ষাট বসন্তে তৌকীর আহমেদ

বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী তিনি। মঞ্চ ও টেলিভিশনে তার অভিনয় মুগ্ধ করেছে তিন দশকের দর্শকদের। এক দশক ধরে তিনি নির্মাতা হিসেবেও নির্মাণের মুন্সিয়ানার প্রমাণ রেখেছেন। নাটক নির্মাণের পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণেও তিনি পেয়েছেন সাফল্য। বলা হচ্ছে, খ্যাতিমান অভিনেতা ও পরিচালক তৌকীর আহমেদের কথা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই নন্দিত তারকা আজ স্পর্শ করলেন জীবনের ৬০তম বসন্ত। ১৯৬৫ সালের এই দিনে (৫ মার্চ) জন্মগ্রহণ করেন তৌকীর। তিনি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি সম্পন্ন করেন। তারপর তিনি স্থাপত্যে স্নাতক অর্জন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল এবং প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে।

স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনা করলেও অভিনয় ও নির্মাণের স্বপ্ন ছিল তৌকীরের হৃদয়ের গহিনে। তাই নিজেকে তিনি ছাত্রাবস্থাতেই তৈরি করেছিলেন মঞ্চে। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে পড়াকালীন তিনি মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন। এরপর ১৯৯৫ সালে লন্ডনের রয়্যাল কোর্ট থিয়েটার থেকে মঞ্চনাটক পরিচালনার প্রশিক্ষণ নেন এবং ২০০২ সালে নিউইয়র্ক ফিল্ম একাডেমি থেকে চলচ্চিত্রে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন।

আশির দশকের মাঝামাঝিতে বিটিভিতে প্রচারিত নাটকে রোমান্টিক চরিত্রের শীর্ষ অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন তৌকীর আহমেদ।

১৯৯৬ সালে তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক ‘নদীর নাম মধুমতী’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরবর্তী সময়ে তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত দেশ বিভাগের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘চিত্রা নদীর পারে’ (১৯৯৯) এবং সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচিত বিখ্যাত উপন্যাস লালসালু অবলম্বনে নির্মিত ‘লালসালু’ (২০০১) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এ ছাড়া তিনি নিজের পরিচালিত ‘জয়যাত্রা’ ছবিতে ট্রাক ড্রাইভারের চরিত্রে অভিনয় করেন।

২০০০ সালের পরপর অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি নাট্য ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন। চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ঘটে ২০০৪ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘জয়যাত্রা’ পরিচালনার মাধ্যমে। এই চলচ্চিত্র পরিচালনার মাধ্যমে তিনি ২০০৮ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ প্রযোজক, শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন।

২০০৬ সালে মুক্তি পায় তার চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় চলচ্চিত্র ‘রূপকথার গল্প’। চলচ্চিত্রটি ২০০৮ সালে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং দর্শকদের বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। ২০০৭ সালে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘দারুচিনি দ্বীপ’। রিয়াজ অভিনীত চলচ্চিত্রটি ২০০৮ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সাতটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন। দীর্ঘ আট বছর বিরতির পর ২০১৬ সালে মুক্তি পায় শহীদুজ্জামান সেলিম, মোশাররফ করিম ও নিপুণকে নিয়ে তৌকীরের চতুর্থ চলচ্চিত্র ‘অজ্ঞাতনামা’।

এর পরের ছবি ‘হালদা’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১৭ সালে। তার সর্বশেষ পরিচালনা ‘ফাগুন হাওয়ায়’ একাধিক ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

11 + eight =