টেন্ডুলকার অ্যান্ডার্সন টেস্ট সিরিজ
সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ অনেক নতুন মাইলফলক, ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের তীব্র প্রতিরোধ শেষে অমীমাংসিত হ্যাভ শেষ হওয়ায় সিরিজের ফলাফল এখন ইংল্যান্ডের অনুকূলে ২-১. লন্ডনের ওভালে শেষ টেস্টে নির্ধারিত হবে সিরিজের ফলাফল। যাই হোক এই সিরিজ হারবে না ইংল্যান্ড। নানা মাইল ফলকে সমৃদ্ধ এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে প্রথম ব্যাটিং করে ভারত করেছিল ৩৫৮. জবাবে ইংল্যান্ড ম্যারাথন ব্যাটিং করে ৬৬৯ রান করে ভারতকে পরাজয় এড়ানোর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত দেয়ালে পিঠ রেখে লড়াই করে শেষ নাগাদ ৪ উইকেট হারিয়ে ৪২৪ রান করলে ম্যাচ অমীমাংসিত ভাবে শেষ হয়. ব্রেন্ডন ম্যাকুলাম আর বেন স্টোকস ইংল্যান্ড দল পরিচালনার দায়িত্বে আসার পর এটি মাত্র দ্বিতীয় অমীমাংসিত টেস্ট। দুই মোড়লের চলতি সিরিজের কাহ্রটি টেস্টের ২০ টি প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক সেশন বলা যায় চুটিয়ে উপভোগ করেছে ক্রিকেট বিশ্ব। এখন অপেক্ষা বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় ৫ম টেস্টের। ২-১ এগিয়ে থাকা ইংল্যান্ড সিরিজ হারবে না. ভারত বড় জোর শেষ টেস্টে জয়ী হয়ে সিরিজ ২-২ করতে পারবে। বিশ্ব জুড়ে টি ২০ ফ্র্যাঞ্চাইজি তাৎক্ষণিক ক্রিকেটের দাপটে যখন টেস্ট ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ক্ষয়িষ্ণু তখন এই ধরণের প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক টেস্ট সিরিজ টনিক হিসাবে কাজ করবে। অনেকেই টেস্টকে ভারতের গ্রেট এস্কেপ বলে সংগায়িত করছে। সত্যিই প্রথম ইনিংসে ৩১১ রানে পিছিয়ে থাকা ভারত যখন দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম ওভারে ০ রানে ২ উইকেট হারায় তখন কি কেউ ভেবেছিলো সেই ভারত ক্ষয়িষ্ণু উইকেটে ১৪৩ ওভার ব্যাটিং করে ৪ উইকেটে ৪২৫ রান করে বীরের বেশে পরাজয় এড়াতে পারবে। হয়েছে সেটি। ভারত অধিনায়ক ১০৮ রান করে সিরিজে চতুর্থ শত রান ( অধিনায়ক হিসাবে কিংবদন্তি স্যার ডোনাল্ড ব্রাডম্যান আর সুনীল মনোর গাভাস্কারের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলা) , ওয়াশিংটন সুন্দর ১০৭* এবং রাভিন্দ্রা জাদেজা ১০১* করায় টেস্ট ম্যাচটি আগ্রাসী ইংল্যান্ডের থাবা থেকে রক্ষা করে।
বর্ণনায় যাবার আগে রেকর্ডগুলো দেখা যেতে পারে। ভারতের অধিনায়ক শুভমান গিল চলতি সিরিজে চার চারটি শত রান করে ইতিমধ্যে বিশ্ব ক্রিকেটের দুই দিকপাল কিংবদন্তি অস্ট্রেলিয়ার স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান এবং ভারত ব্যাটিং মাস্টার সুনীল গাভাস্কারের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছে। বিশেষ করে টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১১ রানে পিছিয়ে দেয়ালে পিঠ থেকে যাওয়া অবস্থানে প্রথম ওভারেই ০ রানে দুই উইকেট হারানো অবস্থানে কে এল রাহুলের সঙ্গে জুটি বেঁধে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৮৮ রান দলকে বিপদ মুক্ত করে. সেই অবস্থানে থেকে ওয়াশিংটন সুন্দর এবং রাভিন্দ্রা জাদেজা অবিচ্ছিন্ন ৫ম উইকেট জুটিতে ২০৩ রান করে ভারতকে সম্মানজনক ভাবে পরাজয় এড়াতে ভূমিকা রাখে। ইংল্যান্ড বোলাররা ম্যাচে ২৫৭.১ ওভার বোলিং করেছে যার ১৪৩ ওভার ছিল জয়ের নেশায় করা দ্বিতীয় ইনিংসে/ স্মরণে রাখতে হবে প্রথম ইনিংসে আহত হবার কারণে ভারতের তুখোড় উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান ম্যাচ এবং সিরিজ থেকে ছিটকে পড়েছে।
