মিষ্টির রাজা রসমালাই

মাসুম আওয়াল

১.

দেখো দেখো এতো ছোট হয় নাকি মিষ্টি,

আড়াইশো গ্রামে ধরে টেনে টুনে বিশটি।

রসের সাগরে সব হাবুডুবু খাচ্ছে,

এই মিষ্টিই খেয়ে লোকে মজা পাচ্ছে।

চুপ করে বসে পড়ো কথা হবে শোনো তার

উৎসব পার্বনে জুড়ি নেই কোনো তার

স্বাদে গুণে অনন্য হবে হই চই কী

বিদেশেও নাম ডাক আছে বেশ বৈকি।

এই ছড়া জুড়ে তার বন্দনা করব,

তাকে নিয়ে কুমিল্লাবাসী করে গর্ব।

কোন মিষ্টির কথা বলা হবে বুঝছো,

বন্ধু কেমন আছো কোনো কিছু খুঁজছো।

হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বুঝে গেছো ছন্দের বহরে,

রসমালাইয়ের বাড়ি কুমিল্লা শহরে।

শুনে নিতে পারো প্রিয় কথা হবে অল্প

শুরু করা যাক রসমালাইয়ের গল্প।

উঁকি মেরে হেসে ওঠে মিষ্টির রাজা যে

নাম শুনতেই মন হয় তর তাজা যে।

২.

রসমালাইয়ের মাঝে কী যে স্বাদ লুকিয়ে

নাম শুনলেই জিহ্বা থাকবে না শুকিয়ে।

মন ভালো হয়ে যাবে মন হেসে উঠবে

কুমিল্লা চলে এসো মনে ফুল ফুটবে।

করো তুমি সারা দিন মনে মনে যার খোঁজ,

মনোহরপুরে এলে মিলে যাবে তার খোঁজ।

ভোজন বিলাসি তোলো মনের ঝাণ্ডারে,

চলে এসো কুমিল্লা মাতৃভাণ্ডারে।

কে কীভাবে কবে এই মিষ্টিটা বানালো,

সেই ইতিহাস এক গুণী লোক জানালো।

অনেক আগের কথা হচ্ছেই টানতে,

রাজকীয় মিষ্টির ইতিহাস জানতে।

গল্পটা শুনে শুনে মাথা নাড়ে কতো কে,

ঘটনাটা ঘটেছিলো ঊনিশশো শতকে।

মনোহরপুরে ছিলো অনেক ঘোষের ভিড়,

তৈরি করতো তারা আস্ত দুধের ক্ষীর।

মিষ্টি দুধের ক্ষীরে ভাসে রসোগোল্লা,

এই মিষ্টিই খাবে তুমিই তো বললা।

চলছে ঘড়ির কাঁটা দিন গেছে গড়িয়ে,

এর নাম ডাক গেছে দিকে দিকে ছড়িয়ে।

ছুটছে ছড়ার গাড়ি একটু করছি যোগ,

এই মিষ্টির নাম হয় রাখা ক্ষীরভোগ।

সেটাই রসমালাই নাম পাল্টিয়ে হয়,

ইতিহাস বলে কথা মোটেও গল্প নয়।

ফনিন্দ্র-মণিন্দ্র নড়লেন চড়লেন,

দারুণ এক মিষ্টির কারখানা গড়লেন।

শুরু হলো দু’ভাইয়ের অনন্য যাত্রা,

রসমালাইয়ের পেশা পেয়ে গেলো মাত্রা।

আসল রসমালাই যদি চান কিনতে!

মাতৃভাণ্ডারই হবে ঠিক চিনতে।

ফণি-মণি ভালোবেসে যেটা গড়ে গিয়েছেন

আশা রাখি অবশেষে সেটা চিনে নিয়েছেন।

ফণিদার ছেলে শঙ্কর সেনগুপ্ত,

টিকিয়ে রেখেছে সব নয় সেও চুপ তো।

উত্তম-ক্ষিতিষেরা তার বাঁধা কারিগর,

ভূতের মতন খাটে নেই নেই কোনো অবসর।

মণ মণ ছানা দুধ হয় রোজ মিষ্টি,

মাতৃভাণ্ডারের অনন্য সৃষ্টি।

৩.

রেসিপিটা শুনলেই ভালো হবে মনটা,

দুধ নিয়ে জ্বাল করো টানা দুই ঘণ্টা।

অপেক্ষা করো ভাই তাপ যেনো ধীর হয়,

জ্বাল করে করে যেনো দুধগুলো ক্ষীর হয়।

কিছু দুধ থেকে ছানা করে নিও তৈরি,

সময়টা মিঠা হবে থাকবে না বৈরি।

এরপর করো ছানা ময়দার মিশ্রণ,

ছোট ছোট গুলি করো ভালো হয়ে যাবে মন।

ময়দা ছটাক খানি এক কেজি ছানাতে-

মিশিয়ে তবেই হবে খামিরটা বানাতে।

এরপর সেটা থেকে ছোট গুলি বানাবে,

নিজে শিখে নাও পরে অপরকে জানাবে।

ছোট ছোট গুলিগুলো দুধ ক্ষীরে ছাড়বে,

কিছুক্ষণ জ্বাল করো জানি তুমি পারবে।

হয়েছে রসমালাই- ক্ষীরভোগ মিষ্টি,

আড়াইশো গ্রামে ধরে টেনে টুনে বিশটি।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: নিবন্ধ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eight + 1 =