সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফকে অশ্রু নয়নে ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, সংস্কৃতজনসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।শনিবার বেলায় ১১টায় কফিনবন্দি হয়ে শেষ বারের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসেন হাসান আরিফ। দুপুর ১টা পর্যন্ত তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন চলে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে শহীদ মিনারে বহু সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের শেষ বিদায়ের আয়োজনে অগ্রভাগে ছিলেন হাসান আরিফ; সেই শহীদ মিনার এবার হল তারই বিদায়ের মঞ্চ। আর তা স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার সহযোগী সংস্কৃতিকর্মীরা।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে গণজাগরণ মঞ্চসহ দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন হাসান আরিফ।হাসান আরিফকে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষকরা ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের তরফ থেকে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিসহ আরও অনেকে।হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, “বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন হাসান আরিফ। দেশে আবৃত্তি শিল্পকে জনপ্রিয় করতে অসামান্য অবদান রেখেছেন তিনি। তার মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।”
শ্রদ্ধা জানাতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আখতারুজ্জামান বলেন, “হাসান আরিফ একজন শিল্পমনা মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে পুরোধা ব্যক্তিত্ব তিনি। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে দিতে আজীবন কাজ করে গেছেন।”
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “হাসান আরিফের চিন্তাকে আমরা ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাব।” সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, “হাসান আরিফের অভিভাবকের জায়গা থেকে যদি বলি, খুব প্রাণসঞ্চারি মানুষ আরিফ। দেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলন বেগবান করতে, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটকে দাঁড় করাতে কাজ করে গেছে।আরিফের শিল্পসৃষ্টির আলোয় হাজারো কমীর পথ চলেছেন, সেই সেই আলো নিভে গেল। শুধু আবৃত্তি নয়, পুরো জীবন সংস্কৃতিতে নিয়োজিত ছিল আরিফ।”
স্বৈরাচার আন্দোলনের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে হারিয়ে শোকাচ্ছন্ন বাচ্চু বলেন, “স্বৈরাচার ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে আরিফ; গণজাগরণ মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেয়েছে। তাকে বাদ দিয়ে আমরা কিছুই ভাবতে পারছি না। আমরা কীভাবে সামনে এগোব, জানি না।”
শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের মাঝে হাসান আরিফের আবৃত্তি বাজানো হয়েছে; তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রবীন্দ্রসংগীত ‘জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে’ পরিবেশন করেছেন শিল্পী ফারহিন খান জয়িতা।
হাসান আরিফের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, জাসদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, কণ্ঠশীলন, সাংস্কৃতিক সংগঠন বহ্নিশিখা, স্বনন, ঋষিজ, মহাকাল নাট্য সম্প্রচায়, বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটার, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, উদীচী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ পরিষদ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ আরও অনেক সংগঠন।
দুপুর ১টায় শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে হাসান আরিফের কফিন নিয়ে শোকর্যা্লি বের হয়; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণে তার জানাজা হয়েছে। এরপর হাসান আরিফের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মরদেহ দান করা হয়।
বিডিনিউজ