মেসির মাইলফলক ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা

লিওনেল মেসির মাইলফলকের ম্যাচ জিতে কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো দু’বারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। নিজের মাইলফলকের  ম্যাচে এক গোল করেছেন মেসি। শনিবার রাতে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর ম্যাচে আর্জেন্টিনা ২-১ গোলে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। এক আসর পর আবারও কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো মেসির আর্জেন্টিনা। ২০১৪ সালের ফাইনালে উঠলেও, ২০১৮ সালে শেষ ষোলো থেকে বিশ্বকাপ শেষ করেছিলো আর্জেন্টিনা।

আর্জেন্টিনার পক্ষে গোল দু’টি করেন মেসি ও আলভারেজ। ক্যারিয়ারে  ক্লাব ও দেশের হয়ে ১ হাজারতম ম্যাচ খেলতে নেমে গোল করে কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে যান মেসি। বিশ্বকাপের মঞ্চে ম্যারাডোনার ৮ গোলকে টপকে মেসির গোল সংখ্যা এখন ৯টি।

আল-রায়ানের আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে ইনজুরিতে থাকা  ডি মারিয়াকে ছাড়াই খেলতে নামতে হয়  আর্জেন্টিনাকে  পোল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে উরুর ইনজুরিতে পড়েন ডি মারিয়া। তার পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পান সৌদি আরবের বিপক্ষে খেলা আলেহান্দ্রো গোমেজ।

প্রথম ১০ মিনিটে কোন আক্রমন করতে পারেনি কোন দলই। ১৩ মিনিটে বাঁ-প্রান্ত দিয়ে আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডার মার্কোস এ্যাকুনার শট অস্ট্রেলিয়ার বক্সের ভেতর ডিফেন্ডার আজিজ বেহিচের হাতে লাগলেও রেফারি তা এড়িয়ে যান। নিশ্চিত পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা।

তবে থেমে না থেকে ১৭ মিনিটে প্রথম আক্রমণ করে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসির বাড়ানো বল অস্ট্রেলিয়ার গোলবারের উপর দিয়ে মারেন গোমেজ। কিছুক্ষণ পর ২৯ মিনিটে প্রথম আক্রমন শানায় অস্ট্রেলিয়া। মিডফিল্ডার রিলে ম্যাকগ্রীর নেয়া কর্ণার থেকে উড়ে আসা বলে ডিফেন্ডার হ্যারি সুটার হেড নিলেও প্রতিহত হয়  আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগে।

৩৪ মিনিটে পাওয়া ফ্রি-কিক নেন মেসি। তার দুর্দান্ত শটটি অস্ট্রেলিয়ার গোলমুখে হেড দিয়ে  রক্ষা করেন অস্ট্রেলিয়ার ডিফেন্ডার সুটার। ফিরে আসা বল বক্সের বাইরে পেয়ে যান মিডফিল্ডার ডি পল। এরপর বক্সের ভেতর থাকা ডিফেন্ডার নিকোলাস ওটামেন্ডিকে বল দেন পল। আলতো ছোঁয়ায় মেসিকে বল দেন ওটামেন্ডি। বল নিয়ে বাঁ-পায়ের মাটি কামড়ানো শটে অস্ট্রেলিয়ার তিন ডিফেন্ডারের পায়ের নিচ দিয়ে ৩৫ মিনিটে বল জালে পাঠান মেসি। অস্ট্রেলিয়ার গোলরক্ষক ম্যাট রায়ান ঝাপিয়ে পড়েও বলের নাগাল পাননি। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।

বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বে এই প্রথমবার গোল করলেন ক্লাব ও দেশের হয়ে ১ হাজারতম ম্যাচ খেলতে নামা মেসি। বিশ্বকাপে আগের ৮ গোলই মেসি করেছিলেন গ্রুপ পর্বে। এই গোলে কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনাকেও ছাড়িয়ে গেছেন মেসি। বিশ্বকাপের মঞ্চে মেসির গোল এখন ৯টি। ম্যারাডোনার ৮টি।