আগেই লিখেছি ব্রেডন মাকুলাম মে ২০০২ ইংল্যান্ড দলের হেড কোচের দায়িত্বে আসার পর ম্যানচেস্টার টেস্ট ছিল মাত্র দ্বিতীয় ড্র। অপরটি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই মাঠেই ২০২৩ সালে। এই সিরিজের ৪ টেস্টে এখন পর্যন্ত ৭ বার ভারত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩৫০ রান করেছে। এর আগে অস্ট্রেলিয়া তিন বার এসেজ সিরিজে ১৯২০-২১ , ১৯৪৮ এবং ১৯৮৯ ছয়বার করে ৩৫০ অথবা বেশি স্কোর করেছিল। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ১০ টেস্ট খেলে ভারত একটিতেও জয় পেলো না. অধিনায়ক হিসাবে এক সিরিজে ৪ সেঞ্চুরি করা শুভমান গিল ১৯৪৭-৪৮ ভারতের বিরুদ্ধে করা স্যার ডোনাল্ড বার্ডম্যান এবং ১৯৭৮-৭৯ ভারতের সুনীল গাভাস্কারের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে করা কৃতিত্ব ছুঁয়েছে। সিরিজে ৭২২ রান করে গিল ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসাবে শুধুমাত্র ১৯৭০ সালে সুনীল গাভাকারের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে করা ৭৩২ রান থেকে পিছিয়ে আছে. ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে গিল , জাদেজা এবং ওয়াশিংটন সুন্দর তিন সেঞ্চুরি করে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের জন্য নতুন মেইল ফলক স্থাপন করে.
টেস্টের প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের জো ৰূট ১৫০ রান করে টেস্ট ক্রিকেটে ৩৮ ম শত রান তুলে নিয়ে সচিন টেন্ডুলকার (৫১) , জ্যাক কালিস (৪৫) রিকি পন্টিং ( ৪১) র পর যৌথ ভাবে কুমারা সাংরাকারার সঙ্গে চতুর্থ স্তনে আছে. টেস্ট ক্রিকেটে ১৩.৪০৯ করে ৰূট এখন শুধুমাত্র টেন্ডুলকারের ১৫,৯২১ থেকে পিছিয়ে আছে.
ফিরে আসি প্রথম বারের মত দুই কিংবদন্তি সচিন টেন্ডুলকার আর জেমস এন্ডারসনের নামকৃত টেস্ট সিরিজটির হাড্ডা হাড্ডি লড়াইয়ে এখন স্বাগতিক ইংল্যান্ড ২-১ এগিয়ে আছে. বাকি এখন শেষ টেস্ট। বৃহস্পতি বার থেকে লন্ডনের ওভালে শুরু হবে টেস্ট। উভয় দল ক্লান্ত শ্রান্ত। উভয় দলের ইনজুরি সমস্যা আছে. নিঃসন্দেহে স্বাগতিক দল চাইবে টেস্ট জিতে সিরিজ জয় করতে। ভারত চাইবে টেস্ট জয় এবং সিরিজ পরাজয় এড়িয়ে দেশে ফিরতে।
কথা উঠছে দুই স্তর বিশিষ্ট টেস্ট ক্রিকেট চালু করার। ভারত ,অস্ট্রেলিয়া , ইংল্যান্ড ,দক্ষিণ আফ্রিকা ,নিউ জিলণ্ড এবং শ্রীলংকা থাকবে টপ টায়ারে। ওপর দিকে দ্বিতীয় স্টোরে থাকবে পাকিস্তান ,ওয়েস্ট ইন্ডিজ ,বাংলাদেশ ,আফগানিস্তান , জিম্বাবোয়ে এবং আয়ারল্যান্ড। কথাটি আপাত দৃষ্টিতে শ্রুতি কটু মনে হলেও জোরালো যুক্তিও আছে. আমি অবশ্য মনে করি আইসিসি দুর্বলতর দেশ গুলোকে প্রণোদনা দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটকে শক্তিশালী করতে পারে। তবে এটি স্বীকার করতেই হবে টেস্ট ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিন্তু নিতান্তই বড় দল গুলোর মধ্যে সীমিত হয়ে পড়ছে। চলতি সিরিজের প্রথম ৪ টেস্টের হাড্ডা হাড্ডি লড়াই এর প্রকৃষ্ট প্রমান।