রাশিয়ার চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার জিতল বাংলাদেশের ‘আম কাঁঠালের ছুটি’

রাশিয়ার চেবাক্সারি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ষোড়শ আসরে স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড জিতেছে মোহাম্মদ নূরুজ্জামান পরিচালিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আম কাঁঠালের ছুটি’।

উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে রাশিয়া থেকে মোহাম্মদ নূরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেক ভালো লাগছে দেশের বাইরে আমাদের বাংলা সিনেমা এমন একটি পুরস্কার জিতেছে। আসলেই আমার চিন্তায়ও ছিল না বিশ্বের এত এত ভালো সিনেমার সঙ্গে লড়াই করে এমন পুরস্কার জিতে যাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুরস্কারের থেকে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সিনেমাটি নিয়ে সেখানকার দর্শকের প্রতিক্রিয়া। সিনেমাটি দেখার পর সবাই খুব প্রশংসা করেছে। বিষয়টি খুব ভালো লেগেছে। আরও একটি ভালো লাগার বিষয় হলো, যেখানে অন্যান্য সিনেমার প্রদর্শনী হয়েছে একবার করে, সেখানে আমাদের সিনেমাটি দুবার প্রদর্শিত হয়েছে।’

গত ২৬ মে থেকে ১ জুন ২০২৩ পর্যন্ত রাশিয়ার চেবাক্সারিতে চেবাক্সারি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ষোড়শ আসরের মূল প্রতিযোগিতা অফিশিয়াল সিলেকশন পেয়েছিল বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ‘আম-কাঁঠালের ছুটি’। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নৃতত্ত্ব ও আঞ্চলিক স্বকীয়তার প্রতিনিধিত্ব করা চলচ্চিত্র নিয়ে আয়োজিত হয়েছে এই উৎসব।

শরীফ উদ্দিন সবুজের ছোটগল্প অবলম্বনে শিশুতোষ ঘরানার ‘আম-কাঁঠালের ছুটি’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। গত শতাব্দীর সত্তর-আশি কিংবা মধ্য নব্বইয়ের দশকে যাঁরা শৈশব-কৈশোর পার করেছেন তাঁরা তাঁদের সেই বয়সের যাপিত জীবনকে নস্টালজিক আবহে তৈরি এই চলচ্চিত্রে দেখতে পাবেন বলে মনে করেন নির্মাতা। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া কিংবা হারাতে বসা প্রাকৃতিক পরিবেশ আর আমাদের নিজস্ব লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হবে নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোররা। চলচ্চিত্রটির আন্তর্জাতিক সংস্করণের নামকরণ করা হয়েছে সামার হলিডে।

কারও সঙ্গে মিশতে না পারা আট বছর বয়সী একটি শহুরে ছেলে গ্রীষ্মের ছুটিতে গ্রামে বেড়াতে এসে কীভাবে নতুন এক জগৎ আবিষ্কার করে, খুঁজে পায় বন্ধুত্ব আর রোমাঞ্চের স্বাদ, তারই আখ্যান এই পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।

গত বছরের ২৬ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অনুষ্ঠিত জগজা নেটপ্যাক এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘আম-কাঁঠালের ছুটি’ সিনেমার ইন্টারন্যাশনাল প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়। এশিয়ান পার্স্পেক্টিভ বিভাগে ছবিটির আরও একটি প্রদর্শনী হয় সেখানে। উৎসব কমিটি এবং উপস্থিত দর্শকও ছবিটির প্রশংসা করে।

চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে চলচ্চিত্রটি পরীক্ষণের সময় সেনসর কমিটির সদস্যরা খুবই নস্টালজিক হয়ে পড়েন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। বাংলাদেশ ফিল্ম সেনসর বোর্ড সদস্যরা বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যতিক্রমী এবং প্রয়োজনীয় একটি কাজ হিসেবে চলচ্চিত্রটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। চলচ্চিত্রের দৃশ্যপট, সাবলীল অভিনয় আর বাস্তবানুগ কাহিনি বিন্যাসে তাঁরা মুগ্ধ হন। বাংলাদেশের চিরায়ত সংস্কৃতি আর সহজ-স্বচ্ছন্দ জীবনবোধের এই গল্পে নিজেদের সহজেই মেলাতে পারছিলেন সেনসর স্ক্রিনিংয়ে উপস্থিত একেকজন দর্শক।

সিনেমাকার প্রযোজিত এই চলচ্চিত্রের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ সাত বছরের পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের গল্প। খুব ছোট একটি কারিগরি ইউনিট আর আনকোরা একদল অপেশাদার অভিনয়শিল্পীর নিয়ে গাজীপুরের হারবাইদ সংলগ্ন প্রায় পঁচিশ-ত্রিশ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে থাকা লোকেশনে ধারণ করা এই চলচ্চিত্রের সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন নির্মাতা নিজেই, সঙ্গে ছিলেন ম্যাক সাব্বির। প্রযোজনা, পরিচালনা, চিত্রনাট্য রচনার পাশাপাশি সাউন্ড ডিজাইনও করেছেন মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। প্রধান চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছে লিয়ন, জুবায়ের, আরিফ, হালিমা ও তানজিল। আরও ছিলেন ফাতেমা, কামরুজ্জামান কামরুল, আব্দুল হামিদ প্রমুখ। চলচ্চিত্রটির প্রধান সহকারী পরিচালক যুবরাজ শামীম।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের ২১ জুলাই সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির জন্য আবেদন করা হয়েছে। দেশের দর্শকদের জন্য সেই হিসেবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে চলচ্চিত্রটির প্রোমোশনাল টিম।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 × 2 =