শততম টেস্টের সেঞ্চুরি দাদা-দাদী, নানা-নানীকে উৎসর্গ করলেন মুশফিক

বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে শততম টেস্ট খেলতে নেমে সেঞ্চুরি করেছেন ডান-হাতি ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। বিশ্বের ১১তম ব্যাটার হিসেবে শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন মুশফিক। শততম টেস্টে করা সেঞ্চুরি দাদা-দাদী, নানা-নানীকে উৎসর্গ করেছেন মুশফিক। পাশাপাশি সমৃদ্ধ ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পেছনে স্ত্রীকে বেশি কৃতিত্ব দিলেন তিনি। খবর বাসস

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলতে নেমে অনন্য মাইলফলক স্পর্শ করেন মুশফিক। বাংলাদেশের প্রথম ও বিশ্বের ৮৪তম খেলোয়াড় হিসেবে শততম টেস্ট খেলতে নামেন তিনি। শুধুমাত্র শততম টেস্টের মাইলফলকই স্পর্শ করেননি মুশি। শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম তুলেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। তার আগে শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন বিশ্বের দশজন ব্যাটার। যেখানে আছেন গর্ডন গ্রিনিজ, রিকি পন্টিং, জাভেদ মিয়াঁদাদ, জো রুটদের মত ব্যাটাররা।

শততম টেস্টের এই সেঞ্চুরি দাদা-দাদী, নানা-নানীকে উৎসর্গ করেছেন মুশফিক। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক বলেন, ‘আমার দাদা-দাদী, নানা-নানী যখন বেঁচে ছিলেন, আমার সবচেয়ে বড় ভক্ত ছিলেন। মারা যাওয়ার আগে তারা যখন অসুস্থ ছিলেন, আমার এখনও মনে আছে তারা বলেছিলেন, ভাই তোমার খেলা দেখার জন্য হলেও আরও কিছুদিন বাঁচতে চাই। খুব কম নাতি-নাতনিদের ভাগ্যে এমনটা জোটে। তাদের দোয়াতেই আমি আজকে এই পর্যায়ে। আরও অনেক মানুষের অবদান আছে। তবে বিশেষ এই অর্জন তাদেরকেই উৎসর্গ করতে চাই।’

২০০৫ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে অভিষেক হয় মুশফিকের। ২০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে শততম টেস্ট খেলেছেন তিনি। এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে স্ত্রীর অবদান সবচেয়ে বেশি ছিল বলে জানান মুশি। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমার মনে হয় সবচেয়ে বড় স্যাক্রিফাইস, সাপোর্ট আমার স্ত্রী দিয়েছে। আপনারাও জানেন, আমি অন্যদের তুলনায় বেশি অনুশীলন করি। এটা কখনও সম্ভব হতো না, যদি আমার ঘরে এরকম একটা পরিবেশ না থাকত।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার দুটো বাচ্চা আছে। স্বাভাবিকভাবে ছোট বাচ্চারা সারারাত ঘুমায় না। কিন্তু আমার কখনও নির্ঘুম রাত কাটেনি। কারণ সে পুরোটা সময় রাত জেগে বাচ্চাদের দেখাশুনা করেছে। আমাকে ওই টেনশন থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছে। আমার এগার বছরের মত সংসার জীবন। আমার ক্রিকেটের ইম্প্যাক্ট যদি ২০১৪ সালের পর থেকে দেখেন, এটা অনেক বড় ভূমিকা। তাই আমি সবসময় তার প্রতি কৃতজ্ঞ এবং তাকে অনেক ধন্যবাদ।’

শততম টেস্ট খেলতে নেমে সেঞ্চুরি, এক ম্যাচে এমন বিরল রেকর্ডের পরও দলের জয়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন মুশফিক। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক ম্যাচেই আমার চেষ্টা থাকে আমি যেন আমার সেরা  এফোর্টটা দিতে পারি এবং দলের জয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারি। গতকালকে ম্যাচের শুরুতে আমি একটা কথা বলেছিলাম, ১শ ম্যাচ হোক বা যেকোন মাইলফলক হোক, এসব কিছুর উর্ধ্বে দল। আমি এটাই বলেছি যে, বাংলাদেশের জন্য আমি মুশফিকুর রহিম আমার কাছে মনে হয়, একটা সমুদ্রে দুই এক ফোটা পানি। আমি এই মেসেজটা দেওয়ার চেষ্টা করছি যে, আমার জন্য না, দেশের জন্য যেন আমরা খেলি এবং এই ম্যাচের জয়টাই সবচাইতে আমার বড় গিফট হবে আমার কাছে। আলহামদুলিল্লাহ ভাল লেগেছে দলের জন্য এ ম্যাচে কিছু করতে পেরেছি।’

রেকর্ড গড়া ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ২১৪ বল খেলে ৫টি চারে ১০৬ রানে থামেন মুশফিক। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের হয়ে মোমিনুল হকের সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ শতকের মালিক এখন তিনি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

4 + 16 =