শিল্পকলায় কি ড্রামস নিষিদ্ধ

কয়েক দিন ধরে দেশের ব্যান্ডসংগীতের অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্যের সারমর্ম, শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে ব্যান্ডের কনসার্ট করতে গেলে অসুবিধায় পড়তে হয়। বিদেশি বাদ্যযন্ত্র হওয়ায় শিল্পকলায় ড্রামস বাজাতে দেওয়া হয় না। এ ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ করেছেন নির্ঝর ব্যান্ডের গায়ক জয় শাহরিয়ার, অবসকিউরের টিপু, দলছুটের বাপ্পা মজুমদার, বাংলা ফাইভ ব্যান্ডের সিনা হাসান, নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীসহ অনেকে। তবে শিল্পকলা একাডেমি জানিয়েছে, সেখানে ব্যান্ডের কনসার্ট কিংবা ড্রামস বাজানোর ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

ঘটনার সূত্রপাত

রোববার বাংলা ফাইভ ব্যান্ডের গায়ক সিনা হাসান একটি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘শিল্পকলায় যে ড্রামস ঢুকাতে দেয় না, হারমোনিয়াম কি দেশি যন্ত্র ছিল? ভায়োলিন? স্যাক্সোফোন? গিটার? কাহন? ২০২৩ সালেও ব্যান্ডসংগীতের জন্য আন্দোলন করা লাগবে? কোনো শিল্পকলায় দেয়, কোনোটায় দেয় না। এরা কি একই গভর্নিং বডির আওতায় চলে না?’

সিনা হাসান জানান, কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ২৩ জুন বাংলা ফাইভের একটি কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল। আয়োজন করেছিল ব্রাদার্স অ্যাসোসিয়েশন। প্রথম দিকে মৌখিক অনুমতি দিলেও শনিবার তাদের জানানো হয়, শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে কনসার্টের অনুমতি পাচ্ছে না তারা। আয়োজকদের অভিযোগ, বিদেশি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারের কারণেই নাকি শিল্পকলায় কনসার্টের অনুমতি দেওয়া হয়নি। শেষ মুহূর্তে তাই ভেন্যু বদলে শহরের দিশা টাওয়ার মিলনায়তনে স্থানান্তর করা হয়েছে কনসার্টটি।

এ ঘটনার পর ক্ষোভ প্রকাশ করে সংগীতশিল্পী জয় শাহরিয়ার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ব্যান্ড বাংলা ফাইভের অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়নি কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি। কারণ সেখানে ড্রামস ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। ভাবা যায় এই মানসিকতা? দাবি জানাই, বাংলাদেশের সব সরকারি ও বেসরকারি মিলনায়তনে সব ধরনের গান, সব ধরনের বাদ্যযন্ত্রসহকারে পরিবেশন করতে দিতে হবে।’ পোস্টটি শেয়ার করে সংগীতাঙ্গনের অনেকেই তাঁর দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

ব্যান্ডের কনসার্টের অনুমতি না দেওয়ার কারণ জানিয়ে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের শিল্পকলা একাডেমিতে আধুনিক অডিটরিয়াম করা হয়েছে। এর আগে সেখানে ব্যান্ডের কনসার্ট হয়েছে। শ্রোতারা সে সময় অডিটরিয়ামের চেয়ার ভেঙে ফেলে, যার একেকটার দাম ২৫-২৬ হাজার টাকা। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ এবং নির্বাচিত পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয় অডিটরিয়ামে কনসার্টের অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে তারা চাইলে শিল্পকলার উন্মুক্ত মঞ্চে কনসার্ট করতে পারে।’

কর্তৃপক্ষ যা বলছে

এ ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, ব্যান্ডের কনসার্ট কিংবা ড্রামস বাজানোর ক্ষেত্রে শিল্পকলা একাডেমিতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো কড়াকড়ি আছে কি না? প্রশ্নটি শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘ব্যান্ডসংগীত আর ড্রামস নিষিদ্ধ—এমন উদ্ভট কথাবার্তা কার মাথা থেকে আসে? ড্রামস তো কত অনুষ্ঠানেই আমরা ব্যবহার করি। আমাদের সংগীতকে সমৃদ্ধ করার জন্য বিশ্বের যেকোনো যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব উদ্ভট কথাবার্তা কারা ছড়াচ্ছে জানি না। তবে এটা ঠিক না।’ ২১ জুন বিশ্বসংগীত দিবসে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সেখানে স্পন্দন ব্যান্ডের একটি কনসার্ট আছে বলেও জানালেন লাকী।

শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক কাজী আফতাব উদ্দিন হাবলু বলেন, ‘শিল্পকলায় ব্যান্ডসংগীত কিংবা ড্রামস নিষিদ্ধ হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমি কয়েকবার অনুমতি দিয়েছি, অডিটরিয়ামে ব্যান্ডের প্রোগ্রাম হয়েছে। প্ল্যান করেছি, ব্যান্ডের একটা বড় প্রোগ্রাম করব শিল্পকলায়। নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যে কথা ছড়িয়েছে, সেটা সঠিক নয়।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twenty − eleven =