সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতে সিরিজ জয় বাংলাদেশের

ঢাকার মীরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন উইকেটে কাল ৮ রানে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ টি ২০ সিরিজের প্রথম দুটি জিতে একম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। একই মাঠে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ৭ উইকেটের বিশাল ব্যাবধানে। কাল টস হেরে বাংলাদেশ প্রথম ব্যাটিং করে। উইকেটের দৈত্য দানবরা বাংলাদেশকে প্রায় গিলে ফেলেছিলো। ৫.৫ ওভারে ২৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুকছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে জাকের আলী (৫৫) আর মাহেদী হাসান (৩৩) ৫ম উইকেট জুটিতে ৫৩ রান যোগ করলে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এক প্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করে জাকের। বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ১৩৩। পাকিস্তান জবাবে আবারো প্রথম ম্যাচের মতোই আতঙ্কগ্রস্ত থাকায় একপর্যায়ে ১১.৫ ওভারে ৪৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বিশাল ব্যাবধানে ম্যাচ হারার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। শেষদিকে ফাহিম আশরাফ (৫১), আব্বাস আফিদি (১৯) এবং আহমেদ ড্যানিয়েল (১৭) রান করে পাকিস্তানকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলো। বাংলাদেশ কয়েকটি ক্যাচ ফেলে দিয়ে পরিস্থিতি নিজেদের জন্য জটিল করেছিল। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে কাটার মাষ্টার মুস্তাফিজ শেষ উইকেট তুলে নিয়ে স্বস্তির জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। পর পর দুই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে।

কাল দুটি পরিবর্তন নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। ওয়ার্ক লোড নিয়ন্ত্রণের জন্য তাসকিনকে বিশ্রাম দিয়ে শরিফুলকে আনা হয়। আর তানজিদ তামিমকে বিশ্রাম দিয়ে সুযোগ দেয়া হয় মোহাম্মদ নাঈমকে। প্রথম খেলায় পাকিস্তান ব্যাটিং যেভাবে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল ঠিক সেভাবেই শুরু করে বাংলাদেশ। নাঈম (৩) , ইমন  (১৩), লিটন (৮) আত্মাহুতি দেয়ার পর রান আউটে কাটা পরে তাওহীদ হৃদয় (০) । ২৮ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ ইনিংস স্বল্প রানে গুটিয়ে যাবার শঙ্কা ডেকে আনে। সৌভাগ্য জাকের আলী আর মাহেদী হাসান জুটি সাহসের সঙ্গে লড়াই করে বাংলাদেশকে অনেকটাই বিপদ মুক্ত করে। কিন্তু দলের ৮১ রানে ৫ম উইকেট পড়ার পর আবারো দ্রুত ৬,৭ ও ৮ নম্বর উইকেটের পতন ঘটে। একা লড়াই করে দলের স্কোর ১৩৩ নিয়ে যায় জাকের আলী ৪৮ বলে ১ চার এবং ৫ ছক্কায় ৫৫ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলে। পাকিস্তানের হয়ে ২টি করে উইকেট তুলে নেয় সালমান মির্জা (২/১৭), আহমেদ ড্যানিয়েল (২/২৩) এবং আব্বাস আফ্রিদি (২/৩৭)।

১৩৩ এমন এক স্কোর যা উইকেট এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় ম্যাচ জয়ের জন্য হয়ত পর্যাপ্ত ছিল। বিশেষত পাকিস্তান ব্যাটসম্যানদের লক্ষ্য তাড়া করে আতঙ্কগ্রস্ত মনে হয়েছে। শুরুতেই সায়ুম আয়ুব রান আউটে কাটা পড়ে। শরিফুল, তানজিম, মাহেদী হাসানের সাঁড়াশি আক্রমণে দিশেহারা মনে হয় পাকিস্তান ব্যাটসম্যানদের। ফকর জামান (৮), মোহাম্মদ হারিস (০), সালমান আগা (৯), হাসান নাওয়াজ (০),  মোহাম্মদ নাওয়াজ (০) ফিরে গেলে একপর্যায়ে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ৭/৪৭। এই সময় ফাহিম আশরাফ (৫১) শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের সাথী করে লড়াই করে পাকিস্তানকে ১২৫ রানে টেনে তুললেও শেষ রক্ষা হয়নি। ১৯.২ ওভারে ১২৫ রানে গুটিয়ে যাওয়া পাকিস্তান ম্যাচ আর সিরিজ হেরেছে।

বাংলাদেশের হয়ে শরিফুল (৩/১৭),তানজিম সাকিব (২/২৩), মাহেদী হাসান (২/২৫) বল হাতে মুন্সিয়ানা দেখায়। কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ কালও বরাবরের মত কিপ্টে বোলিং করে। শেষ ওভারে যখন জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ১৩ রান তখন দ্বিতীয় বলেই আহমেদ ড্যানিয়েলের উইকেট তুলে নিয়ে জয় সুনিশ্চিত করে।

বলতেই হবে মীরপুর উইকেটের গতি প্রকৃতি ধাতস্ত হয় নি পাকিস্তানের। দলে ম্যাচ জয়ের মানসম্পূন ব্যাটসম্যান আর বোলার স্বল্পতা আছে। ম্যাচ কৌশল প্রশ্নবিদ্ধ। ফাহিম আশরাফ প্রমান করেছে এই উইকেটেও রান করা যায় নিজেকে প্রয়োগ করে ব্যাটিং করলে। তাই উইকেটকে অজুহাত দিয়ে নিজেদের হতচ্ছাড়া খেলাকে আড়াল করা যাবেনা। আমি মনে করি বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়েও বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে।

যাহোক দুই ম্যাচ শেষে ২-০ এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের বাংলা ওয়াশ করার সুযোগ আছে। তবে শেষ ম্যাচটিতে সঠিক একাদশ নিয়ে খেলতে হবে। ফিল্ডিং উন্নতি করার পর্যাপ্ত সুযোগ আছে।

বাংলাদেশ -পাকিস্তান টি ২০ সিরিজ, দ্বিতীয় ম্যাচ।

বাংলাদেশ ১৩৩ অল আউট (জাকের আলী অনিক ৫৫, মাহেদী হাসান ৩৩, সালমান মির্জা ২/১৭, আহমেদ ড্যানিয়েল ২/২৩, আব্বাস আফ্রিদি ২/৩৭)।

পাকিস্তান ১২৫ অল আউট (ফাহিম আশরাফ ৫১, আব্বাস আফ্রিদি ১৯, আহমেদ ড্যানিয়েল ১৭, শরিফুল ৩/১৭, তানজিম ২/২৩, মাহেদী ২/২৫)।

বাংলাদেশ ৮ রানে জয়ী। সিরিজ অবস্থান বাংলাদেশ ২ পাকিস্তান ০।

ম্যাচ সেরা : জাকের আলী।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

7 + 14 =