ইট ভাটার কারণে ১৩ কোটি মেট্রিক টন চাষযোগ্য উর্বব মাটি হারিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ্য করে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি বলেন, আগামী ১০০ দিনের কর্মসূচির আওতায় দেশের ৫০০টি অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে অভযিান পরচিালনা করা হব। তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে দূষণকারি ইট ভাটা চিহ্নিত করা হবে। পাশাপাশি ইটের বদলে সরকারি কাজে শতভাগ ব্লক ব্যবহার করে নির্মাণ কাজ করার জন্য ২০২৮ সাল র্পযন্ত নতুন সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে। মন্ত্রী জানান বর্তমানে চালু কারখানাগুলো থেকে আড়াইশ থেকে তিনশ কোটি ইটের সমপরিমাণ ব্লক সরবরাহ করা যাবে। প্রয়োজনে তা ১০০০ কোটিতে উন্নীত করা যাবে। ফলে নির্মাণ কাজে কোনো ব্যাত্যয় হবে না।
প্রথম ১০০ কর্মদিনের অগ্রাধিকার ঘোষণা উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন উপরের কথাগুলো বলেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি। তিনি জানান, প্রায় এক হাজার অবৈধ ইটভাটা রয়েছে, আগামী ১০০ দিনে ৫০০ অবৈধ ইটভাটা ভেঙে ফেলা হবে। বায়ু দূষণের মাত্রা বিপদসীমার উপরে গেলে পরিবেশ অধিদপ্তর নাগরিকদের জন্য অ্যালার্ট চালু করবে। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ১০০ দিনের কর্মসূচি তুলে ধরেন সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ । অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব উন্নয়ন ড. ফাহমিদা খাতুন, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ। জানানো হয় ১০০ দিনের এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু হবে ২৫ জানুয়ারি আর শেষ হবে ৩০ জুন। তবে এই কর্মসূচিগুলো অব্যাহত থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জলবায়ু খাতে অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা তার অগ্রাধিকার। আর আন্তর্জাতিক লস এন্ড ড্যামেজ তহবিলের অর্থ পাওয়ার জন্য কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের মতো প্রথম অর্থ পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। অভিযোজন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ২০৫০ সাল পর্যন্ত বার্ষিক ৮ বিলিয়ন ডলার দরকার হবে। বাংলাদেশ এর বিপরীতে বাজেটে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্ধ দিয়েছে। বার্ষিক ঘাটতি ৪.৫ বিলিয়ন ডলার। মন্ত্রী জানান, তারা আগামী ৫ বছরের মধ্যে জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারিত্ব কর্মসূচির আওতায় ১৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি মনে করেন এই পরিকল্পনা উচ্চাভিলাষী, তবে অর্জন অসম্ভব নয়।
মন্ত্রী বলেন, বায়ুদূষণ, প্লাস্টিক দূষণ, পাহাড় কাটা ও জলাধার ভরাট রোধসহ পরিবেশ সুশাসনের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এ কর্মপরিকল্পনায় জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি দ্রুত সাড়া প্রদানে মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সদিচ্ছা এবং অঙ্গীকারের প্রতিফলন হবে। এ জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন সংস্থাগুলোর জনবল কাঠামো হালনাগাদের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, একবার ব্যবহার উপযোগি (এসইউপির) উৎপাদন ও ব্যবহার কমিয়ে আনতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি পণ্য প্রস্তুতকারক ও আমদানিকারকদের পণ্য থেকে সৃষ্ট বর্জ্য সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বর্ধিত প্রযোজক জবাবদিহিতার (ইপিআর) খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। এছাড়া শিল্প কারখানার ইটিপি কার্যকরভাবে চালু রাখতে স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইন মনিটরিং চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বায়ু ও পানি দূষণ কমানোর জন্য প্রযুক্তিগত মনিটরি জোরদার করা হবে। পাহাড়গুলোর একটি ডিজিটাল ম্যাপ নিশ্চিত করা হবে। ড্রোন ব্যবহারে মাধ্যমে কারা নদী দূষণ করছে তা চিহ্নিত করা হবে। তিনি বলেন, পরিবেশ আইন ও বিধিবিধান ভঙ্গে জন্য জরিমানার যে পরিমাণ আছে তা যথাযথ নয়। এটা বৃদ্ধি করা হবে যাতে আইন ভঙ্গের আর্থিক দায় অনিয়ম থেকে আর্থিক লাভের চেয়ে বেশি হয়। তিনি জানান, গ্রিন তালিকায় থাকার শিল্পগুলোকে পরিবেশ ছাড়পত্র নিতে হবে না। অনলাইনে আবেদন করেন নির্ধারিত সময় ফি দিয়ে এই সেবা পাবেন। তবে বোতলজাত পানি উৎপাদনকারী শিল্পকে এই তালিকায়র বাইরে এনে কমলা তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কেননা তারা ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করে পরিবেশের ক্ষতি করছে।
