‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত’ গানটি প্রথম আমি গেয়েছিলাম: লিসা কালাম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তৈরি অন্যতম জনপ্রিয় গান ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’। হাসান মতিউর রহমানের লেখা গানটির সুর করেছেন মলয় কুমার গাঙ্গুলি। সাবিনা ইয়াসমীনের কণ্ঠেই গানটি জনপ্রিয়। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে গানটি গাওয়ার সময়ও নতুন শিল্পীরা সাবিনা ইয়াসমীনের নাম উল্লেখ করেন। তবে সংগীতশিল্পী লিসা কালাম বলছেন, এই গানটি প্রথম তিনি গেয়েছিলেন। কিন্তু কোথাও তাঁর নাম নেওয়া হয় না। লিসা কালামের দাবি, গানটি তাঁর কাছ থেকে হাইজ্যাক হয়ে গেছে।

লিসা কালাম বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকে হাসান মতিউরের লেখা গানটির সুর করেছিলেন মলয় কুমার গাঙ্গুলি। তাঁদের পরে আমিই প্রথম গানটি গেয়েছি। এখনকার প্রজন্ম হয়তো জানে, এই গানটি শ্রদ্ধেয় সাবিনা ইয়াসমীন ম্যামের। কিন্তু এই তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুল। গানটি আমার কাছ থেকে হাইজ্যাক হয়ে গেছে।’

গানের পেছনের গল্প জানিয়ে লিসা বলেন, ‘মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ নামের একজন সুরকার আছেন। মতিঝিল কলোনিতে তাঁর বাসা ছিল। সে বাসায় মলয় কুমার আমাকে নিয়ে যান। সেদিন হারমোনিয়ামে গানটি তুলে দিয়েছিলেন তিনি। আমাকে বলেছিলেন, এটা ছড়িয়ে দাও। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান থেকে দেশের আনাচকানাচে ছড়িয়ে দিতে থাকি।’

সে সময় গানটি রেকর্ডও হয়েছিল। লিসা বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকের শুরুতে যখন দেশের সব জায়গায় গানটি গাওয়া শুরু করি, সে সময় গানটি রেকর্ড হলেও সেই কপি আমার কাছে নেই। আমি কখনোই বুঝতে পারিনি, গানটি আমার গাওয়া—এটা আমাকে প্রমাণ করতে হবে। বুঝতে পারলে সেটা সংরক্ষণে রেখে দিতাম।’ আক্ষেপ নিয়ে লিসা কালাম বলেন, ‘এখনকার শিল্পীদের যখন এই গানটি গাইতে শুনি, তারা আমার নাম বলে না। সে সময় খুব কষ্ট লাগে। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। আমার বাচ্চারা যখন স্কুল থেকে এই গান শুনে এসে আমায় বলে, এটা না তোমার গান, তাহলে তোমার নাম কেন বলে না? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমি দিতে পারি না।’

লিসা কালাম জানান, ২০০৮ সালে এ নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। তবে পরিবর্তন হয়নি কিছুই। আক্ষেপ থাকলেও লিসা জানালেন একটি প্রাপ্তির কথা। লিসার দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন যদি রাত পোহালে গানটি তাঁর গাওয়া। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে এই গানের গায়িকা হিসেবে লিসাকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন তিনি।

শুধু এই গান নয়, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দুই শতাধিক গান গেয়েছেন লিসা কালাম। এ কারণে তাঁকে শাস্তিও পেতে হয়েছে। লিসা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান গাইলে যে শাস্তি পেতে হয়, সেটা আমার জানা ছিল না। আমি ১২ বছর ব্ল্যাক লিস্টেড ছিলাম। বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির যেকোনো সেক্টরে আমাকে ব্ল্যাক লিস্টেড করে রাখা হয়েছিল। একজন শিল্পীর জীবন থেকে যখন ১২ বছর চলে যায়, সেই শিল্পীর আর কী থাকে!’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four × 2 =