মেসির বাঁ-পায়ের জাদুর গোলে  এগিয়ে থেকেই ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ করে আর্জেন্টিনা। এই অর্ধে ৬২ শতাংশ বল দখলে ছিলো মেসি-আলভারেজদের। অস্ট্রেলিয়ার গোলমুখে দু’টি শটের মধ্যে মাত্র ১টি টার্গেটে ছিলো। বিরতির পর বল দখলের চেষ্টায় ছিলো আর্জেন্টিনা-অস্ট্রেলিয়া উভয় দলই। ৫০ মিনিটে মিডফিল্ডার এ্যালেক্সিস ম্যাক এ্যালিস্টারের কাছ বক্সের বাইরে বল পান মেসি। অস্ট্রেলিয়ার গোলমুখে নেয়া মেসির দুর্বল শট জমা পড়ে অস্ট্রেলিয়ার গোলরক্ষকের হাতে। ৫২ মিনিটে নিজেদের বক্সের মধ্যে বল পাস দিয়ে ভুল বুঝাবুঝিতে পড়েন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ও ডিফেন্ডাররা। অল্পের জন্য বল পাননি অস্ট্রেলিয়ার স্ট্রাইকার মিচেল ডিউক। এ সময় বল পেলে বিপদ হতে পারতো  আর্জেন্টিনার।

তবে একই কারণে বিপদ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। ৫৭ মিনিটে নিজেদের সীমানায় বল পাস নিয়ে খেলতে গিয়ে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনে অস্ট্রেলিয়া। ডিফেন্ডার মিলোস ডিগেনেক বল দেন গোলরক্ষককে। তখন গোলরক্ষকের কাছে বল ধরতে যান পল। পলকে কাটাতে পারলেও পাশ থেকে ছুটে এসে বল দখলে নিয়ে ডান পায়ের শটে গোল করেন স্ট্রাইকার জুলিয়ান আলভারেজ। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে ম্যাচের লাগাম হাতে নিয়ে নেয় আর্জেন্টিনা।

এর পরপরই ৬২ ও ৬৫ মিনিটে আর্জেন্টিনার দু’টি আক্রমণ নসাৎ করে দেয় অস্ট্রেলিয়ার ডিফেন্ডাররা। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করেই  ডি-বক্সের  বাইরে থেকে দূরপাল্লার শটে ৭৭ মিনিটে গোল ক্রেইগ গুডউইনের গোলে ব্যবধান কমায় অস্ট্রেলিয়া।

৮০ মিনিটে ভাগ্য সাথে না থাকায় নিশ্চিত গোল পায়নি অস্ট্রেলিয়া। মাঝমাঠের পর বল পেয়ে আর্জেন্টিনার চার খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বক্সের বল নিয়ে ঢুকে পড়েন ডিফেন্ডার আজিজ বেহিচ। তখন তার সামনে শুধুমাত্র আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। বেহিচ যখনই শট নেন তখনই তার সামনে পা বাড়িয়ে মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজ। বল চলে যায় মাঠের বাইরে। বেহিচের দুর্দান্ত আক্রমণটি ভেস্তে যায়।

৮৯ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ডি-বক্সের ভেতর ঢুকে যান মেসি। বাঁ-দিকে দাঁড়ানো স্ট্রাইকার লটারো মার্টিনেজকে বল দেন মেসি। মার্টিনেজের সামনে তখন কেবল অস্ট্রেলিয়ার গোলরক্ষক। কিন্তু বলকে অস্ট্রেলিয়ার গোলবারের উপর দিয়ে মারেন মার্টিনেজ। ইনজুরি সময়ের তৃতীয় মিনিটে একইভাবে বল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বক্সের ভেতর ঢুকে আবারও মার্টিনেজকে বল দেন মেসি। এবার গোলমুখে শট নেন মার্টিনেজ। সেই শট রুখে দেন অস্ট্রেলিয়ার গোলরক্ষক।

শেষ মিনিটে আর্জেন্টিনার বিপদ সীমানায় বল পেয়ে গোলমুখে শট নেন অস্ট্রেলিয়ার স্ট্রাইকার গারাং কুল। তার শট আর্জেন্টিনার গোলরক্ষকের গায়ে লেগে ফিরে গেলে  গোল বঞ্চিত হয় অস্ট্রেলিয়া। এরপর কয়েক সেকেন্ড পরই ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজলে জয়ের আনন্দে নেচে উঠে আর্জেন্টিনা। এক আসর পর আবারও বিশ্বকাপের শেষ আটে উঠে মেসির দল।  ২০১৪ সালের ফাইনালে উঠে রানার্স-আপ হয়েছিলো আর্জেন্টিনা। ২০১৮ সালে শেষ ষোলোতে বিদায় ঘটে তাদের।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four × one =