মুস্তাফিজ-রিশাদের বোলিং নৈপুণ্যে শ্রীলংকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের

পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও স্পিনার রিশাদ হোসেনের বোলিং নৈপুন্যে জয় দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করলো বাংলাদেশ। আজ ‘ডি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ২ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলংকাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর পর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষেও জিততে  পরাজিত  লংকানরা।

প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৪ রান করে শ্রীলংকা। বাংলাদেশের মুস্তাাফিজ ও রিশাদ ৩টি করে উইকেট নেন। জবাবে ১৯ ওভারে ৮ উইকেটে ১২৫ রান করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে তাওহিদ হৃদয় ২০ বলে ৪০, লিটন দাস ৩৮ বলে ৩৬ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত ১৬ রান করেন।

ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে শ্রীলংকাকে প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রন জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তৃতীয় ওভারেরই পেসার তাসকিন আহমেদের হাত ধরে ম্যাচে প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ। লংকান ওপেনার কুশল মেন্ডিসকে (১০) বোল্ড করেন তাসকিন।

সতীর্থকে হারালেও রানের গতি বাড়ান আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। এতে ৫ ওভারেই ৪৮ রান উঠে শ্রীলংকার। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসে উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজুর রহমান। মিড অফে তানজিম হাসান সাকিবকে ক্যাচ দেন ৪ রান করা কামিন্দু মেন্ডিস।

মারমুখী ব্যাটিংয়ে হাফ-সেঞ্চুরির পথে ছিলেন নিশাঙ্কা। নবম ওভারে দলীয় ৭০ রানে নিশাঙ্কাকে সাজঘরের পথ দেখান মুস্তাফিজ। ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৮ বলে ৪৭ রান করে কভারে বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্তকে ক্যাচ দেন নিশাঙ্কা।

চতুর্থ উইকেটে ৩২ বলে ৩০ রানের জুটিতে শ্রীলংকার রান শতরানে পৌঁছে দেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও চারিথ আসালঙ্কা। ১৪ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ১০০ রান নিয়ে ভালো অবস্থায় ছিলো লংকানরা। এরপর শ্রীলংকা ইনিংসে  ধস নামান স্পিনার রিশাদ হোসেন।

ইনিংসের ১৫ ও নিজের তৃতীয় ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন রিশাদ। প্রথমে বলে স্লগ সুইপে ডিপ স্কয়ার লেগে সাকিব আল হাসানকে ক্যাচ দেন ১টি ছক্কায় ১৯ রান করা আসালঙ্কা। পরের বলে আউটসাইড-এজড হয়ে স্লিপের সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাক মারেন শ্রীলংকার অধিনায়ক হাসারাাঙ্গা ডি সিলভা। প্রথম দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে হ্যাট্টিকের সম্ভাবনা জাগান রিশাদ। কিন্তু রিশাদকে হ্যাট্টিক বঞ্চিত করেন সাবেক অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ।

এক ওভার পর নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন রিশাদ। ২৬ বলে ২১ রান করা ধনাঞ্জয়াকে স্টাম্প আউট করেন রিশাদ। ১০৯ রানে ৬ উইকেট পতনে চাপে পড়ে শ্রীলংকা। এরপর ইনিংসের শেষ দিকে  বাংলাদেশের তিন পেসার ৩ উইকেট শিকার করলে, ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৪ রানের মামুলি সংগ্রহ পায় শ্রীলংকা। দাসুন শানাকাকে ৩ রানে তাসকিন, মহীশ  থিকশানাকে শূণ্যতে মুস্তাফিজ ও ম্যাথুজকে ১৬ রানে শিকার করেন তানজিম।

৪ ওভার বল করে বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ১৭ রানে ও রিশাদ ২২ রানে ৩টি করে উইকেট নেন। ১৮ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি এটিই ক্যারিয়ার সেরা বোলিং রিশাদের। এছাড়া তাসকিন ২টি ও তানজিম ১টি উইকেট নেন।

জয়ের জন্য ১২৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলেই ওপেনার সৌম্যকে হারায় বাংলাদেশ। রানের খাতা খোলার আগেই স্পিনার ধনাঞ্জয়ার শিকার হন সৌম্য। পরের ওভারে তানজিদকে ৩ রানে বোল্ড করেন থুশারা। দলীয় ৬ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। দলকে চাপমুক্ত করতে তৃতীয় উইকেটে ২২ বলে ২২ রানের জুটি গড়েন লিটন ও শান্ত। ষষ্ঠ ওভারে শান্তকে ৭ রানে ফিরিয়ে জুটি ভাঙ্গেন থুশারা।

২৮ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর ক্রিজে এসেই শ্রীলংকার বোলারদের উপর চড়াও হন তাওহিদ হৃদয়। লিটনকে সাথে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৩৮ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের জয়ের ভিত গড়েন হৃদয়। হাসারাঙ্গার করা ১২তম ওভারের প্রথম তিন বলে তিনটি ছক্কা মারেন হৃদয়। কিন্তু চতুর্থ বলে লেগ বিফোর আউট হন ৪টি ছক্কা ও ১টি চারে ২০ বলে ৪০ রান করা হৃদয়।

দলীয় ৯১ রানে হৃদয় ফেরার কিছুক্ষণ পর হাসারাঙ্গার বলে লেগ বিফোর আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৮ বলে ৩৬ রান করা লিটন। দলের রান ১শ পার করে ব্যক্তিগত ৮ রানে পাথিরানার বলে আউট হন সাকিব। ১৮তম ওভারে রিশাদ ১ ও তাসকিন শূণ্যতে ফিরলে দলীয় ১১৩ রানে অষ্টম উইকেট হারিয়ে চিন্তায় পড়ে বাংলাদেশ।

শেষ ২ ওভারে ১১ রান দরকার পড়লেও, শ্রীলংকার পেসার দাসুন শানাকার করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মারেন মাহমুদুল্লাহ। ওভারের বাকী পাঁচ বল থেকে ৫ রান নিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন মাহমুদুল্লাহ। ১টি ছক্কায় ১৩ বলে অপরাজিত ১৬ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। ১ রানে অপরাজিত থাকেন তানজিম। শ্রীলংকার থুশারা ১৮ রানে ৪ উইকেট নেন।

আগামী ১০ জুন গ্রুপ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

10 − five =