মেট্রোকে ৬২ রানে গুঁড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন রংপুর

রৌদ্রজ্জ্বল দুপুরে দুই অধিনায়কই আশায় ছিলেন অন্তত দেড়শ রান হবে ম্যাচে। কিন্তু রংপুর বোলারদের ছিল পুরোপুরি ভিন্ন ভাবনা। মুকিদুল ইসলাম, আলাউদ্দিন বাবুদের আগুনঝরা বোলিংয়ে এর অর্ধেক রানও করতে পারল না ঢাকা মেট্রো। ম্যাচ কার্যত তখনই শেষ।

তবে ছোট লক্ষ্যে শুরুতে হোঁচট খায় রংপুর। কিছুটা আশাও হয়তো দেখতে পায় মেট্রো। কিন্তু তাদের হতাশায় ডুবিয়ে দারুণ জয়ে এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ট্রফি নিজেদের করে নেয় রংপুর। রিপো‍র্ট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবারের ফাইনালে মাত্র ৬২ রানে গুটিয়ে যায় মেট্রো। রান তাড়ায় ৫ উইকেট হারালেও ৫২ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় আকবর আলির নেতৃত্বাধীন দল।

ব্যাটিং ব্যর্থতায় জাতীয় ক্রিকেট লিগের চার দিনের সংস্করণের মতো টি-টোয়েন্টিতেও রানার্স-আপ হল মেট্রো।

স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে এর চেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার ঘটনা আছে আর মাত্র দুটি। গত মার্চে জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় ডারহামের ২২৯ রানের জবাবে মাত্র ১৬ রানে গুটিয়ে যায় মাশোনাল্যান্ড ঈগলস। আর জুনে শ্রীলঙ্কার মেজর ক্লাব টি-টোয়েন্টিতে নন্দেস্ক্রিপ্টসের বিপক্ষে ব্লুমফিল্ড ৫৪ রানে হারায় সবকটি উইকেট।

বাংলাদেশের মাঠে কোনো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে একশর কম রানে অলআউট হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। ২০১৬ সালের বিপিএলে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ১০৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল রাজশাহী কিংস।

মেট্রোর বিব্রতকর সমাপ্তির কারিগর মুকিদুল ও আলাউদ্দিন। সবুজের ছোঁয়া থাকা উইকেটে দারুণ সিম বোলিং করে ৩টি করে উইকেট নেন রংপুরের দুই পেসার। ১২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ফাইনালের সেরা মুকিদুল।

আলাউদ্দিনও ১২ রান খরচায় নেন ৩ উইকেট। সব মিলিয়ে ৯ ইনিংসে ১৯ শিকার ধরে তিনিই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।

ফাইনালে বেশি কিছু করতে না পারলেও আসরজুড়ে ব্যাটে-বলে আলো ছড়ান আবু হায়দার। ৯ ম্যাচে ১৩ উইকেট ও ব্যাট হাতে ১৬৪ স্ট্রাইক রেটে ১২৩ রান করে টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জেতেন মেট্রো অলরাউন্ডার।

টস জিতে মেট্রোকে ব্যাটিংয়ে পাঠান রংপুর অধিনায়ক। মুকিদুলের প্রথম বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান ইমরানউজ্জামান। তবে এক বল পর একই জায়গায় ক্যাচ দেন উইকেটরখক-ব্যাটসম্যান।

পরের ওভারে নাঈম শেখকে কট বিহাইন্ড করেন আলাউদ্দিন। রানের খাতা খুলতে পারেননি মেট্রো অধিনায়ক। তবে ৯ ম্যাচে তিন ফিফটিসহ ৩১৬ রান করে বাঁহাতি ওপেনারই আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।

তৃতীয় ওভারে জোড়া আঘাত করেন মুকিদুল। দারুণ ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে বোল্ড হন আনিসুল ইসলাম। পরের বলে আউটসুইং ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ দেন আমিনুল ইসলাম। মাত্র ৮ রানে প্রথম ৪ ব্যাটসম্যানের উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় মেট্রো।

পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগে গাজী তাহজিবুল ইসলামও ধরেন ড্রেসিং রুমের পথ। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে চমৎকার ভেতরে ঢোকানো ডেলিভারিতে বোল্ড করেন আলাউদ্দিন।

প্রথম ছয় ওভারে অর্ধেক উইকেট হারানো দলকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন মোসাদ্দেক হোসেন ও শামসুর রহমান। দুজনের জুটিতে আসে ইনিংসের সর্বোচ্চ ১৭ রান। কিন্তু চল্লিশের আগেই ড্রেসিং রুমে ফেরেন তারা।

দলের সর্বোচ্চ ১৪ রান করেন শামসুর। পরে আবু হায়দারের ২ চারে ৯ বলে ১৩ রানে মেট্রো কোনোমতে পঞ্চাশ পেরোয়।

ছোট লক্ষ্যে রংপুরের শুরুটাও হয় নড়বড়ে। পাঁচ ওভারের ভেতরে ড্রেসিং রুমে ফেরেন চার ব্যাটসম্যান। চতুর্থ ওভারে আব্দুল্লাহ আল মামুন ও নাঈম ইসলামকে ফেরান আলিস আল ইসলাম।

পরের ওভারে আবু হায়দারের বলে এলবিডব্লিউ চৌধুরি মোহাম্মদ রিজওয়ান। তাহজিবুলের দারুণ থ্রোয়ে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায়ঘণ্টা বাজে আকবরের।

তবে এরপর তেমন বিপদ হয়নি রংপুরের। চার নম্বরে নেমে একপ্রান্ত ধরে রাখেন তানবীর হায়দার। ১টি করে চার-ছক্কায় ১৪ রান করে ফেরেন আরিফুল হক। পরে এনামুল হককে নিয়ে ম্যাচ শেষ করেন তানবীর।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ঢাকা মেট্রো: ১৬.৩ ওভারে ৬২ (ইমরানউজ্জামান ৪, নাঈম ০, আনিসুল ৩, শামসুর ১৪, আমিনুল ০, তাহজিবুল ২, মোসাদ্দেক ৬, আবু হায়দার ১৩, শহিদুল ৬, রকিবুল ৩, আলিস ০*; মুকিদুল ৪-০-১২-৩, আলাউদ্দিন ৩.৩-০-১২-৩, রবিউল ৩-১-৯-১, রিজওয়ান ৩-০-১২-১, আরিফ ৩-১-১৪-১)

রংপুর: ১১.২ ওভারে ৬৫/৫ (রিজওয়ান ৯, মামুন ২, নাঈম ০, তানবীর ৮*, আকবর ০, আরিফুল ১৪, এনামুল ১৪*; আবু হায়দার ৪-১-৮-১, আলিস ৪-০-১৩-২, শহিদুল ২-০-১১-০, রকিবুল ১.২-০-২৪-১)

ফল: রংপুর ৫ উইকেটে জিতে চ্যাম্পিয়ন

ম্যান অব দা ম্যাচ: মুকিদুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

six − 5 =