দ্রব্যমূল্য, সুশাসন, খাদ্যনিরাপত্তা এবং অর্থ ব্যবস্থাপনা। এই চারটি বিষয়কে নতুন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। এডিটরস গিল্ড আয়োজিত গোল টেবিল আলোচনায় তারা বলেন, খাদ্য ও পানি নিরাপত্তাকে দূরবর্তী বিপদ মনে হলেও এটির ব্যবস্থাপনা এখনই করতে হবে। সেই সঙ্গে কূটনৈতিক ভারসাম্য এবং রাজনৈতিক সমন্বয়কেও দেখতে হবে গুরুত্বের সাথে।
শনিবার রাজধানীতে সম্পাদকদের শীর্ষ সংগঠন এডিটরস গিল্ডের ‘নির্বাচনোত্তর সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনার আয়োজস করে। আলোচনা সঞ্চালনা করেন এডিটরস গিল্ডের সভাপতি একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু। নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক হয়েছে কি না তা নিয়ে আলোচনা করেন গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেওয়া বিশিষ্টজনরা।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, এটাকে নির্বাচন ঠিকমতো বলা যাবে না। আপনারা যদি অবাধ দাবি করেন… এতে বাধা দেওয়া হয়েছে। অংশগ্রহণমূলক নয় আংশিক অংশগ্রহণমূলক হয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রে নির্বাহী পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলেন, এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের মতো। দেশের জনগণের অংশ নেওয়ার চেয়ে বিদেশিরা কী বলছে সেটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশকে স্বাগত জানালে খুশি হবার কিছু নেই বলেও মত দেন তিনি।
ফারুক ফয়সাল বলেন, রাষ্ট্রদূতরা যে লাইন দিয়েছে দেখা করার জন্য এটা নিয়ে উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। এটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, বিরোধী দল নাই সংসদে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জায়গায় ঘাটতি আছে। কিন্তু যারা ভোট দিতে গেছে তারা ভোট দিতে পেরেছে। গ্রহণযোগ্য হয়েছে, অংশগ্রহণমূলক না হলেও। কারণ, যারা ভোট দিতে গেছে তারা ভোট দিতে পেরেছে।
আলোচকদের কেউ কেউ মনে করেন খুবই অল্পসংখ্য মানুষের ভোট পেয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তবে সরকারই যতো শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসুক তাদের মূল চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, প্রত্যেকটি দলের একটি ইশতেহার আছে। আওয়ামী লীগও দিয়েছে। চমৎকার ডকুমেন্ট থাকার কথা। সরকার সেটার ভিত্তিতে চলে। সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।
মানবাধিকারকর্মী ও নিজেরা করির সমন্বয় খুশি কবীর বলেন, সরকার জানে তাদের কোন খাতে কী করা উচিত। সরকারের অন্য অ্যাজেন্ডা প্রাধান্য পাচ্ছে নাকি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কীভাবে করা হবে কেন করা হবে-এই জিনিসটা পরিষ্কার করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে কেবিনেট হচ্ছে কোর অব দ্য গভর্নমেন্ট। কিন্তু আমাদের এখানে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছে ইক্যুয়াল অ্যামাংস দ্যা ইকুয়াল। ফার্স্ট অ্যামাংস দ্যা ইকুয়ালস।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোরগেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক নাভিন মুরশিদ বলেন, আমাদের নির্বাচন করার পছন্দ করলো সেটা নিয়ে আমরা কতখানি কৃতজ্ঞ থাকবো এবং সেই কৃতজ্ঞতার সাথে দুর্বলতা কোথায় আসবে সেটা বুঝতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান বলেন, নির্বাচন নিয়ে যতো দ্বিমত থাকুক দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর ব্যাংক। দ্বিতীয়ত, ভূরাজনৈতিক চ্যালঞ্জ। এই সরকারের সামনে শক্তিশালী বিরোধী দল নেই তাহলে গণমাধ্যমের কথা সরকারকে শুনতে হবে। গণমাধ্যমকেও সচেতন হতে হবে।
গোল টেবিল আলোচনার সঞ্চালক এডিটরস গিল্ডের সবঅপতি মোজাম্মেল বাবু বলেন, খাদ্য নিরাপত্তায় যদি আঘাত আসে তাহলে রাজনীতি; এবং রাজনীতি টলায়মান হলে ভূ-রাজনীতির দুর্বল সারফেস আউট করবে। বাংলাদেশের যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা বিপদে পড়বে। বাংলাদেশের পরিবেশ, তার সাথে জড়িত কৃষি, পানি এ বিষয়গুলো স্বল্প মেয়াদে না হলেও মধ্য মেয়াদে মোকাবেলা করতে হবে।
একাত্তর টিভি