সাবিনা-ঋতুপর্ণা-রূপনাদের সাফল্য হোক এগিয়ে যাবার মূলমন্ত্র

সালেক সুফী

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারসমূহ থেকে  পরিবেশের সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রাম উঠে আসা বাংলাদেশের সোনার মেয়েরা পর পর দুবার সাফ ফুটবল জয় করে বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছে। অবকাঠামো, সুযোগ সুবিধায় অনেক এগিয়ে থাকা ভারত, পাকিস্তান, নেপালকে পেছনে ফেলে বাংলার মেয়েদের এই সাফল্য নিঃসন্দেহে বিশাল অর্জন।

অথচ ভেবে দেখুন রূপনা, ঋতুপর্ণা বা মনিকা চাকমাদের অনেকের পরিবার থাকে জড়নো কুঠিরে, যাতায়াতের পথ দুর্গম, হয়তো একই অবস্থা কাঁলসিন্দুর গ্রামের মেয়েদের। সামান্য মাসিক বেতন তাও  আবার নিয়মিত মিলে না। দেশে নাই নিয়মিত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ফুটবল আসর।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার সুযোগ হয়ে কালে ভদ্রে। প্রকৃতি প্রদত্ত প্রতিভা আছে বলেই নিজেদের নিবেদনের বিনিময়ে ওরা বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়েও এখন দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সেরা দল।  ওদের অর্জনে সমগ্র জাতি গর্বিত উল্লসিত। সাফ শিরোপা জয়ী মেয়েদের সাফল্যকে পুঁজি করে মেয়েদের ফুটবলকে উত্তরোত্তর এগিয়ে যেতে হলে সুনির্দিষ্ট  পরিকল্পনা গ্রহণের এখনই সময়।

গেলবারের মতো এবারেও শিরোপা  বিজয়ী মেয়েদের ছাদ খোলা বাসে ছড়িয়ে বিমানবন্দর থেকে বিসিবি কার্যালয়ে নিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস স্বয়ং নিজের দপ্তরে ওদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ওদের কথা শুনেছেন। ওদের সমস্যাগুলো সমাধানের আশ্বাস  দিয়েছেন। আশা করতেই পারি বরাবরের মতো সাফল্য পরবর্তী উচ্ছাস, আশ্বাসগুলো অচিরেই হতাশায় পরিণত হবে না।

মেয়েদের সাফল্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে দেশব্যাপী মেয়েদের নির্বিঘ্নে, নিরাপদে খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করতে হবে। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে অন্তত বিভাগীয় শহরগুলোতে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের ফুটবল দল গড়ে তুলে নিয়মিত ফুটবল লীগ চালু করতে হবে। কয়েকটি বিশেষ অঞ্চল যেমন টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, রাঙামাটি, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, রংপুর অঞ্চলে মেয়েদের ফুটবল কেন্দ্র গড়ে তুলে তৃণমূলে মেয়েদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে।

বিদেশের আদলে বাংলাদেশের প্রধান ফুটবল দলগুলোকে বাধ্যতামূলক ভাবে মেয়েদের ফুটবল দল গড়ে জাতীয় মহিলা ফুটবল লীগ আয়োজন করতে হবে। মাঠে সারা বছর ফুটবল লীগ খেলার পাশাপাশি নিয়মিত আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার বা বিএফএফের পক্ষে এই কাজ করা দুরূহ, দেশের কর্পোরেট হৌসেগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে খেলোয়াড়দের যথাযথ প্রণোদনা দিয়ে মেয়েদের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে।

শুরু থেকেই জানি অধিকাংশ মেয়েদের পারিবারিক অসচ্ছলতা আছে। বিশেষ করে কলসিন্দুর এলাকা এবং পাহাড়ি মেয়েদের পরিবার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অতি সাধারণ ভাবে জীবনযাপন করে। আশা করি এবারে ওদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত হবে। উন্নতমানের জীবনযাপনের ব্যবস্থা করা হবে। তাহলে প্রণোদিত হয়ে অধিক সংখ্যায় মেয়েরা ফুটবল খেলতে এগিয়ে  আসবে.সাফল্যের ধারবাহিকতা সৃষ্টি হবে।

দেখেছি ফুটবল দলটির প্রশিক্ষণ নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। দলটি এই পর্যায়ে নিয়ে আসার ব্যাপারে অনেকের অবদান আছে। কিন্তু তাই বলে এখজন পেশাদার কোচ নিয়ে টুর্নামেন্ট চলাকালে বিতর্ক সৃষ্টি করা প্রাসঙ্গিক ছিল না। কেন একটি বিজয়ী দলের সফল কোচকে টুর্নামেন্ট শেষে নিজে থেকে বিদায় নিতে হবে।

আমি বাংলাদেশের মেয়েদের প্রতি খেলা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দেখেছি। দ্বিধাহীনভাবেই বলতে পারি ওদের সামগ্রিক কৌশল এবং ব্যাক্তিগত দক্ষতা আন্তর্জাতিক মানের। কিছু গোল করেছে দক্ষ কুশলী খেলোয়াড়দের মত।  বিশেষ করে যেভাবে ভারত, নেপাল এবং ভুটানের বিরুদ্ধে খেলেছে সেখান থেকে বাংলাদেশ দলের অনাগত সাফল্য নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায়।

উন্নত পরিবেশে যথাযথ পরিচর্যা করা হলে, নিয়মিত শক্তিশালী দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পেলে এই দল এশিয়া অঞ্চলে ফুটবল পরাশক্তি হয়ে উঠবে। প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, পর্যাপ্ত প্রণোদনা এবং নিবিড় মনিটরিং।

দেশে সর্বত্র চলছে সংস্কার কাজ। আশা করি মেয়েদের দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাস মোতাবেক দ্রুত ব্যবস্থা গৃহীত হবে। বাফুফের নব নির্বাচিত কার্যকরী পরিষদ সঠিক লাগসই পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

six + fourteen =