মাঠে টানটান উত্তেজনা। রংপুর রাইডার তখন বিজয় থেকে ২৬ রান দূরে। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২৬ রান। বল হাতে আসছিলেন কাইল মায়ার্স, যিনি প্রথম ওভারে দিয়েছিলেন মোটে ৩ রান। তার ওপর উইকেটে থিতু ব্যাটার ইফতিখার আহমেদ বা খুশদিল শাহরাও ছিলেন না। কিন্তু সোহানের হাত ধরে রংপুরই হাসল শেষ হাসি হাসলো রংপুর।
ব্যাপক উত্তেজনার মধ্যে শেষ ওভারটায় রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন নুরুল হাসান সোহান। তিনটি ছক্কা আর তিন চারে তিনি সে ওভারে তুলেছেন ৩০ রান। তাতেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালকে হারিয়ে ৩ উইকেটের অবিশ্বাস্য এক জয় তুলে ফেলেছে ২০১৭ বিপিএলের চ্যাম্পিয়নরা।
সোহানের ওই ইনিংসের আগে ১৯৮ রান তাড়া করতে নেমে রংপুর রীতিমতো পথ হারিয়েই ফেলছিল। পাওয়ারপ্লেতে ওভারপ্রতি ছয়ের কাছাকাছি রান, এরপর ১০ ওভার পেরোনোর আগে ৩ উইকেট খুইয়ে বসা… শেষ দশ ওভারে দরকার ছিল ১৩০ এরও বেশি রান, যা ইঙ্গিত দিচ্ছিল রংপুর বুঝি এ যাত্রায় আর পারল না!
তবে সেখান থেকে রংপুরের লড়াই শুরু। ইফতিখার আহমেদ আর খুশদিল শাহর ৫৩ বলে ৯১ রানের জুটি তাদেরকে নিয়ে আসে লক্ষ্যের কাছাকাছি। পরিস্থিতির দাবি মেটাতে গিয়ে ইফতিখার আউট হন শাহিন আফ্রিদির বলে। পরের ওভারে জাহানদাদ খানের শিকার বনে যান খুশদিলও।
সে ওভারে অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ডের কারণে আউট হলেন শেখ মাহেদি হাসানও। তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। ১৯তম ওভার করতে আসা শাহিনকে ফিরতি ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন মাহেদি। তবে তা চলে যায় তার লেগসাইডের দিকে, ক্রিজের ওপরে, যে জায়গাটা আবার সোহানের ক্রিজে ফেরার পথ।
ফলে অবধারিতভাবে তাই হয়েছে যা হওয়ার, সোহানের ধাক্কায় ক্যাচ নিতে পারেননি আফ্রিদি। আবেদন করে বসলে অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড আউট হন মাহেদি, অথচ সেটা যদি আউট হয়ও তাহলেও আউট হওয়ার কথা সোহানের! থার্ড আম্পায়ারের ওই হিসেবের ভুল রক্ষা করে সোহানকে, যিনি পরের ওভারে রংপুরকে এনে দেন অবিশ্বাস্য এক জয়।
ম্যাচটা প্রথমার্ধে রেকর্ড গড়ে ফেলেন তামিম। প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে ৮০০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। তিনি ৪০, তার সঙ্গী নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হন ৪১ রান করে। তবে শেষ দিকে মায়ার্সের ২৯ বলে ৬১ রানের এক ঝোড়ো ইনিংস বরিশালকে নিয়ে যায় ১৯৭ রান পর্যন্ত।
ওহ হ্যাঁ! একটা কীর্তি শান্তও গড়ে ফেলেছিলেন। তানভির ইসলামের বলে অ্যালেক্স হেলসের ক্যাচটা নিয়ে তিনি বনে যান বিপিএলে নিদেনপক্ষে একটা করে রান, উইকেট আর কিপিং ক্যাচ থাকা প্রথম ক্রিকেটার। তামিমের ইতিহাস, সোহানের অদ্ভুত কীর্তির দিনে সব আলো শেষে কেড়ে নেন সোহান।