১০০ কর্মদিবসে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকার
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৪ এ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও পরিবেশ সুরক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন এবং এ মন্ত্রণালয়ের বর্ণিত চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার নির্ধারণ ও যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণকল্পে ১০০ কর্মদিবসের কর্মপরিকল্পনা স্থির করা হয়েছে। বায়ুদূষণ, প্লাস্টিক দূষণ, পাহাড় কর্তন ও জলাধার ভরাট রোধসহ পরিবেশ সুশাসনের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এ কর্মপরিকল্পনা জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতি দ্রুত সাড়া প্রদানে মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সদিচ্ছা এবং অঙ্গীকারের প্রতিফলন হবে। এ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বর্ণিত কাজগুলো বর্তমান সরকারের ৫ বছরের কর্মকাণ্ডের একটি শক্তিশালী সূচনাসহ পুরো মেয়াদে কাজ করার একটি কাঠামো তৈরি করবে।
প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষমাত্রা:
১. প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি।
২. সহযোগী সংস্থা, এনজিও, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করা হবে।
৩. ‘ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন’ থিম অর্ন্তভুক্ত করে অর্থ ও রাজস্ব বোর্ডে প্রস্তাব প্রেরণ।
৪. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ:
১. সরকারি নির্মাণে শতভাগ ব্লক ব্যবহার করা।
২. বায়ুদূষণের উৎস চিহ্নিত করে নিয়ন্ত্রণ।
৩. ৫০০ ইট ভাটা উচ্ছেদ করা।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা:
১. জাতীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ফ্রেমওয়ার্ক গ্রহণ।
২. একবার ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিকের তালিকা তৈরি; উৎপাদন ও ব্যবহার কমাতে কর্মপরিকল্পনা।
৩. শিল্পকারখানার ইটিপি অনলাইনে মনিটরিং করা।
৪. সচিবালয়কে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক মুক্ত ঘোষণা করা।
পরিবেশ, বন, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ:
১. পাঠ্যপুস্তকে সবুজায়নের পরিকল্পনা।
২. ম্যাপিং-এর উদ্যোগ।
৩. দূষণকারীর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের হার নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন।
৪. শিল্প প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পের কার্যক্রমের ব্যাপ্তি ও সৃষ্ট সম্ভাব্য দূষণের পরিধি, মাত্রা এবং পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের ওপর সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনা করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের ক্যাটাগরি হালনাগাদকরণের উদ্যোগ গ্রহণ।
৫. জবরদখলকৃত ৫০ হাজার একর বনভূমির উচ্ছেদ প্রস্তাব প্রস্তুতকরণ এবং জেলা প্রশাসনের নিকট প্রেরণ। ইতোপূর্বে প্রেরিত ১ লাখ ৮৭ হাজার একর জবরদখলকৃত বনভূমি উদ্ধারের প্রস্তাব বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ।
৬. পরিবেশ দূষণকারী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের পুনর্নিধারিত হার/পরিমাণ বাস্তবায়ন।
৭. পরিবেশ, বন, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উচ্চ আদালতের রায় যথাযথ বাস্তবায়নে পরিবীক্ষণ করা।
জলবায়ু পরিবর্তন
১. অর্থবহ ও কার্যকর সহযোগিতার মাধ্যমে পরিবেশ ও জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবেলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ চূড়ান্তকরণের কার্যক্রম গ্রহণ।
২. ইউএনএফসিসিসি এর উদ্যাগে এবং পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক আগামী এপ্রিল ২০২৪ এ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্লান (এনএপি) এক্সপো আয়োজনের লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ।
৩. মুজিব ক্লামেন্ট প্রোসপেরিটি প্লান (এমসিপিপি) ২০২২-২০৪১ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কর্মকৌশল প্রণয়ন।
৪. জলবায়ু পরিবর্তমন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় প্রস্তাবিত প্রস্তাবসমূহ যাচাই বাছাইয়ের নিমিত্ত গাইডলাইন প্রণয়ন।
৫. আন্তর্জাতিক লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড হতে অর্থায়ন প্রাপ্তির লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ।