সারিকা যার সব সম্পত্তি নিয়ে নেয় পরিচারিকা!

খুব ছোট বয়স থেকেই অভিনয়ে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। মায়ের সৌজন্যে স্টুডিয়োই হয়ে উঠেছিল তার খেলার মাঠ। কখনও স্কুলে যাননি। অথচ অভিনয়-ব্যক্তিত্ব-মানসিকতায় সমসাময়িক অভিনেত্রীদের থেকে অনেকটাই অন্য রকম সারিকা। স্বাধীন এবং দৃঢ়চেতা তিনি। অথচ এই মানুষটিকেই পরবর্তীকালে নিজের উপার্জনের সমস্ত সম্পত্তি খোয়াতে হয়েছিল পরিচারিকার কাছে।

তিনি বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সারিকা। জন্মগত নাম সারিকা ঠাকুর। শৈশবেই দেখেছিলেন বাবা মায়ের বিচ্ছেদ। স্ত্রী, সন্তানের দায়িত্ব নিতে রাজি ছিলেন না সারিকার বাবা। ফলে সারিকাকে ছোট থেকে অভিনয় শুরু করতে হয়। উপার্জনের চাপেই তিনি কোনও দিন স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাননি।

শিশুশিল্পী হিসেবে সারিকার প্রথম ছবি ‘মঝলি দিদি’। ছবিতে মেজদিদির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মীনাকুমারী। তার মেয়ে হেমাঙ্গিনীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সারিকা। এর পর শিশুশিল্পী হিসাবে একাধিক ছবির প্রস্তাব পেতে শুরু করেন তিনি। শিশুশিল্পী হিসাবে ছেলের চরিত্রেও অভিনয় করেছেন।

কিন্তু চেহারায় পরিবর্তন আসায় বেশি দিন শিশুশিল্পী হিসাবে কাজ করতে পারেননি তিনি। সারিকা বুঝতে পেরেছিলেন এ বার অন্য চরিত্র খুঁজতে হবে। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই নায়িকা হয়ে যান তিনি। ১৯৭৫ সালে রাজশ্রী প্রোডাকশনের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘গীত গাতা চল’-এ সচিনের নায়িকা হয়েছিলেন সারিকা। প্রথম ছবিতেই সচিন-সারিকা হয়ে উঠেছিলেন বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় জুটি।

সারিকা তার মায়ের সঙ্গেই থাকতেন। তিনি কোন ছবি করবেন কোনটা নয়, সবই সিদ্ধান্ত নিতেন তার মা। সচিনের সঙ্গে সারিকার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। সারিকা বিয়েও করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মায়ের হস্তক্ষেপে সেটা হয়ে ওঠেনি।

সারিকার জীবন পুরোপুরি মায়ের নিয়ন্ত্রণে চলছিল। যত সময় এগিয়েছে সারিকা কেরিয়ারে আরও উন্নতি করেছেন, আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। প্রচুর টাকাও উপার্জন করেছিলেন তিনি। কিন্তু সবই ছিল মায়ের অধীন।

সারিকার মা শুধু তাকে নিয়ন্ত্রণই করতেন না, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের উপর নির্যাতনও শুরু করেছিলেন বলে অভিযোগ। প্রথমে বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু মেয়ের বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খ্যাতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ্যেও সারিকাকে বিভিন্ন সময়ে হেনস্থা করতে শুরু করেছিলেন।

এক বার প্রকাশ্যে অনুরাগীদের সামনেই চড় মেরেছিলেন মেয়ে সারিকাকে। সহ্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল সারিকার। ওই দিনই আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন তিনি। মাত্র ২১ বছর বয়সে মায়ের ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে একা থাকতে শুরু করেন। কোনও টাকাপয়সা না নিয়ে একবস্ত্রে ঘর ছেড়েছিলেন তিনি। প্রথম কয়েক দিন নিজের গাড়িতে প্রায় ভবঘুরে জীবন কাটিয়ে ধীরে ধীরে থিতু হন একাকী জীবনে।

থাকার জন্য মুম্বইয়ে ঘর খুঁজছিলেন তিনি। যে সমস্ত ব্রোকারদের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল এ নিয়ে তারাই তাকে এমন একটি খবর দিয়েছিলেন যা একেবারেই অজানা ছিল সারিকার। তারা জানিয়েছিলেন, যে এলাকায় থাকার জন্য ঘর খুঁজছিলেন তিনি, সেখানেই নাকি ছয়টি ফ্ল্যাট কেনা রয়েছে তার! খোঁজ নিয়ে সারিকা জানতে পেরেছিলেন এত দিন উপার্জন করে যে টাকা তিনি মায়ের হাতে তুলে দিতেন সে সব দিয়েই তার মা নিজের নামে এই ফ্ল্যাটগুলি কিনেছিলেন।

সারিকা তখন এই নিয়ে মাকে কিছুই বলেননি। মায়ের মৃত্যুর পর তিনি ফ্ল্যাটগুলি নিজের অধিকারে নিতে যান, তখন আর এক সমস্যায় পড়েন। জানতে পারেন, সমস্ত সম্পত্তি তার মা এক পরিচারিকার নামে লিখে দিয়েছিলেন। শেষ জীবনে মায়ের দেখভাল করতেন ওই পরিচারিকাই। এ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থও হয়েছিলেন সারিকা। কিন্তু কোনও সম্পত্তিই তিনি হাতে পাননি। তার উপার্জনের ওই সমস্ত সম্পত্তি পরিচারিকা নিয়ে নেন।

পরবর্তীকালে অভিনয় সূত্রে সুপারস্টার কমল হাসনের সঙ্গে আলাপ সারিকার। ক্রমে আলাপ থেকে প্রণয়। তখন কমল হাসন আর বাণী গণপতির দাম্পত্যের বয়স এক দশকের কাছাকাছি। সব জেনেই কমলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সারিকা। দু’জনের কেউ তাদের সম্পর্ক গোপনও করেননি। কয়েক বছর লিভ ইন সম্পর্কে থাকার পর তারা বিয়েও করেন। দুই মেয়ে শ্রুতি এবং অক্ষরার জন্মও দেন তিনি। কিন্তু সবাইকে হতবাক করে তাদের ১৬ বছরের দাম্পত্য ভেঙে যায় ২০০৪ সালে।

কমলকে বিয়ের পর অভিনয় ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিচ্ছেদের পর ফের নতুন করে অভিনয়ের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেন। সারিকা বরাবরই সামনে তাকিয়ে চলতে পছন্দ করেন। ঘটে যাওয়া কঠিন সত্যকে আঁকড়ে বিষাদে ভাসতে রাজি নন তিনি। জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসেও তাই সাফল্য পেয়েছেন। ২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘পরজানিয়া’ ছবিতে পার্সি মহিলার ভূমিকায় অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার পান সারিকা। তার পরের কয়েক বছরে ‘ভেজা ফ্রাই’, ‘মনোরমা সিক্স ফিট আন্ডার’, ‘যব তক হ্যায় জান’, ‘পুরানি জিন্স’, ‘বার বার দেখো’ ছবিতে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়। সারিকা শুধুমাত্র অভিনেত্রীই নন, পাশাপাশি আজ তিনি একজন সফল কস্টিউম ডিজাইনার, সাউন্ড জিজাইনার এবং সহকারী পরিচালকও।

আনন্দবাজার

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twelve + 17 =