রেকর্ড গড়ে জিততে হতো বাংলাদেশ দলকে। ২০৭ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়ায় নেমে পাওয়ার প্লেতেই ধসে পড়ল তাদের টপ অর্ডার। বিপর্যয় সামলিয়ে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও অভিষিক্ত জাকের আলী অনিক করেছেন ঝোড়ো ফিফটি। মাহমুদউল্লাহ ফিফটির পর পর ফিরলেও অনিক ম্যাচ নিয়ে গেছেন শেষ ওভার পর্যন্ত। কিন্তু শেষ ওভারে দলের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১২ রান, ওই ওভারে আউট হয়েছেন অনিকও। ফলে রোমাঞ্চকর ম্যাচে ৩ রানের হারের বেদনা নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ দল।
২০৭ রানের বড় লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ৮ উইকেটে ২০৩ রানে থামে বাংলাদেশ দলের ইনিংস। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের শুরুটাও ছিল নাজুক। প্রথম ওভারেই রানের খাতা খোলার আগে আউট হয়েছেন লিটন দাস। আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। দৃষ্টিকটু আউটে ফিরেছেন ১২ রানে। ছক্কা মেরে রানের খাতা খুলে, হৃদয় ফেরেন ৮ রানে।
চতুর্থ উইকেটে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বিপর্যয় সামলে জুটি বড় করার চেষ্টা করেন। তবে ছন্দ হারানো শান্ত এই ম্যাচেও ছিলেন নড়বড়ে। মাতিশা পাতিরানার বলে আউট হয়েছেন ২২ বলে ২০ রানের মন্থর ইনিংস খেলে।
৬৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ দল। তখন পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ-জাকেরের ২৯ বলে ৪৭ রানের জুটি সেই চাপ সামলে দলের জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন। কিন্তু ২৭ বলে ফিফটি করা মাহমুদউল্লাহ ৫৪ রানে ফিরলে আবারও হারের শঙ্কা জেগে ওঠে। ৪টি ছক্কা ও ২টি চার মারেন মাহমুদউল্লাহ।
ষষ্ঠ উইকেটে অনিক আর শেখ মেহেদী হাসানের ২৭ বলে ৬৫ রানের জুটিতে বাংলাদেশের জয়ের আশা বেঁচে থাকে। ১৬ রানে মেহেদী আউট হয়ে ভাঙে জুটি। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার পড়ে ১২ রান। কিন্তু দাসুন শানাকার ওই ওভারে রিশাদ হোসেন ও অনিকের আউটে বাংলাদেশ মাত্র ৮ রান তুলতে সক্ষম হয়।
৮ উইকেটে ২০৩ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। ৩৪ বলে ২০০ স্ট্রাইকরেটে ৬৮ রান এল অনিকের ব্যাট থেকে। ৬টি ছক্কা ও ৪টি চারের বাউন্ডারি ছিল তাঁর ইনিংসে। ম্যাচের ফল যেটাই হোক, এ ম্যাচে বাংলাদেশ পরিচয় করিয়ে দিল অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে সম্ভাবনাময় এক ফিনিশারকে। শ্রীলঙ্কার হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়ে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও বিনুরা ফার্নান্দো।
প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশকে পেলে কুশল মেন্ডিসের জ্বলে ওঠা যেন অবধারিত। এর আগে পাঁচ ম্যাচ খেলে চারটিতেই করেছেন ফিফটি। আজ দলের বিপর্যয় সামলে অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ষষ্ঠ ম্যাচেও তুলে নিয়েছেন দুর্দান্ত এক ফিফটি। তাঁকে সঙ্গ দিয়ে সাদিরা সামারাবিক্রমাও হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। শেষ দিকে চরিত আসালাঙ্কা চালিয়েছেন তাণ্ডব। যার কল্যাণে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ২০৭ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য ছুড়ে দেয় শ্রীলঙ্কা।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে সর্বোচ্চ স্কোরের তালিকায় লঙ্কানদের আজকের ২০৬ রানের ইনিংসটি জায়গা করেছে দুই নম্বরে। ২০১৮ সালে করা ২১০ রানের সর্বোচ্চ ইনিংসটিও ছিল লঙ্কানদের।
জিততে হলে সিলেটের মাঠে রেকর্ডই গড়তে হত বাংলাদেশ দলকে। গত বছর এই মাঠে আফগানিস্তানের দেওয়া ১৫৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল তারা। সেটি ছিল সেখানে সর্বোচ্চ রান তাড়া।
তার আগে নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচে টস জেতেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু টস জিতে লঙ্কানদের আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান তিনি। সবুজ উইকেটে আগে বোলিংটা ভালো হবে চিন্তা করেই এমন সিদ্ধান্ত হয়তো। প্রথম ওভারে দ্বিতীয় বলে আভিস্কা ফার্নান্দোকে ফিরিয়ে শরীফুল ইসলাম যেন ইঙ্গিত দিয়েছেন অধিনায়কের সিদ্ধান্ত যথার্থই!
ইনিংসের প্রথম বলেই দারুণ একটি চারের বাউন্ডারি মারেন আভিস্কা। পরের বলেই উইকেটরক্ষক লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। পঞ্চম ওভারে কামিন্দু মেন্ডিসকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। দারুণ ফর্মে থাকা এই বাঁহাতি ব্যাটার থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। দুটি ছক্কা ও একটি চারে ১৪ বলে ১৯ রানে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দেন সৌম্য সরকারকে। ৩৭ রানে ২ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
দ্বিতীয় উইকেটে মূলত গতিপথ বদলে দেন ওপেনার কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। তৃতীয় উইকেটে ৪৭ বলে ৯৬ রানের দারুণ এক জুটি গড়েছেন দুজনে। ১৫তম ওভারে রিশাদ হোসেন কুশলকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন। ততক্ষণে শ্রীলঙ্কার স্কোর ৩ উইকেটে ১৩৩ রান। ৩টি ছক্কা ও ৬টি চারে ৩৬ বলে ৫৯ রান আসে তাঁর ব্যাট থেকে।
চতুর্থ উইকেটে একসঙ্গে ঝড় তোলেন চরতি আসালাঙ্কা ও সামারাবিক্রমা। ৩৩ বলে ৭৩ রান যোগ করেছেন জুটিতে। সামারাবিক্রমা ৮টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৮ বলে ৬১ রানে অপরাজিত থাকেন। ২১ বলে ২০৯.৫২ স্ট্রাইকরেটে ৪৪ রান করেছেন আসালাঙ্কা। ইনিংসে ছিল ৬টি ছক্কা। আর শ্রীলঙ্কা পায় ৩ উইকেটে ২০৬ রান। বাংলাদেশের হয়ে ৩২ রান দিয়ে ১টি উইকেট নিয়েছেন রিশাদ।