যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ মিশনে শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উদযাপিত

যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপিত হয়েছে।  রোববার সরকারি তথ্য বিবরণী এবং সংবাদ বিজ্ঞপ্তি হতে এ খবর জানা গেছে। খবর বাসস

আজ এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি’তে বাংলাদেশ দূতাবাসে গতকাল শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হয়। শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকীতে দূতাবাস আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে, এ উপলক্ষ্যে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। আলোচনা সভায় বক্তৃতাকালে রাষ্ট্রদূত বলেন, শেখ কামাল ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। খেলাধুলা, সংগীত, নাটকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার (শেখ কামাল) অবদান দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও আলোচনায় অংশ নেন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন: নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনেও যথাযোগ্য মর্যাদায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সকল শহীদ সদস্যের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ এবং শেখ কামালের জীবন ও কর্মের ওপর একটি  প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

এই অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত।

রাষ্ট্রদূত বলেন, শেখ কামাল ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা কিংবদন্তী। মাত্র ২৬ বছর আয়ুকালে তিনি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য অনেক অবদান রেখে গেছেন। একজন নিবেদিত, সংগ্রামী ও আদর্শবাদী রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা পালন করেন শহীদ শেখ কামাল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধেও সরাসরি অংশ নেন।

শেখ কামাল বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উন্নয়নে নিরলস কাজ করে গেছেন উল্লেখ করে মুহিত বলেন, তিনি (কামাল) ছিলেন আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা, ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, স্বাধীন বাংলাদেশে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন আন্দোলনের একজন পুরোধা। এছাড়াও শেখ কামাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী।

স্থায়ী প্রতিনিধি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে অসামান্য অগ্রগতি সাধন করেছে, তার মধ্য দিয়েই বাস্তবায়িত হচ্ছে স্বপ্নদর্শী তরুণ শেখ কামালের স্বপ্ন।

মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত প্রবাসের নতুন প্রজন্মকে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠারও আহবান জানান।

সৌদি আরব: সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শনিবার শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়।

এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে রাষ্ট্রদূত  ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শহীদ শেখ কামালের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

এছাড়াও, তিনি দেশের ইতিহাস জেনে ও হৃদয়ে বাংলাদেশকে ধারণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেকে তৈরি করার জন্য নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানান।

এর আগে শনিবার সকালে দিবসটি উপলক্ষ্যে দূতাবাস চত্বরে ক্যাপ্টেন শহীদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। এ সময় দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া, রিয়াদে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ইংরেজি শাখা ও জাতীয় কারিকুলামের পক্ষ থেকেও শহীদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। রিয়াদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শহীদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

আলোচনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত বলেন, জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শহীদ শেখ কামাল ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে আধুনিক ক্রীড়া ও সংস্কৃতি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশের যুব সমাজকে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াক্ষেত্রে সম্পৃক্ত করে একটি আধুনিক উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন।

মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, শেখ কামাল ছিলেন একজন সৃজনশীল, উদ্যমী ও  প্রাণবন্ত তরুণ, যিনি মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন, একজন সংগঠক হিসেবে ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, সংগীত, নাটক, সংস্কৃতিতে এবং সামাজিক কর্মকান্ডে তরুণদের নেতৃত্ব দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি  (শেখ কামাল)। তাঁর জীবন ও কর্ম নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরারও আহবান জানান রাষ্ট্রদূত।

জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, শেখ কামাল ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচন্ড উৎসাহ ছিল তার। উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শেখ কামাল।

দূতাবাসের প্রথম সচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে শেখ কামালের জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত এবং জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।

এছাড়াও, ভিয়েতনামের হ্যানয়ে, ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়ায়, সৌদি আরবের জেদ্দায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

17 − eight =