সেরা আয় করা বিশ্বের দশ ফুটবলার

আরিক নবী দীপ্র: শুরুটা সবারই কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সাফল্য ধরা দিলেই গায়ের সঙ্গে লেপ্টে যায় তারকা তকমা। এরপর মাঠ কিংবা মাঠের বাইরে থেকে আসতে শুরু করে অর্থ। একটা সময় ফুটবল খেলেই বিত্তশালীদের কাতারে নাম লেখায় তারা। সঙ্গে আসে যশ-খ্যাতিও। যেমন মেসি, রোনালদো কিংবা এমবাপ্পে।

একটা দীর্ঘ সময় শীর্ষ ধনী ফুটবলারের তালিকায় দ্বৈরথে ছিলেন মেসি ও রোনালদো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই দুজনকেই পেছনে ফেলেছেন ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। ফোর্বসের জরিপ অনুযায়ী মেসি-রোনালদোকে ছাপিয়ে এমবাপ্পেই এখন শীর্ষ আয় করার ফুটবলার।

ফুটবলারদের টাকা আসে কোথা থেকে? প্রথমত, ক্লাবের মাসিক বেতন। এর বাইরে এনডোর্সমেন্ট, ক্লাব ট্রান্সফার ফি এবং সাইনিং বোনাসের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে।

২০২২-২৩ মৌসুমের জন্য মাঠ এবং মাঠের বাইরে উভয় উপার্জনকে একত্রিত করে সর্বোচ্চ বেতনভোগী ফুটবলারদের তালিকা করেছে মার্কিন ম্যাগাজিন ফোর্বস। ম্যানচেস্টার সিটির আরলিং হলান্ড প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ বেতনভোগী খেলোয়াড় হিসেবে উঠে এসেছেন। এক নজরে দেখা যাক বিশ্বের সেরা দশ ফুটবলের আয়-উপার্জন।

কিলিয়ান এমবাপ্পে (পিএসজি)

বয়স মাত্র ২৪। এরই মধ্যে তারকা খ্যাতি মধ্য গগনে। জিতেছেন একটি বিশ্বকাপ। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও পারেননি। তবে জিতেছেন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন বুট। ফ্রান্সের সেই এমবাপ্পে এখন অর্থ উপার্জনে সবার উপরে। ফোর্বস ২০২২-২৩ মৌসুমে কর এবং এজেন্টদের ফি দেওয়ার আগে ফরাসি খেলোয়াড়ের ১২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উপার্জন করার পূর্বাভাস দিয়েছে। তাতেই তিনি ছাপিয়ে যাচ্ছেন মেসি ও রোনালদোকে।

ফরাসি ক্লাব পিএসজির সঙ্গে নতুন চুক্তিও হয়েছে এমবাপ্পের। যদিও এই নতুন চুক্তির বিবরণ গোপন রাখা হয়েছে। ফোর্বস উল্লেখ করেছে যে, এমবাপ্পে এই মৌসুমে তার বেতন এবং তার সাইনিং বোনাসের একটি অংশের মধ্যে প্রায় ১১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (আনুমানিক ৮৯৭ কোটি টাকা) সংগ্রহ করবেন। আবার নাইকি, ডিওর, হাবলট, ওয়াকলি ও পানিনির মতো বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের কাছ থেকে বার্ষিক আয় প্রায় ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

গ্লোবাল আইকন এবং সর্বোচ্চ বেতনের ফুটবল খেলোয়াড় টানা তৃতীয় বছরের জন্য এই স্পোর্টস ফিফা ভিডিও গেমের কভারে উপস্থিত হয়েছেন এমবাপ্পে। জেব্রা ভ্যালি নামে তার নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং একজন রাষ্ট্রদূত এবং একজন বিনিয়োগকারী উভয় হিসাবে এনএফটি প্ল্যাটফর্ম সোরারে যোগদান করেছেন। এছাড়াও তিনি ৯৪.৬ মিলিয়ন ফলোয়ার সহ ইনস্টাগ্রামে বেশ জনপ্রিয়। এখান থেকেও আয় করে থাকেন এমবাপ্পে।

