জ্বালানি আমদানিতে বাড়তি অর্থযোগান, বিদ্যুতে অধিক গ্যাস সরবরাহের পাশাপাশি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোজা এবং নিবিড় সেচ সময়ে জ্বালানি বিদ্যুৎ চাহিদা ভালোভাবেই সামাল দিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ ব্যবহার ব্যবস্থাপনাও নিবিড় তদারকিতে ছিল।
চাহিদা ১৩০০০-১৩৫০০ মেগাওয়াট সীমিত ছিল। চলতি এপ্রিল থেকেই চাহিদা বেড়ে ১৫,৫০০-১৬,০০০ মেগাওয়াট পৌঁছে যাবে। জানি গ্রিড সংযুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭,৫৩৫ মেগাওয়াট। সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থা ১৭৫০০-১৮,০০০ মেগাওয়াট সরবরাহ মেটাতে পারবে। কিন্তু সমস্যা আর সীমাবদ্ধতা প্রাথমিক জ্বালানি জোগানে।
তীব্র গরমের সময় মধ্য এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর শেষ পর্যন্ত কখনো কখনো চাহিদা ১৮,০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে। জ্বালানি সংগ্রহ আর সরবরাহের যত পরিকল্পনা করা হোক কোনো কোনো দিন ১৫০০-২০০০ মেগাওয়াট লোড শেডিং পরিকল্পনা করতে হবে।
মনে হয় না আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে সরকারের পক্ষে পুরো সময় কয়লা, এলএনজি এবং তরল জ্বালানি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় বিদেশি মুদ্রা সরবরাহ করা সম্ভব সম্ভব হবে।
জ্বালানি মিশ্রণ: গ্যাস ১১৯৯৭ মেগাওয়াট (৪৩.৫%), ফার্নেস অয়েল ৫৫৮১ মেগাওয়াট (২০.২৭% ), কয়লা বিদ্যুৎ ৫৬৮৩ মেগাওয়াট (২০.৬৪%), আদানি সহ বিদ্যুৎ আমদানি ২৬৫৭ মেগাওয়াট (০৯.৬৫%), নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৭৬২ মেগাওয়াট (০২.৭৭%), ডিজেল ৬২৬ মেগাওয়াট (০২.২৭%) এবং জলবিদ্যুৎ ২৩০ মেগাওয়াট (০.৫৪%)।
মার্চ মাসে রোজার সময় বিদ্যুৎ খাতে ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে ৭০০০-৭৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। একই সঙ্গে ৪৫০০-৫০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কয়লা থেকে আসায় এবং গড়ে ২০০০-২৩০০ মেগাওয়াট আমদানি হওয়ায় চাহিদা মেটানো অসুবিধা হয় নাই। তরল জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলো পিক চাহিদা সামাল দিয়েছে।
দেখেছি কখনো কখনো ১০০০ এমএমসিএফডি গ্যাস এসেছে এলএনজি থেকে। জানিনা কয়লা, এলএনজি আমদানির সক্ষমতা কতটা অক্ষুণ্ন থাকবে। এবারের গ্রীষ্মে তাপদাহ আসবে কয়েকবার।
শিল্পখাতে বিশেষত টেক্সটাইলস, গার্মেন্টস শিল্পে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে হবে। অন্তত ১৫৫০০-১৬০০০ মেগাওয়াট নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে গ্যাস থেকে ৭০০০ মেগাওয়াট, কয়লা ৫০০০ মেগাওয়াট, আমদানি ২০০০ মেগাওয়াট, অন্যান্য ১০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করার পরেও তরল জ্বালানি থেকে কমপক্ষে ২৫০০-৩০০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের সংস্থান থাকতে হবে।
জানিনা জ্বালানী সংগ্রহ এবং বিতরণ ব্যবস্থা কতটা পরিকল্পিত আছে। এর পাশাপাশি চাহিদা ব্যাবস্থাপনায় কৃচ্ছতা নিবিড়ভাবে মনিটরিং করতে হবে। কলিং লোড এবং লাইটিং লোড নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। কিছু কিছু সময়ে ১৫০০-২০০০ মেগাওয়াট পরিকল্পিত লোড শেড্ডিং করতে হতে পারে।
পাশাপাশি অধিকতর প্রণোদনা দিয়ে রুফ টপ সোলারের অবদান যতটা সম্ভব বাড়াতে হবে। অপচয় রোধ, বিদ্যুৎ জ্বালানি চুরি, অদক্ষ ব্যবহার পরিহার করতেই হবে। এপ্রিল মাস শেষ হলেই সেচের লোড কমে যাবে। নিবিড় বর্ষণ শুরু হলে স্বস্তি আসবে। আশা করি জনসাধারণ এবং সরকার পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সংকটের সময়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে।