সিলেটে নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সিলেটে নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। সুরমা-কুশিয়ারাসহ আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর পানি বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। খবর বাসস।

এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গোয়াইনঘাট-রাধানগর উপজেলা সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে, আজ শনিবার দুপুর থেকে টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট জানিয়েছে, শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

অতিবৃষ্টির ফলে সিলেট নগরের বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা ও বাসাবাড়ির আঙিনা তলিয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ ও সেবা প্রত্যাশীরা।

এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)। খোলা হয়েছে একটি বিশেষ জরুরি কন্ট্রোল রুম। সিসিক সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারণ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় (কক্ষ নম্বর ২০৫) কন্ট্রোল রুমটি স্থাপন করা হয়েছে।

জরুরি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা: তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর, যোগাযোগ: ০১৭১১৯০৬৬৪৭, সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন, প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান, মোবাইল: ০১৭১৩৩১১৫২৬, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ একলিম আবদীন, মোবাইল: ০১৭৬৯০০৫৮৫৬ সিসিকের এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে পরিস্থিতি সরাসরি পরিদর্শন করবেন এবং তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হঠাৎ এই ভারী বৃষ্টিতে নগরীর জিন্দাবাজার, ক্বিন ব্রিজ এলাকা, আম্বরখানা, বন্দরবাজার, টিলাগড়, উপশহর, লালদিঘীরপাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় হাঁটুপানি জমে যায়। অনেক বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও পুনর্বাসন কেন্দ্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে সিলেটের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। বিকেল তিনটা পর্যন্ত সুরমা, কুশিয়ারা, ধলাই, পিয়াইন ও সারি নদীসহ সবকটি নদ-নদীর পানি সমতলে মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমার পানি আজ বিকেল তিনটা পর্যন্ত বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৬৬ মিটার। এই পয়েন্টে ১২ দশমিক ৭৫ মিটার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পানি প্রবাহ ছিল ৮ দশমিক ২৯ মিটার। দুই দিনে বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৭ মিটার। বর্তমানে বিপৎসীমার এক দশমিক ৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে সমানে পানি বাড়ছে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমার এক দশমিক ৪৯ মিটার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গত দুই দিনে পানি বেড়েছে ২ দশমিক ০৮ মিটার। বর্তমানে ৯ দশমিক ৩১ মিটার সমতলে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ মিটার।

সীমান্তের পাহাড়ি নদীগুলোতেও দ্রুত পানি বাড়ছে। এর মধ্যে কানাইঘাটের লোভাছড়ার পানি বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ০৫ মিটার সমানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। জৈন্তাপুরের সারি নদীর পানি ১১ দশমিক ৫২ মিটার সমানে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। জাফলংয়ের পিয়াইন নদীর ডাউকি পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ৭০ মিটার সমতলে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৩ মিটার। গোয়াইনঘাট সারি গোয়াইন পয়েন্টে ১০ দশমিক ০৬ মিটার সমমানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮২ মিটার এবং কোম্পানীগঞ্জের ইসলামপুরে ধলাই নদীর পানি বেড়ে ৯ দশমিক ১৭ মিটারে পৌঁছেছে।

কুশিয়ারা নদীর জকিগঞ্জে অমলসিদ পয়েন্টে বিকেল তিনটায় পানির প্রবাহ পৌঁছায় ১২ দশমিক ৯৩ মিটারে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৪০ মিটার। শেওলা পয়েন্টে ১০ দশমিক ৪০ মিটার সমানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৩ দশমিক ০৫ মিটার। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিকেল তিনটায় পানি প্রবাহ পৌঁছায় ৮ দশমিক ৩৪ মিটারে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৯ দশমিক ৪৫ মিটার।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট অফিস জানিয়েছে, আজ শনিবার দুপুর থেকে সিলেটে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। এই তিন ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৫৩ মিলিমিটার। এর আগে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত ৮ মিলিমিটার এবং গতকাল শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১৩২ মিলিমিটার। এর আগে ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৮৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন বলেন, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সিলেটে ভারী বর্ষণ ও দমকা হওয়া অব্যাহত রয়েছে। আগামী তিন দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস রয়েছে।

এদিকে, ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১০ মিলিমিটার এবং এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ২১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সেদেশের আবহাওয়া অফিস বৃষ্টিপাতের এই তথ্য রেকর্ড করেছে। ফলে উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেটের সকল নদ-নদীতে পানি বাড়ছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × three =