লিওনেল মেসি (পিএসজি)

বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি আছেন এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে। যদিও বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসির আয় বেড়েছে অনেকগুণ। তবে ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী মেসির বাৎসরিক উপার্জন প্রায় ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের মুদ্রায় যা প্রায় ৯৭৮ কোটি টাকা। ইকোনমিক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেসি সপ্তাহে প্রায় ৯ কোটি টাকা আয় করেন। পেপসি এবং অ্যাডিডাসের মতো বিখ্যাত কোম্পানি থেকে তার আয় প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার। বাড়তি হিসেবে রয়েছে ইনস্টাগ্রাম। যেখানে তার ফলোয়ার প্রায় ৪১৮ মিলিয়ন।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (আল নাসর)

সম্প্রতি সৌদি ক্লাব আল নাসরে রেকর্ড গড়া অর্থে যোগ দিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। বছরে যেখানে তিনি পাবেন ১৭শ কোটি টাকারও বেশি। সেই হিসাবটা টানলে রোনালদো হয়তো শীর্ষেই থাকবেন। তবে ফোর্বসের তালিকায় আপাতত রোনালদোর অবস্থান তৃতীয় স্থানেই। এই হিসেবে রোনালদার বছরে আয় দেখানো হয়েছে ১১৫ মিলিয়ন ডলার, ৯৩৭ কোটি টাকা। তবে আল নাসরের হিসেব নিলে তা দাঁড়ায় ২১০ মিলিয়ন ডলার। যা মেসি ও এমবাপ্পের চেয়েও অনেকে বেশি। রোনালদোর উপার্জনের প্রায় ৪০ শতাংশ এসেছে হেভি-ওয়েট এনডোর্সমেন্টের মাধ্যমে। ব্র্যান্ড যেমন টাগ হেউর, ক্লিয়ার হেয়ারকেয়ার, হারবালাইফ নিউট্রিশন এবং নাইকি। রোনালদোর ইনস্টগ্রামে ফলোয়ার প্রায় ৫৩১ মিলিয়ন।

নেইমার জুনিয়র (পিএসজি)

ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার আছেন চতুর্থ স্থানে। তার আয় বাৎসরিক ৮৭ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ৭০৯ কোটি টাকা। ইনস্টাগ্রামে রয়েছে নেইমারের প্রায় ২০১ মিলিয়ন অনুসারি। সেখান থেকেও উল্লেখযোগ্য উপার্জন করে থাকেন নেইমার। মোট উপার্জনের প্রায় ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নেইমারের আসে বিখ্যাত পুমা ও রেড বুল ব্রান্ড থেকে।

মোহাম্মদ সালাহ (লিভারপুল)

মিশরীয় ফুটবলার মোহাম্মদ সালাহর আয় প্রায় ৫৩ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের মুদ্রায় ৪৩২ কোটি টাকা। সাপ্তাহিক বেতন প্রায় ৩ কোটি টাকা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সালাহ গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তবে চলতি মৌসুমে তার দল লিভারপুল খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। অ্যাডিডাস ছাড়াও, পেপসি, ভোডাফোন এবং উবার তার অন্যান্য স্পন্সরশিপ ডিলের মধ্যে রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সালাহর অনুসারী প্রায় ৫৫.৭ মিলিয়ন।

আরলিং হলান্ড (ম্যানসিটি)

সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলারদের তালিকায় এর পরেই রয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটি তারকা আরলিং হলান্ড। ফোর্বস উল্লেখ করেছে যে নরওয়েজিয়ান আইকন হাইপারাইস, স্যামসাং এবং ভিয়াপ্লেসহ ব্র্যান্ডগুলির সাথে এনডোর্সমেন্ট চুক্তির মাধ্যমে প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলারসহ প্রতি বছর ৩৯ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেন। বাংলাদেশের মুদ্রায় তা প্রায় ৩১৮ কোটি টাকা।

