অভিযানের নামে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনেছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। তাদের দাবি, নানা কারণে সারাদেশে আটশ’র বেশি রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়েছে। সিলগালা করা হয়েছে ২৩০টির মতো।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনায় সৃষ্ট সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক অভিযানের নামে রেস্তোরাঁ সেক্টরে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টির প্রতিবাদে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ আনা হয়।
সংগঠনের মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, অভিযানের সুযোগে বিভিন্ন সংস্থার লোকজন এখন চাঁদাবাজি শুরু করেছে। কিছুদিন আগে পুলিশের এসআই পর্যন্ত রেস্টুরেন্টে এসে চাঁদাবাজি করেছে। যার যেখানে সুযোগ আছে সে সেখানে চাঁদাবাজি করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে রাজউক। তাদের ব্যর্থতার জন্য আজ সারা ঢাকা শহর জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। কিন্তু তাদের নিয়ে কেউ কোনো কথা বলে না। তাদের প্রত্যেকটি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা উচিত।
বন্ধ হয়ে যাওয়া রেস্তোরাঁ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব বলেন, বর্তমানে আমাদের ৮০০ রেস্তোরাঁ বন্ধ আছে। এরমধ্যে ২২০-২৩০টি সরকারিভাবে সিলগালা করা হয়েছে। সন্ত্রাসী কায়দায় আমাদের রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই এগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
২৯ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনে আগুন লাগে। এতে ৪৬ জন নিহত হন। এছাড়াও ওই ভবন থেকে ৭০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরে গত ১ মার্চ রাতে পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করে। মামলায় অসংখ্য শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাজউকের এফ ১ ও এফ ২ এর নামে যে নৈরাজ্য চলছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ আমরা জানি কমার্শিয়াল স্পেসে রেস্তোরাঁ ব্যবসা করা যাবে। রাজউকের ২০২২ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ড্যাবের মাস্টারপ্লানেও ব্যবসায়ীদের ভবন মিশ্র ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাজউক যে উদ্দেশ্যে ভবন নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিল সেভাবে যদি ভবনটি ব্যবহার না হয় তাহলে আইন অনুযায়ী কমপক্ষে ১২ মাসের সময় দিয়ে নোটিশ প্রদান করতে হবে ভবন মালিক, ব্যবহারকারী বা রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীকে। কিন্তু রাজউক বর্তমানে যা করছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি।
এ সময় রেস্তোরাঁ শিল্পের সামগ্রিক সংকট নিরসনে বিষেশজ্ঞদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্সে গঠনের আহ্বান জানান ইমরান হাসান। তিনি বলেন, আমরা টাস্কফোর্সের কথা বলেছি। তারা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অতিঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করুক। বন্ধ করে দেয়া কোনো সমাধান না। এ সময় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের ওপর অন্যায় চাঁদাবাজি ও হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানান তিনি। অন্যথায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল রেস্তোরাঁ বন্ধের হুঁশিয়ারি জানান।
ইমরান হাসান বলেন, রমজান মাসে সিলগালা নাটক বন্ধ করুন। অন্যথায় আগামী বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবো। তাও দাবি মানা না হলে এক দিনের জন্য সারা বাংলাদেশে রেস্তোরাঁগুলো বন্ধের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সব রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গনী, সহ-সভাপতি শাহ সুলতান খোকন, যুগ্ম মহাসচিব ফিরোজ আলম সুমনসহ অন্যরা।