শুরু হতে চলেছে ক্রিকেটের আরো একটি বিশ্বকাপ

সালেক সুফী

প্রথম পর্ব

আর মাত্র দুই দিন পরে অন্যতম  স্বাগতিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ কানাডার সঙ্গে অনুষ্ঠিত খেলা দিয়ে শুরু হবে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণের আরো একটি বিশ্বকাপ।  ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের রমরমা সময়ে টি২০ বিশ্বকাপের আকর্ষণ সর্বজনীন।  আমাদের  দেশ বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করছে ২০ জাতির এই বিশ্বকাপে।  বাংলাদেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা এখন অন্যসব খেলা এমনকি ফুটবলকে ছাড়িয়ে গেছে।  ভাবতে অবাক লাগে ফুটবল বিশ্বকাপ ঘনিয়ে আসলে বাংলাদেশের শহর-নগরে তো কথাই নেই গ্রামগঞ্জেও উড়তে থাকে বিভিন্ন দেশের বিশেষত ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার পতাকা।  বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ফুটবল কবে খেলবে জানিনা। তবে যেহেতু  আবেগের খেলা ক্রিকেট খেলছে সেই সুবাদে বাংলাদেশের ঘর-বাড়িতে কেন উড়ছে না বাংলাদেশের পতাকা?

২০ দলের এই বিশ্বকাপে ৫ দল নিয়ে গঠিত চারটি গ্ৰুপে প্রাথমিক রাউন্ড খেলবে।  প্রাথমিক রাউন্ড শেষে প্রতিটি গ্রুপ থেকে দুটি করে মোট আটটি দল খেলবে গ্রুপ অফ এইট পর্বে। এরপর সেমি ফাইনাল এবং ফাইনাল। যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবারের বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক।

বরাবরের মতো এবারের বিশ্বকাপেও শিরোপা জয়ের সম্ভাবনাময় দল হিসেবে আলোচিত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের নাম। তবে টি২০ ফরম্যাটে ম্যাচ জয়ের জন্য প্রয়োজন বেশকিছু ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড়ের। পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউ জিল্যান্ডর সেরা চারে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ৪+৩=৭ দলের সঙ্গে শীর্ষ আটে উন্নীত হবার সম্ভাবনা রয়েছে শ্রীলংকা অথবা বাংলাদেশের।

অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত কিন্তু বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটে সকল ফরম্যাটে সেরাদের সেরা।  টি২০ ক্রিকেটকে ভারত আইপিএলের মাধ্যমে বিনোদনের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।  অস্ট্রেলিয়াতেও জাঁকজমকের সঙ্গে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিগব্যাশ ক্রিকেট।  আইপিএল এবং বিগ বাস ক্রিকেটের পথ ধরে পিএসএল, সিপিএল, এসপিএল , বিপিএল অনুষ্ঠিত হয়.

যারা ক্রিকেটের আদি সংস্করণ টেস্ট ক্রিকেট ভালোবাসেন তাদের কাছে টি২০ ক্রিকেট দুধের স্বাধ ঘোলে মেটানোর মতো। তাৎক্ষণিক ক্রিকেটের স্মৃতি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আমি নিজেও ক্রিকেট ভালোবাসি। তবে সব ফরম্যাটের বিশ্বকাপ এলেই দেখতে চেষ্টা করি।

সবে আইপিএল খেলে এসেছে ভারতীয় দল। বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় বেশকিছু খেলোয়াড় আইপিএল খেললেও ভারতের জাতীয় দলের খেলোয়াড় আইপিএল ফাইনাল পর্যন্ত খেলেছে।  আইপিএল শেষে কাল প্রথম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অনুশীলন ম্যাচ খেলার সুযোগ হবে। বাংলাদেশ কিন্তু ইতিমধ্যে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র দলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে কিছুটা মানিয়ে নিয়েছে। অন্যান্য দলগুলো নানাভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। জানিনা সম্পূর্ণ ভিন্ন উইকেট এবং পরিবেশে খেলে ভারত শুরু থেকেই মানিয়ে নিতে পারবে কি না?

অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে রাখছি সব মহাদেশে খেলে তিন ফরম্যাটে বিভিন্ন সময়ে শিরোপা জয়ের কারণে। কিন্তু শীর্ষ ৭টি দলের মধ্যে গুণগত মানের পার্থক্য এতো সামান্য যে যেকোনো দল ছন্দে থেকে শক্তিশালী দলকে হারিয়ে দিতে পারে।

ভারত দলে আছে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলী, হার্দিক পান্ডিয়া, জাসপ্রিত ভুমরা, ঋষভ পান্ত, অজয় জাদেজার মতো ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড়।  ভারত দলে যেমন আছে মারকুটে ব্যাটসম্যান তেমনি আছে পেস, বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্টের স্পিনার।  একমাত্র ফিল্ডিংয়ে হয়ত কিছুটা পিছিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড দলের থেকে। রোহিত এবং বিরাট কোহলির শেষ টি২০ বিশ্বকাপ। বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বযুগের সেরাদের মাঝে স্থান করে নেওয়া রোহিত, বিরাট হয়তো চাইবে গোধূলি বেলাকে রঙিন করে রাখতে। দলের প্রধান শক্তি দুরন্ত টপ অর্ডার, বিধ্বংসী মিডল অর্ডার। কোন দলের ব্যাটিং গভীরতা এতো সমৃদ্ধ না। জাসপ্রিত ভুমরা, মোহাম্মদ সিরাজ যেমন আছে পেস বোলিং নিয়ে তেমনি জাদেজা, কুলদীপ যাদব, আক্সার প্যাটেল, চাহাল থাকবেন বাহারি স্পিনের পসরা সাজিয়ে।  প্রচণ্ড গরমে এবারের আইপিএল খেলার ফলে পরিশ্রান্ত না হয়ে থাকলে ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয় করা সহজ হবে না কোনো দলের।

আমার বর্তমান দেশ অস্ট্রেলিয়া দলকে কাছ থেকে দেখে, ২০ বছর অস্ট্রেলিয়ায় থেকে অস্ট্রেলিয়ানদের পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিচিতি হয়ে আস্থার সঙ্গে বলছি অস্ট্রেলিয়া কখনোই হারার আগে হেরে যায় না। অস্ট্রেলিয়া কিন্তু আস্থা রেখেছে বিশ্বস্ত ডেভিড ওনিজের ওয়ার্নারের উপরে।  এবারের আইপিএল ভালো না গেলেও সেরা দিনে ওয়ার্নার একাই বিপক্ষ দলের আক্রমণ চুরমার করে উড়ন্ত সূচনা দিতে পারে। সঙ্গে আছে টি২০ ক্রিকেটে এই মুহূর্তে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ট্রাভিস হেড। অস্ট্রেলিয়া হয়তো কোনো বিশেষ পরিকল্পনা করেই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট আইকন স্টিভ স্মিথকে দলে নেয়নি। টপ অর্ডার এবং মিডল অর্ডারে মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে মুখ্য ভূমিকা রাখতে হবে। ক্যামেরুন গ্রিন, মার্কাস স্ট্যানিস, জোস্ ইংলিস, টিম ডেভিড কিন্তু টি২০ ক্রিকেট স্পেশালিস্ট। মিচেল স্টার্ক, জশ হেজেলউড, পাট কামিন্স একক বা সম্মিলিতভাবে নিয়মিত ম্যাচ জয় করতে পারে। ফিলডিংয়ে অস্ট্রেলিয়া দল সব সময় এগিয়ে।  যা কিছু দুর্বলতা এডাম জাম্পা,  এস্টন এগার এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে গড়া স্পিন আক্রমণ নিয়ে।  অস্ট্রেলিয়া কিন্তু দূরপাল্লার দৌড়ের কুশলী দল। শুরুতে একটু ধীরস্থির শুরু করে বিসনেস রাউন্ডে এসে দুর্বার হয়ে পরে। অন্যান্য বারের মতো এবারও আমার বাজির ঘোড়া অস্ট্রেলিয়া।

চলবে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

one × 4 =