মেহেদী মিরাজের দ্যুতিময় চৌকষ নৈপুণ্যে টেস্ট সিরিজ সমতা বাংলাদেশের

 

মেহেদী হাসান মিরাজের মাইলফলক চৌকষ নৈপুণ্য চট্টগ্রাম টেস্টে ইনিংস এবং ১০৬ রানের বিশাল ব্যাবধানে জয়ে বাংলাদেশের জন্য সিরিজ সমতা অর্জনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। স্মরণ করুন একই দলের কাছে সপ্তাহ খানিক আগেই সিলেটে ৩ উইকেটে হেরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের রক্তখরন হয়েছিল। প্রথমে ব্যাটিং করা সফরকারী দলকে ২২৭ রানে গুটিয়ে দিয়েছিলো তাইজুল ইসলামের (৬/৬০) ঘূর্ণি বলের কুশলী নৈপুণ্যে। এর পর নবীন সাদমান ইসলামের (১২০) ঝলমলে শত রান আর টপ অর্ডারের ভালো ব্যাটিং দ্বিতীয় দিনেই বাংলাদেশকে চালকের আসনে নিয়েছিল। ২৯১/৭ করে  বাংলাদেশ ৬৪ রানে এগিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে ছিল বলা যাবেনা। তবে তৃতীয় দিন মেহেদী মিরাজ লেজের দিকের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গী করে ম্যাচ থেকে সফরকারীদের ছিটকে দেয়। তাইজুল ইসলামের সঙ্গে ৮ম উইকেট জুটি ৬৩ এবং অভিষিক্ত তানজিম তামিমের সঙ্গে ৯ম উইকেট জুটি ৯৬ রান যোগ করলে বাংলাদেশের স্কোর সফরকারী দলের ধরা জোয়ার বাইরে ৪৪৪ পৌঁছায়। মেহেদী তার দ্বিতীয়  টেস্ট শতরান (১০৪) করে অপরাজিত থাকে। এখানেই শেষ নয় তৃতীয় দিন শেষ সেশনে ঘূর্ণিবলে সম্মোহিত করে মেহেদী মিরাজ (৫/৩২) জিম্বাবুয়েকে ১১১ রানে গুটিয়ে বাংলাদেশকে ইনিংস এবং ১০৬ রানের বিশাল ব্যাবধানে ম্যাচ জয়ী করে। সিরিজের ফলাফল ১-১। দ্বিতীয় টেস্টের পরিণতি দেখে বিশ্বাস করতে বিস্ময় জাগে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছিল ৩ উইকেটে। ক্রিকেট আসলেই রহস্যময়ী রমণীর মতোই বিস্ময় জাগানিয়া।

এই টেস্ট জয় করে ৬ ম্যাচ পর বাংলাদেশ দেশের মাটিতে জয়ের ধারায় ফিরলো। এর আগে নিউজিলণ্ড, শ্রীলঙ্কা, সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে ৫ টেস্ট ধারবাহিক ভাবে পরাজিত হয়েছিল বাংলাদেশ প্রথম টেস্টে হারের আগে।

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের ব্যাবধান যদি বিচার করতে হয় তাহলে বলবো সফরকারী দল নিঃসন্দেহে প্রথম টেস্ট জয়ের জন্য কৃতিত্বের দাবিদার। বাংলাদেশকে ভুলের ফাঁদে ফেলে যোগ্যতর দল হিসাবেই জয় ছিনিয়ে নিয়ে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিলো। দ্বিতীয় টেস্ট জয় করে সম্ভ্রম ফিরে পাওয়া ছাড়া বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের। সেই কাজটি বাংলাদেশ করেছে নৈপুণ্যের সঙ্গে। বাংলাদেশের বর্তমান দুর্বলতা টপ অর্ডার ব্যাটিং বলা যায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ভালো ব্যটিং উপহার দিয়েছে দীর্ঘ দিন রান খরায় থাকা সাদমান ইসলাম। আনামুল হক বিজয়ের প্রত্যাবর্তন ঝলমলে না হলেও চলনসই বলা যায়। মোমিনুল, শান্ত, মুশফিক নিজেদের পরিপূর্ণভাবে মেলে ধরতে পারেনি। মেহেদী নিজের জাত চিনিয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটে ২০০০ রান আর ২০০র বেশি উইকেট অর্জনের এলিট ক্লাবের সদস্য হয় চাট্টিখানা কথা নয়।  বাংলাদেশের সেরা টেস্ট বলার তাইজুল স্বরূপে ফিরেছে। পরিশেষে টেস্ট জয় করে সিরিজ সমতা অর্জন হওয়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্ভ্রম রক্ষা পেয়েছে। বিজিত জিম্বাবুয়ে দলকেও কৃতিত্ব দিবো। সীমিত সম্পদ এবং শক্তি দিয়ে বাংলাদেশকে দারুন ঝাকুনি দেয়ার জন্য।  বেন কুরান, ব্রায়ান বেনেট, নিক ওয়েল্চ, ভিন্সেন্ট মাসিকেসা অনেক দূর যাবে সেই সম্ভাবনার ঝিলিক দেখা গাছে।

যদি বলেন সিরিজ থেকে কি অর্জন বাংলাদেশের? অনুধাবন করার অনেক কিছুই আছে। গতানুগতিক ধারার ক্রিকেট বাংলাদেশ ক্রিকেটকে পতনের পথে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে টেস্ট ক্রিকেট এবং সার্বিকভাবে সকল ফরম্যাটের ক্রিকেট নিয়ে পুনঃমুল্যায়ন করা জরুরি। ঘরোয়া ক্রিকেটের খোল নলচে পাল্টে ফেলার জন্য আরো একটি ঘুম ভাঙানি গান হিসাবেই দেখতে হবে সিরিজটি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × four =