প্রিমিয়ার লিগে চলমান আসরে সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। প্রায় প্রতি ম্যাচেই তিনি পান গোলের দেখা। ম্যানসিটির সঙ্গে তার চুক্তিটা ৫ বছরের। দ্রুতই তার বেতন আরও বেড়ে যাবে বলেই জানিয়েছে ইংলিশ গণমাধ্যম। ইনস্টাগ্রামে হলান্ড বেশ জনপ্রিয়। তার রয়েছে ২৩.১ মিলিয়ন অনুসারী।

রবার্ট লেভানডোভস্কি (বার্সেলোনা)

বায়ার্ন মিউনিখে থেকেছেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে রবার্ট লেভানদোভস্কি স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে খেলছেন। শীর্ষ আয় করা ফুটবলারের তালিকায় পোলিশ এই স্ট্রাইকার রয়েছে সপ্তম স্থানে। তার বাৎসরিক আয় ৩৫ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের মুদ্রায় তা প্রায় ২৮৫ কোটি টাকা। নাইকির সঙ্গে রয়েছে তার এনডোর্সমেন্ট চুক্তি। ইনস্টাগ্রামে তার অনুসারী ৩২.১ মিলিয়ন।

ইডেন হ্যাজার্ড (রিয়াল মাদ্রিদ)

রিয়াল মাদ্রিদে সময়টা ভালো যাচ্ছে না ইডেন হ্যাজার্ডের। গুঞ্জন রয়েছে চেলসিতে ফেরার। তারপরও আয় করা ফুটবলারের তালিকায় বেলজিয়ান এই স্ট্রাইকার রয়েছেন অষ্টম স্থানে। তার আয় ৩১ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ২৫২ কোটি টাকা। হ্যাজার্ড ইএ স্পোর্টসের ফিফা ২০ ভিডিও গেমসের সঙ্গেও সম্পৃক্ত আছেন। ইনস্টাগ্রামে তার অনুসারী ২৭.৩ মিলিয়ন।

আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা (ভিসেল কোবে)

এক সময় মেসির সতীর্থ ছিলেন বার্সেলোনায়। সেই আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা এখন খেলে থাকেন জাপানের ক্লাব ভিসেল কোবেতে। ৩৮ বছর বয়সী ইনিয়েস্তার বাৎসরিক আয় ৩০ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের মুদ্রায় তা প্রায় ২৪৪ কোটি টাকা। স্প্যানিশ এই ফুটবলারের ক্যাপিটেন নামে তার নিজস্ব পোশাকের ব্র্যান্ড রয়েছে। যেটি ক্লিট দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল এবং জাপানের বাজারে সুপরিচিত নাম। তিনি নিসান, অ্যাসিক্স এবং কোনামি এবং জেনেলাইফের মতো ব্র্যান্ডগুলির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইনস্টাগ্রামে ইনিয়েস্তার ফলোয়ারের সংখ্যা ৪১ মিলিয়ন।

কেভিন ডি ব্রুইন (ম্যানসিটি)

ফোর্বসের ২০২২-২৩ মৌসুমের সর্বোচ্চ বেতনভোগী ফুটবলারদের তালিকা দশ নম্বরে অবস্থান করছেন ম্যানচেস্টার সিটির কেভিন ডি ব্রুইন। বেলজিয়ামের এই তারকা ফুটবলারের ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের মুদ্রায় তা প্রায় ২৩৬ কোটি টাকা। ফুটবল মাঠের বাইরেও তার বেশ উপার্জন। নাইকি, ওয়াও হাইড্রেট, ক্রেডিট কর্মা এবং থেরাবডির মতো ব্রান্ডের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: খেলার মাঠ ২

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × 1 =