সেন্সরে আটকে থাকা সিনেমার জন্য সুখবর

বিগত সরকারের আমলে আটকে দেওয়া হয়েছে অনেক সিনেমা। কোনোটি আইনি মারপ্যাঁচে, কোনোটি অজানা কারণে। সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকা সিনেমা নিয়ে নির্মাতারা প্রতিবাদ করলেও হয়নি কোনো সুরাহা। কয়েক বছর ধরে সেন্সর বোর্ড বিলুপ্ত করে সেন্সর সার্টিফিকেশন চালু করার দাবিও করছেন নির্মাতারা। এবার দীর্ঘদিন আটকে থাকা সিনেমা নিয়ে সুখবর দিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

এক দশকের বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেন্সর বোর্ড। পর্দায় কী দেখানো যাবে, কতটুকু দেখানো যাবে, তা নিয়ে ভয়েই থাকেন নির্মাতারা। ভয়ের বিষয়—নির্মাণ শেষে যদি আটকে যায় সিনেমাটি! এমন উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে। বিগত সরকারের আমলে আটকে দেওয়া হয়েছে অনেক সিনেমা। কোনোটি আইনি মারপ্যাঁচে, কোনোটি অজানা কারণে।

সেন্সরে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা সিনেমার তালিকায় আছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’, এনামুল করিম নির্ঝরের ‘নমুনা’, নজরুল ইসলামের ‘রানা প্লাজা’, অনন্য মামুনের ‘মেকআপ’, অং রাখাইনের ‘মং থেংগারি (আমার বাইসাইকেল)’, সাজ্জাদ খানের ‘কাঠগোলাপ’সহ আরও কিছু সিনেমা। বছরের পর বছর ঘুরলেও নির্মাতাদের দেওয়া হয়নি সেন্সর সার্টিফিকেট। কেউ কেউ আশাও ছেড়ে দিয়েছেন। এমনকি সেন্সরের খড়্গ পড়েছে ওয়েব কনটেন্টে। মুক্তির তারিখ ঘোষণা করেও দর্শকদের সামনে আসতে পারেনি রায়হান রাফীর ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্ম। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড অবলম্বনে নির্মিত হওয়ায় এটির মুক্তি আটকে দিয়েছে সেন্সর বোর্ড।

সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকা সিনেমা নিয়ে নির্মাতারা প্রতিবাদ করলেও হয়নি কোনো সুরাহা। কয়েক বছর ধরে সেন্সর বোর্ড বিলুপ্ত করে সেন্সর সার্টিফিকেশন চালু করার দাবিও করছেন নির্মাতারা। তাঁদের মতে, সেন্সর প্রথা শিল্পচর্চায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। তবে কোনো কিছুতেই যেন আশার আলো দেখা যাচ্ছিল না। অবশেষে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন নির্মাতারা। সবাই প্রত্যাশা করছেন, এবার অবসান হবে সেন্সরের রাজত্ব, শুরু হবে চলচ্চিত্রের নতুন যুগ। ১০ বছর ধরে সেন্সরে আটকে থাকা রানা প্লাজা সিনেমার নির্মাতা নজরুল ইসলাম তো সিনেমা মুক্তির জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। কয়েক দিন আগে এই নির্মাতা জানান, নতুন করে আবার সেন্সর বোর্ডে জমা দেবেন রানা প্লাজা।

এবার দীর্ঘদিন আটকে থাকা সিনেমা নিয়ে সুখবর দিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, সেন্সরে আটকে থাকা সিনেমাগুলো নতুনভাবে বিবেচনা করা হবে, পাশাপাশি পুনর্গঠন করা হবে সেন্সর বোর্ড। নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানি, অনেকগুলো সিনেমা সেন্সরে আটকে আছে। সেই সিনেমাগুলো পুনর্বিবেচনা করা উচিত। যদি কোনো নীতিমালা ভঙ্গ না হয়, তাহলে সিনেমাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকাশ করার সুযোগ করে দেওয়া উচিত।’

সেন্সর বোর্ড বিলুপ্তি নিয়েও কথা বলেছেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সেন্সর বোর্ড ও জুরিবোর্ডের মতো কমিটিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। দ্রুততার সঙ্গেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। সেন্সর বোর্ড না থাকার যে দাবি, সেটিও আমরা আলোচনা করে যৌক্তিকতা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।’ নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘সার্বিকভাবে বলব, আমাদের চলচ্চিত্র নিয়ে অনেক বেশি কাজ করতে হবে। চলচ্চিত্র নিয়ে তরুণ প্রজন্মের অনেক আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হচ্ছে না। সেই আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আমাদের চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করতে হবে।’

শুধু চলচ্চিত্র নয়, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সংস্কার করতে হবে বলেও মনে করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিটিভিকে দেখলে মনে হয়, এটি আশি বা নব্বইয়ের দশকের। ওই জেনারেশনের মানুষ শুধু বিটিভি দেখে, আর কেউ দেখে কি না, তা আমরা জানি না। রাজনৈতিক ও দলীয়করণের একটা বিষয় আছে। এছাড়া, বিটিভির কনটেন্টগুলো দেখে মনে হয়, তা এই প্রজন্মের জন্য নয়। সেই জায়গা থেকে আমি মনে করি, সব প্রতিষ্ঠানকে আধুনিকায়ন করা উচিত।’

এদিকে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পর নতুন করে অমীমাংসিত ওয়েব ফিল্মের টিজার শেয়ার করে নির্মাতা রায়হান রাফী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জনগণকে আর বোকা ভাবা যাবে না! অমীমাংসিত আসছে, আসতেই হবে’।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

8 − 6 =