আসন্ন পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের কাছে ভোজ্য তেল বিক্রয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পণ্য নিতে বাধ্য করলে বা কোনরকম শর্ত আরোপ করলে প্রতিষ্ঠান ও ডিলারদের জরিমানাসহ কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। খবর বাসস।
সিয়াম সাধনার মাসকে কেন্দ্র করে ভোজ্য তেলের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আজ রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। বাজারে তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করে তিনি বলেন,‘বাজারে তেল কিনতে গেলে একই সঙ্গে নানা ধরনের অন্যান্য পণ্য কিনতে ভোক্তাদের শর্ত আরোপ করা হচ্ছে। আমরা বাজারে গিয়ে এসবের প্রমাণ পেয়েছি কিন্ত পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো তা অস্বীকার করছে। বাজারে কোথাও এ অবস্থা দেখতে পেলে কোম্পানি ও ডিলারদের জরিমানা করা হবে।’
ভোজ্য তেলের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে টেকসই সমাধান হিসেবে ভোজ্যতেলের উৎপাদন এবং সরবরাহের তথ্য উন্মুক্ত করতে মিল মালিকদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে পরিমাণ তেল পরিশোধন করা হচ্ছে তা দ্বিগুণ করতে হব। সেইসঙ্গে প্রতিদিন তেলের উৎপাদন ও সরবরাহ কত কোম্পানিগুলোকে তা দৈনিক ভোক্তা অধিদপ্তরকে জানাতে হবে।’
এসময়, কোম্পানি বা মিল মালিক ও ডিলারদের সাথে দৈনিক উৎপাদিত, পরিশোধিত, মজুদ ও সরবরাহকৃত তেলের তথ্য আদান-প্রদান সহজতর করতে একটি সফটওয়্যার তৈরির ব্যাপারে তিনি ব্যবসায়ীদের সাথে একমত পোষণ করেন।
সভায় উপস্থিত বক্তাদের কেউ কেউ ডিলারদের বিরুদ্ধে সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ না করার অভিযোগ করলে তিনি বলেন,‘বর্তমানে ছয়টি তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানে তেল পরিশোধন হওয়া সত্ত্বেও বিগত তিন-চার মাস ধরে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কারণ নির্ধারিত তারিখে পণ্য দেওয়া হয় না। ভবিষ্যতে এরকম করলে আমরা এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।’
আলোচনার এক পর্যায়ে অধিদপ্তরের পরিচালক ফকির মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাজধানীর ৪টি বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে খুচরা দোকানে তেল কম। কারণ ডিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে তেলের সঙ্গে অন্যান্য বিভিন্ন পণ্য কেনার শর্ত জুড়ে দেওয়ার বিষয়টির ও সত্যতা পাওয়া গেছে। পাইকারি বিক্রির ক্ষেত্রে তারা কোনো রশিদ দেখাতে পারছে না। আবার দেখা গেছে খোলা তেলের দাম বোতলজাত তেলের চেয়ে বেশি।’
সভায় উপস্থিত নিউ মার্কেট বাজারের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের বলেন, ‘বাজারে ৫ লিটারের তেল নেই, বর্তমানে বাজারে কোন কোম্পানির তেল নেই। আমরা ৫ কার্টন চাইলে আমাদের এক কার্টন দেওয়া হয়। তেল চাইলে সাথে পোলাওর চাল, আটা, লবণ, চা পাতাসহ অন্যান্য পণ্য কেনার শর্তজুড়ে দেয় তারা। তেলের অর্ডার নিয়েও তারা এসব পণ্য দিচ্ছে।’
অপরদিকে, টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার বাজারে সরবরাহ কম থাকার বিষয়ে বলেন,‘বিদেশ থেকে সয়াবিন আসতে ৫০-৬০ দিন ও পাম তেল ১০-১২ দিন সময় লাগে। রমজান উপলক্ষে দুটি কোম্পানি দ্বিগুণ এলসি করেছে কিন্ত সেপ্টেম্বরের এলসি অক্টোবরের শেষদিকে করা হয়েছে এবং পণ্য ডিসেম্বরে আসার কথা থাকলেও ব্রাজিলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জাহাজ চলাচল ১৫ দিন বন্ধ থাকায় এই দেরি হয়েছে। আগামী ২৪ তারিখে বড় ধরনের চালান আসবে, আশা করি ২৬ ফেব্রুয়ারির পর তেলের সংকট হবে না।’
সভায় অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, ভোজ্য তেল মিল মালিক, বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এন্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারার্স এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ, খুচরা ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী, কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।