সালেক সুফী: রামায়ণে আছে রাম লক্ষণের ডেরা থেকে সীতা উদ্ধার করে। সেই লংকানরা যখন ক্রিকেটে ভারত জয় করে, তাও এশিয়ার শ্রেষ্টত্বের লড়াইয়ে তখন সেটিকে অঘটন বলা যেতেই পারে। ৬ দলের এশিয়া কাপে কালকের পরাজয় টুর্নামেন্ট ফেভরিট ভারতকে বলা যায় ছিটকে দিয়েছে। অন্যদিকে আফগানিস্তান এবং ভারতের সঙ্গে জয় নিয়ে শ্রীলংকা এখন ফাইনাল প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে।
চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে পরাজয়ের পর কালকের ম্যাচে জয় লাভ ছিল ভারতের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু ৬ উইকেটের দাপুটে জয়ে অনেক সমীকরণ পাল্টে দিয়ে শ্রীলংকা প্রথম দল হিসাবে টুর্নামেন্ট ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। আজ পাকিস্তান আফগানিস্তানকে পরাজিত করলে টুর্নামেন্ট ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাবে। টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলবে শ্রীলংকা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।
টস জয় করে কাল শ্রীলংকা ভারতকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে ওদের সংগ্রহ ১৭৩/৮ সীমিত রাখে সাধ্যের সীমানা প্রয়োগ করে। জবাবে জয়ের লক্ষে অবিচল থেকে ১৯.৫ ওভারে ১৭৪/৪ করে জয় ছিনিয়ে নিয়ে বিশ্বকে বিস্মিত করে। অথচ এই দলটি টুর্নামেন্টের প্রথম খেলায় আফগানিস্তানের কাছে নাকানি চুবানি খেয়ে হেরেছিল। অন্যদিকে ভারত হারিয়েছিল চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে।
কাল শ্রীলংকা দলের কার্যকরী বোলিং আর তুখোড় ফিল্ডিংয়ের মোকাবিলায় ব্যর্থ অধিনায়ক রোহিত শর্মা ( ৪১ বলে ৭২) আর সূর্যকুমার যাদব (৩৪) ছাড়া কেউ হলে পানি পায়নি। শ্রীলংকার হয়ে লংকাকান্ড ঘটে মধুসংকা (৩/ ২৪), শানাকা (২/২৬ ) এবং করুনারত্নে (২/২৭) । কিছু দিন আগে দেখেছিলাম বাংলাদেশের পরিচালক ( কোচিং) শ্রীলংকা দলে মানসম্মত বোলার খুঁজে ফিরছিলেন।
দল হিসাবে শ্রীলংকা সুসংহত সেটি প্রতিষ্ঠিত করেছে প্রথমে ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে হেরে যাবার পর ফিরতি খেলায় আফগানিস্তান, এরপর বাংলাদেশ আর ভারতকে হারিয়ে। দলে ভারত, পাকিস্তান এমনকি বাংলাদেশ আফগানিস্তানের মতো বিশ্ব তারকা নেই। কিন্তু কাজের কাজটি যখন প্রয়োজন ঠিক তা করার মতো অনেক খেলোয়াড় আছে।
কাল টস জয় করে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর মতো সাহস দেখিয়েছে। রোহিত, রাহুল, কোহলিদের সামনে ভড়কে যায়নি। সঠিক লাইন লেংথ বজায় রেখে ক্রমাগত বোলিং এবং তুখোড় ফিল্ডিং করে দলীয় স্কোর সীমিত রেখেছে ধরা ছোয়ার মধ্যে। ১৭৩/৮ উইকেটের ইনিংসে রোহিত ৭২ আর যাদব ৩৪ ছাড়া আর কেউ কিছুই করতে পারেনি।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার নিশাঙ্কা (৫২), মেন্ডিস (৫৭) ৯৭ রানের জুটি গড়ে ভারতকে ব্যাক ফুটে ঠেলে দেয়। রোহিত বার বার বোলার পরিবর্তন করেও ওদের প্রতিজ্ঞায় চিড় ধরাতে পারেনি। কুশলী স্পিনার চাহাল মাঝপথে বিষাক্ত ছোবল মারলেও রাজপাকশা (২৩*) আর শানাকা (৩৩*) ৫ম উইকেট অপরাজিত ৬৪ রানের জুটিতে ১ বল বাকি থাকতেই ৬ উইকেটে জয় পায়।
আফগানিস্তান এবং ভারতের বিরুদ্ধে পর পর জয় শ্রীলংকা দলের ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে টুর্নামেন্ট ফেভারিট ভারত ,পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার বিরুদ্ধে হেরে ছিটকে গেছে টুর্নামেন্ট থেকে। ভারত দলের বোলিং, ব্যাটিং কিছুই এযাবৎ ওদের খ্যাতির প্রতি সুবিচার করেছে বলা যাবে না। আজ পাকিস্তান আফগানিস্তানকে হারালে পাকিস্তান শ্রীলংকা দলের মাঝেই হবে শিরোপা লড়াই।