মা দিবসের শুরুর কথা

প্রিয়াংকা আচার্য্য

আমাদের দেশে গত প্রায় দুই দশক ধরে বিভিন্ন রকম দিবস পালনের রীতি চোখে পড়ার মতো। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পালন করা হয় বিশ্ব মা দিবস। সে অনুযায়ী এবারের মা দিবসটি ১২ই মে।

মা দিবস এলেই মা’কে ঘিরে নানারকম পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়। শুধু ভার্চুয়ালই নয় বাস্তবজীবনেও অনেকে মায়েদের সম্মানে নানা আয়োজন উদ্্যাপন করে থাকেন।

বিশেষ এই দিবস পৃথিবীর সকলকে মাতৃত্ব ও মাতৃসত্তার গুরুত্ব যেন মনে করিয়ে দেয় বার বার। মায়েরাই যে আমাদের জীবন শুরুর একমাত্র পাদপ্রদীপ সেটি উচ্চারিত হয় কাগজে কলমে সেই সাথে মরমে।

মা দিবসের আনুষ্ঠানিক শুরুটা হয়েছিল আজ থেকে ১১০ বছর আগে। যুক্তরাষ্ট্রে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মায়েদের জন্য উৎসর্গ করে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে।

আসলে ‘মা দিবস’ পালনের বিষয়টির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের বিষয়টি ওতোপ্রতভাবে জড়িত। এই গৃহযুদ্ধের মেয়াদ ১৮৬০-৬৫ সাল। বলা হয়, মার্কিনমুল্লুকে এতো রক্ত এ পর্যন্ত আর কখনও ঝরেনি। ৬ লাখ ২০ হাজার সৈন্য এ যুদ্ধে নিহত হয়। পঙ্গু হয় লাখ লাখ মানুষ। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষতি তো আছেই।

যেকোনো যুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী ও শিশুরা। তাই ১৮৭০ সালে যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশে শান্তির আহ্বানে মায়েদের একত্রিত করতে একটি ঘোষণাপত্র লেখেন জুলিয়া ওয়ার্ড হোয়ে। যা ‘মাদার্স ডে প্রোক্লামেশন’ নামে পরিচিত। রাজনৈতিক স্তরে সমাজ গঠন করার ক্ষেত্রে নারীদের বিশেষত মায়েদের একটি দায়িত্ব আছে, হোয়ের এই নারীবাদী বিশ্বাস ঘোষণাপত্রটির মধ্যে অন্তর্নিহিত ছিল।

তবে এরও আগে ১৯৬০ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় অ্যান রিভিস জার্ভিস শিশুদের সুষ্ঠুভাবে লালন পালনের বিষয়ে মায়েদের সচেতন ও কারিগরী জ্ঞান প্রদান করতে ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যুদ্ধ পরবর্তীতে এই ক্লাবগুলো ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিতে কাজ করেছে।

১৯৬৮ সালে অ্যান ‘মাদার্স ফ্রেন্ডশিপ ডে’ পালন করেন যেখানে প্রাক্তন ইউনিয়ন ও কনফেডারেট সৈন্যদের পুর্নমিলনে মায়েরা একত্রিত হয়েছিল। ১৯০৫ সালের ৫ মে অ্যান রিভিজ জার্ভিস মারা গেলে তার অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিতে সচেষ্ট হন কন্যা অ্যানা মেরি জার্ভিস। সন্তানের জীবন গড়তে মায়েদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানাতে আনুষ্ঠানিকভাবে মা দিবস পালনের জন্য তিনি প্রচার চালাতে থাকেন।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯০৭ সালের ১২ মে অ্যানা পশ্চিম ভার্জিনিয়ার আন্দ্রেউজ মেথোডিস্ট এপিসকোপাল চার্চে, যেখানে তার মা রোববার স্কুলে পড়াতেন সেখানে একটি ছোট আয়োজন করেন।

পরের বছর ফিলাডেলফিয়ার একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক জন ওয়ানামেকার অ্যানাকে অর্থের যোগান দেন। যার ফলে একই চার্চে ১৯০৮ সালের ১০ মে বিশ্বে প্রথমবার আনুষ্ঠানিকভাবে মা দিবস পালন করেন অ্যানা। সেদিন ফিলাডেলফিয়ার জনের একটি রিটেইল স্টোরেও হাজারো মানুষ মা দিবস পালনে জড়ো হয়েছিল।

এরপর ১৯১২ সালে এই দিবসটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ব্যাপক প্রচার শুরু হয়। এই প্রচার ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ কানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকায়।

এই প্রচারের প্রেক্ষিতে ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণা করেন। তারপর থেকেই প্রতিটি দেশে মায়েদের সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এই দিনটি উৎসর্গ করা হয়। আর সেই থেকে পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব মা দিবস।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: দিবস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 × 2 =