সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

সালেক সুফী

কাল কলকাতা ইডেন গার্ডেন্স উইকেটে পেস, বাউন্স, টার্ন সবই ছিল। সাধারণত বিশ্বকাপের মত আসরে সেমি ফাইনাল বা ফাইনালে স্পোর্টিং উইকেট আশা করা অসঙ্গত না। যাহোক টস জিতে এই উইকেটে মেঘে ঢাকা আকাশের নিচে হয়তো বৃষ্টি সম্ভবনা মাথায় রেখে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা।  সহায়ক উইকেট এবং পরিবেশ পেয়ে তুখোড় পেসার মিচেল স্টার্ক এবং জোশ হ্যাজেলউড শুরুতেই চেপে ধরে প্রোটিয়ানদের।  ৪/২৪ অবস্থান থেকে ডেভিড মিলার (১০১) এবং হেনরিক ক্লাসেনের (৪৭) লড়াকু পার্টনারশিপে ভর করে ২১২ করতে পারে দক্ষিন আফ্রিকা। জবাবে প্রথম উইকেট ডেভিড ওয়ার্নার (২৯) এবং ট্রাভিস হেডের (৬২) ৬ ওভারে  ৬০ রানের  উড়ন্ত পার্টনারশিপের পর অস্ট্রেলিয়ার সহজ জয় অনুমিত ছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার ভালো বোলিং ম্যাচটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা মুখর করে তুলে। জয় পেতে স্নায়ু ক্ষয়ী অস্ট্রেলিয়াকে ৪৭.২ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ২১৫/৭ করে ১৮ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।  আবারো আশা ভঙ্গ হয় টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুন খেলা দক্ষিণ আফ্রিকার। ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটের ব্রাজিল ফাইনালে খেলবে টুর্নামেন্টে উড়তে থাকা স্বাগতিক দল ভারতের বিরুদ্ধে।

অনেকেই প্রশ্ন করবেন ফর্মহীন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা কেন নিজে বিশ্রাম নিয়ে ফর্মে থাকা রেজা হেনড্রিক্সকে সুযোগ করে দিলেন না সেমি ফাইনাল খেলার। তবে বৃষ্টি বাধায় খেলা সংক্ষিপ্ত হবার সম্ভাবনা মাথায় রেখে টস জয় করে মেঘলা আকাশ এবং পেসি বাউন্সি উইকেটে ব্যাটিং করার ঝুঁকি নিয়েছিল টেম্বা বাভুমা। আর শুরুতেই সহায়ক উইকেটে মিচেল স্টার্ক (৩/৩৪) এবং জস হেজেলউড (২/১২) চার চারটি উইকেট তুলে নিয়ে (৪/২৪) ভূমিকম্প সৃষ্টি করে। তুখোড় বোলিংয়ের পাশাপাশি ডেভিড ওয়ার্নার এবং মার্নাস লেবুসাঙ্গের ফিল্ডিং ছিল দেখার মত।  শুধুমাত্র ফিল্ডিং করে এই দুইজন ২৫-৩০ রান বাঁচিয়েছে কাল। দেয়ালে পিঠ রেখে প্রতি আক্রমণ করে ডেভিড মিলার (১০১) এবং হেনরিক ক্লাসেন (৪৭)। ২১২ রানে শেষ হয় দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস।  উইকেটের সহায়তা পেয়ে সস্টার্ক , হেজেলউড, কামিন্স দক্ষিণ আফ্রিকাকে কোনঠাসা করে রেখেছিলো কাল এমনি এক ম্যাচে ডেভিড মিলারের উঁচু মানের সাহসী ইনিংস মাইল ফলক হিসাবে বিবেচিত হবে।

রান তাড়া করতে এসে উড়ন্ত সূচনা করে ডেভিড ওয়ার্নার (২৯) এবং ট্রাভিস হেড (৬২) । মাত্র ৬.১ ওভারে ৬০ রান সংগ্রহীত হওয়ায় অনেকেই ভেবেছিলেন অনায়েসে জয় পাবে অস্ট্রেলিয়া।  কিন্তু ওয়ার্নার ফিরে যাবার পর উইকেটের টার্ন, বাউন্স কাজে লাগিয়ে একের পর এক উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা মুখর করে তুলে। এরই মাঝে ট্রাভিস হেড (৬২) এবং স্টিভ স্মিথের (৩০) তৃতীয় উইকেট জুটি ৪৫ রান যোগ করে সমীকরণ কিছুটা সহজ করে ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার নিয়মিত উইকেট নেয়ার পাশাপাশি ছোট ছোট কিছু কার্যকরী পার্টনারশিপ গড়ে তুলে অস্ট্রেলিয়া। কিছু ক্যাচ ফস্কে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার। লড়াই করেও ৩ উইকেটে হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। আবারো ভঙ্গ হয় প্রোটিনদের বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন। গ্রুপ পর্বে প্রথম দুই ম্যাচে পরাজয়ের পর নিজেদের দারুন ভাবে ফিরে পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বলতেই হবে বিশ্বকাপের সেরা দুই দল ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হচ্ছে বিশ্বকাপ ফাইনালে। ১৯ নভেম্বর  গুজরাটের আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে নির্ধারিত হবে অস্ট্রেলিয়া রেকর্ড ছয় বার না ভারত তৃতীয় বার বিশ্ব কাপ জয়ী হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × three =