থেকে শুরু করে সবাই চাপে রাখতে চায়। সেখানে নিরীহ গোছের মমিনুল সফল হবে না সেটি অনুমেয়। আমি অন্তত আসন্ন শ্রীলংকা সিরিজে ওকে শেষবারের মতো সুযোগ দেয়ার পক্ষপাতী। মমিনুল ভালো বক্তা নয়। কি বলতে চেয়ে কি বলে ফেলে বুঝতে পারে না। কথা বার্তায় আরেকটু সচেতন হলে ভালো হবে।

এই মুহূর্তে সেরা বিকল্প হতে পারতো সাকিব আল হাসান।  ক্রিকেট থেকে ফোকাস অন্যত্র থাকায় সাকিব নিয়মিত টেস্ট ক্রিকেট খেলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। মুশফিক আর কখনো জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করবে না জানিয়ে দিয়েছে। তামিম ওডিআই দল নিয়ে সন্তুষ্ট। রিয়াদ টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছে। যাদের কথা বিবেচনা হতে পারে তারা হলো মেহেদী মিরাজ, লিটন কুমার দাস এবং নাজমুল হোসেন শান্ত। এদের মধ্যে শান্তর স্থান এখনো দলে নিশ্চিত নয়।

লিটন খুব একটা অধিনায়কত্ব করেনি। বাকি রইলো মেহেদী মিরাজ। অনুর্ধ ১৯ দল এবং স্থানীয় ক্রিকেটে নেতৃত্ব দেয়া মিরাজ এখন বেশ পরিপক্ক।  মিরাজকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বেঁচে নেয়া যেতে পারে।  লাল বলের ক্রিকেটে সব সময় ভালো বোলিং করে।  ইদানিং ওডিআই ফরম্যাটেও ভালো করছে। আমি মনে করি ওর ব্যাটিং টপ অর্ডারে অনেক মানানসই। ওকে সেই ভাবে সুযোগ দেয়া হলে বাংলাদেশ এই সময়ের মধ্যেই চৌকষ খেলোয়াড় হিসাবে সাকিবের বিকল্প পেয়ে যেত।

আসন্ন শ্রীলংকা সিরিজে আমি মমিনুলকে অধিনায়ক রেখে মিরাজকে সহঅধিনায়ক করার প্রস্তাব দিচ্ছি। অধিনায়ককে মাঠে সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। স্কোয়াড নির্বাচনের পর নির্বাচকদের ভূমিকা থাকে না। একাদশ নির্বাচন করে অধিনায়ক এবং কোচরা।  ম্যাচ চলার সময় মিডিয়ায় সবার কথা বলা ধৃষ্টতা।

দক্ষিণ আফ্রিকায় শোচনীয় ধবল ধোলাইয়ের পর শ্রীলংকার বিরুদ্ধে সিরিজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পরিস্থিতির বিবেচনায় সিরিজে খেলা দুই টেস্টে স্পিনিং উইকেট করা হলে বুমেরাং হতে পারে। শ্রীলংকা দলে তুখোড় স্পিনার আছে। ওদের ব্যাটসম্যানরাও স্পিন ভালো খেলে। এই মুহূর্তে তাসকিন, শরিফুল, খালেদ, এবাদত থাকায় বাংলাদেশ স্পোর্টিং উইকেট প্রস্তুত করে যথাযথ হবে। আশা করি সিরিজে সাকিব, সাইফুদ্দিন ফিরে আসবে। শ্রীলংকার বিরুদ্ধে সিরিজ জিতলেই সমর্থকরা দক্ষিণ আফ্রিকার দুঃসহ স্মৃতি ভুলে যাবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four × one =