ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন ১ মিনিট ৭ সেকেন্ড। ঠিকঠাক থিতু হতে পারেনি বাংলাদেশ। এরই মধ্যে জালে বল! শুরুর এই ধাক্কা সামলে ভারতকে চেপে ধরলেন আড়মোড় ভেঙে জেগে ওঠা মুর্শেদ-ফয়সালরা। তাতে সমতার স্বস্তিও এলো দ্বিতীয়ার্ধে। ম্যাচের ভাগ্য গড়াল টাইব্রেকারে। সেখানে দারুণ আশা জাগিয়েও পারল না বাংলাদেশ। খবর বিডিনিউজ
অরুনাচলের গোল্ডেন জুবিলি স্টেডিয়ামে রোববার শ্বাসরুদ্ধকর টাইব্রেকারে ৪-৩ ব্যবধানে জিতেছে ভারত। দুই দলের নির্ধারিত নব্বই মিনিটের খেলা শেষ হয় ১-১ সমতায়।
বাংলাদেশের হয়ে জালের দেখা পান মিঠু চৌধুরী, মুর্শেদ আলি, জয় আহমেদ, মিস করেন নাজমুল হুদা ফয়সাল ও সালাহ উদ্দিন শাহেদ।
ভারতের হয়ে লক্ষ্যভেদ করেন মোহাম্মদ আরবাস, ঋষি সিং, জদ্রিক আব্রানচেস ও অধিনায়ক সামি। মিস করেন রোহেন সিং ।
দ্বিতীয় শিট নিতে আসা রোহেনের শট ঝাঁপিয়ে আটকে বাংলাদেশকে এগিয়ে টাইব্রেকারে এগিয়ে নেন ইসমাইল। কিন্তু পরে টানা দুই শট মিস করে বাংলাদেশ। চতুর্থ শট নিতে আসা ফয়সাল উড়িয়ে মারেন ক্রসবারের উপর দিয়ে। পঞ্চম শট নিতে আসা সালাহ উদ্দিনের দুর্বল শট বাঁম দিকে ঝাঁপিয়ে অনায়াসে আটকান ভারত গোলরক্ষক। তাতে প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ ক্যাটাগরিতে শিরোপা জয়ের আশা গুঁড়িয়ে যায় বাংলাদেশের।
ভরা গ্যালারিকে আনন্দে ভাসিয়ে দ্বিতীয় মিনিটে অভাবনীয় গোলে এগিয়ে যায় ভারত। ডান দিকের লাইনের কাছাকাছি, দূরত্বও প্রায় ৩৫ গজ, সেখান থেকেই সিঙ্গামেইয়ুন সামির ফ্রি কিক হাওয়ায় ভেসে লাফিয়ে ওঠা গোলকিপার ইসমাইল হোসেন মাহিনকে বোকা বানিয়ে জালে জড়ায়। ফ্রি কিকের আগে অবশ্য পোস্ট ছেড়ে একটু বেরিয়ে এসেছিলেন মাহিন।
এগিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের রক্ষণে চাপ দিতে থাকে ভারত। সপ্তদশ মিনিটে রোহেন সিংয়ের হেড আটকান ইসমাইল, তবে গ্লাভসে জমাতে পারেননি। রোহেনের ফিরতি শট বেরিয়ে যায় দূরের পোস্ট দিয়ে।
এরপর একটু গুছিয়ে ওঠা বাংলাদেশ আক্রমণের চেষ্টা করতে থাকে। ২৯তম মিনিটে ফয়সালের শটের গন্তব্য পোস্টের বাইরে। এরপর ফয়সালের কর্নারে মিঠু চৌধুরির হেড এক ডিফেন্ডার কর্নারের বিনিময়ে ক্লিয়ার করেন।
৩৯তম মিনিটে ডান দিক থেকে বাড়ানো সতীর্থের ক্রসে স্পর্শ জোরে হওয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি দূরের পোস্টে ভালো জায়গায় থাকা সুমন সরেন। একটু পর মুর্শেদের ক্রসে মিঠুর হেড পোস্ট কাপাঁনোর পর আরেকজন ফিরতি হেড করার আগে ফাউলের বাঁশি বাজান রেফারি। এ নিয়ে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা জানাতে থাকেন অসন্তোষ।
৪৩তম মিনিটে ফয়সালের গোলমুখে বাড়ানো আড়াআড়ি ক্রসে টোকা দেওয়া থেকে অনেক দূরে ছিলেন রিফাত। তাতে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ার্ধে সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। কিন্তু বক্সে গিয়ে কার্যকরী হতে পারছিল না কেউ। ৫৬তম মিনিটে ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে দুর্বল শটে গোলকিপারের হাতে বল তুলে দেন ফয়সাল। ৬০তম মিনিটে আরও একবার হতাশ হয় বাংলাদেশ। বক্সের বেশ বাইরে থেকে মুর্শেদের শট লাফিয়ে আঙুলের টোকায় কোনোমতে কর্নার করে দেন।
এই কর্নারই হয়ে ওঠে সমতায় ফেরার উপলক্ষ্য। বক্সে জটলার ভেতর থেকে কয়েক পা ঘুরে পাওয়া বলে বদলি জয় আহমেদের শট প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে জালে জড়ায়। এবারের আসরে এটি ভারতের প্রথম গোল হজম!
৮১তম মুর্শেদের নিচু শটে গতি ছিল না, সহজেই আটকান ভারত গোলকিপার। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে ভারত প্রচণ্ড চাপ দেয় বাংলাদেশের রক্ষণে। প্রথম মিনিটে রোহেনের শট ইসমাইল আটকানোর পর এক ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করেন। এরপর দূরপাল্লার একটি শট ফিস্ট করে ফেরান ইসমাইল।
শেষ মুহূর্তে ভারতের আক্রমণ আটকাতে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে বিপদ বাড়িয়েছিলেন ইসমাইল। স্লাইডে বল দূরে ঠেলে তিনি পোস্টে ফেরার আগেই ভারতের এক খেলোয়াড় শট নেন, গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দলের ত্রাতা মিঠু। তাতে ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ফয়সাল ও সালাহ উদ্দিনের মিসে হারের হতাশা সঙ্গী হয় বাংলাদেশের।