সম্ভ্রম রক্ষার ম্যাচে দাপুটে জয় যখন প্রশ্ন রেখে যায়

সালেক সুফী

টি২০ বিশ্বকাপ খেলার প্রস্তুতি মিশনের সিরিজে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ বিসর্জন দিরে মান সম্ভ্রম ইজ্জত সম্মান সব খুইয়ে  বসেছিল টিম  টাইগার্স। কাল শেষ ম্যাচটি নিতান্তই মুখ রক্ষার।  আর সেই খেলায় দাপুটে অনায়েসে ১০ উইকেটে জয়ের পরেও প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক সৌহার্দ্যের ম্যাচ ছিল নাতো।  সবাই জানে রুহেল নামের ধেয়ে আসা প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের মহাতঙ্কে উপকূলবাসী অসহায় জনগণের মতো হয়তো আতংকে আছে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার্স।  অনেকটা ঠিক তেমনি যেন আইসিসি পরিবারের সহযোগী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মিশ্র দলের কাছে সিরিজ হারিয়ে চুনকামের আতঙ্কে ছিল টিম টাইগার্স।

দেয়ালে পিঠ থেকে যাওয়া বিকল্পহীন অবস্থানে থেকে দাপুটে অথচ সান্তনার জয়েও অনুরাগীদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ দূর হয়েছে বলা যাবে না। তবে দেশ বিদেশে প্রবল সমালোচনার মুখে থাকা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এই জয় প্রথম দুই ম্যাচে পরাজয়ের অজুহাত দেওয়ার উপকরণ রেখে গেলো। বাংলাদেশে একটি কথা বলা হয় ‘একি কলিকাল, বিড়াল চাটে বাঘের গাল’। দুই ম্যাচ হেরে বাংলাদেশের অসহায় অবস্থা দেখে সেটি মনে হয়েছিল। প্রশ্ন জাগে কি এমন পরিস্থিতি বদলালো যে ১০ উইকেটের অনায়েসে জয় এসে গেলো?

কাল একই মাঠ একই পরিবেশে সিরিজের শেষ ম্যাচে টস জয়ের পর থেকেই দলের শরীরী ভাষা ভিন্ন দেখা গিয়েছিল। আগ্রাসী বোলিং আর  তুখোড় ফিল্ডিং করে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র দলকে ১০৪/৯ মামুলি স্কোরে সীমিত রেখেছিল বাংলাদেশ। প্রথম দুই খেলায় বিবর্ণ মুস্তাফিজুর রহমান দারুন ভাবে গর্জে উঠে (১০/৬) একই বিদ্ধস্ত করে যুক্তরাষ্ট্র দলকে।  জবাবে সৌম্য সরকারের (৪৩*)  ব্যাট করতে নেমে তরুণ তানজীদ তামিম  (৫৮*) ৮.২ ওভার দুই বলে ১০ উইকেটে ম্যাচ জয় করে। এই জয় হতাশাগ্রস্ত বাংলাদেশ দলকে নিঃসন্দেহে বিশ্বকাপে ভালো কিছু করার রসদ যোগাবে।  কিন্তু একই সংগে প্রশ্ন যোগাবে খেলাটি নিয়ে অন্তরালে কোন দূতিয়ালি হয়নি তো?

কাল কিন্তু টস হেরে ব্যাটিং করা যুক্তরাষ্ট্র দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের জুটি ঝড়ো ব্যাটিং করে মাত্র ৫ ওভারে ৪৬ রানে পৌঁছে গেলে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ ঘনিয়ে আসছিল। এনড্রেস গৌসকে ফিরিয়ে সূচনা করলো সাকিব আল হাসান। পরের ওভারেই নিজের মূর্তিতে সক্রিয় হয়ে ওঠা মুস্তাফিজ দুটি উইকেট নিয়ে চেপে ধরলো যুক্তরাষ্ট্র দলকে।  রক্তের স্বাদ পেয়ে দুর্দান্ত আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ বাহিনী। একপ্রান্তে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের কিপ্টে (৪-১-৭-১) ভেলকি অন্যদিকে কাটার মাস্টারের আগ্রাসী বোলিংয়ের মুখে তাসের ঘরের মতো ঝরে পড়েছে স্বাগতিক দল।  এমনটি হওয়ার কথা ছিলো প্রথম দুই ম্যাচে। হয়নি কেন সেটি নিয়ে অবসর সময়ে গবেষণা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যনরত মেধাবী বাংলাদেশি তরুণ তরুণীরা।

বিকশিত হতে থাকা তরুণ তানজিদ তামিম  (৪২ বলে পাঁচ  চার, তিন ছয়ে ৫৮*) এবং সৌম্য সরকার (২৮ বলে চার  চার, দুই ছয়ে ৪৩*) ইনিংস খেলে যে বিক্রম দেখলেও তার ৫০% দেখতে পারলে আগের দুটো ম্যাচে লজ্জাজনক পরাজয় হতো না। ১-২  ম্যাচে সিরিজ হারটি বাংলাদেশের জন্য ওয়েক আপ কল হয়ে বিবেচিত হোক সেই আসা, সেই প্রার্থনা টিম টাইগার্সদের জন্য। এই জয়ে উল্লসিত হবার কিছু নেই। এমনটি সব ম্যাচে না হওয়াটাই ছিল বিস্ময়কর।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nine − six =