সোশ্যাল মিডিয়ায় নারী নির্যাতন বন্ধ হবে কী?

শাহনাজ পারভীন এলিস: বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের অবাধ প্রবাহ এবং মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতায় বেড়েছে মানুষের অনলাইন নির্ভরতা। অনলাইনের রঙিন জগতে তথ্য আদান-প্রদান এবং যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে- ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, লিঙ্কডইন, টুইটারসহ নানা অ্যাপস। আর ইউটিউবের জনপ্রিয়তা তো বলাবাহুল্য। কারণ নাটক, সিনেমা, গান- কী না পাওয়া যায় এই মাধ্যমে?

অবাধ তথ্য প্রবাহের এই যুগে এসব অ্যাপস ব্যবহারে নারী-পুরুষ কেউ-ই পিছিয়ে নেই। বরং দিন দিন পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী, বিশেষ করে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা। এতে খুব কম সময়ে জনপ্রিয় হওয়া এই মাধ্যমেও বাড়ছে নারীর প্রতি বৈষম্য, অবমাননা ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা।

নারীর প্রতি বৈষম্য ও যৌন নিপীড়ন নতুন কিছু নয় এবং এটি অনাদিকাল থেকে এখনও বিভিন্ন মাধ্যমে বিরাজমান। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র- প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে এবং এর নানা রকম বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে সেসব ঘটনা বহিঃপ্রকাশের নতুন মাধ্যম হয়ে উঠেছে অনলাইন জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়া। এসব মাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে নারীর মর্যাদা হরণের অস্ত্রে পরিণত হচ্ছে; যা ভাবিয়ে তুলছে সমাজের সচেতন মানুষদের।

২০২২ সালে করা একশনএইড বাংলাদেশ এর সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৬৩.৫১ শতাংশ নারী অনলাইনে হয়রানি ও সহিংসতার শিকার। গত বছর এই হার ছিল ৫০.১৯ শতাংশ। অর্থাৎ সহিংসতার ঘটনাপ্রবাহ বেড়েই চলেছে। অনলাইনে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নারীরা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন ফেসবুকে; যা ৪৭.৬০ শতাংশ। এরপর ম্যাসেঞ্জার, ইনস্ট্রাগ্রাম, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইউটিউবে অনলাইন মাধ্যমে। এছাড়া ৪.৮০ শতাংশ নারী বলেছেন, তারা ভিডিও কল, মোবাইল ফোন এবং এসএমএস’র মাধ্যমেও হয়রানির সম্মুখীন।

সমীক্ষার তথ্য বলছে, ৮০.৩৫ শতাংশ নারী অনলাইনে ঘৃণ্য ও আপত্তিকর যৌনতাপূর্ণ মন্তব্য; ৫৩.২৮ শতাংশ নারী ইনবক্সে যৌনতাপূর্ণ ছবি পাওয়া এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব; ১৯.১৭ শতাংশ নারী বৈষম্যমূলক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন। ১৭.৪৭ শতাংশ নারী বলেছেন, তাদের নামে অন্য কেউ অনলাইনে নকল আইডি তৈরির ফলে হয়রানির শিকার হয়েছেন। ১৬.১৬ শতাংশের বক্তব্য হলো- তাদের কার্যকলাপ সবসময় সাইবার স্পেসে অনুসরণ করা হয়। ১৩.১০ শতাংশ নারী সমকামীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হয়েছেন। ১১.৭৯ শতাংশ বলেছেন, তাদের ব্যক্তিগত ছবি অনুমতি ছাড়াই সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা হয়েছে এবং ১১.৭৯ শতাংশ যৌন নিপীড়নের হুমকি পেয়েছেন। এসব ঘটনায় ২৫.৩৩ শতাংশ নারী ট্রমার শিকার এবং ২৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ আত্মমর্যাদা হারিয়েছেন।

সমীক্ষায় আরও বলা হয়, ১৪.৯১ শতাংশ নারী অনলাইন সহিংসতার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিয়েছেন এবং ৮৫ শতাংশেরও বেশি ভুক্তভোগী কোনও অভিযোগ জমা না দিয়ে নীরব ছিলেন, যদিও তারা অনলাইনে বিভিন্ন উপায়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন। অভিযোগকারীদের মধ্যে, ৪৪.১২ শতাংশ সোশ্যাল মিডিয়া রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে, ২০.৫৯ শতাংশ পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে, ১১.৭৬ শতাংশ জাতীয় জরুরি পরিষেবা (৯৯৯)-এর মাধ্যমে, ১১.৭৬ শতাংশ নিকটস্থ থানায়, ৫.৮৮ শতাংশ সাইবার ক্রাইমের ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, সিটিটিসি ও ডিএমপি’র মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন।

সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, পটুয়াখালী, বান্দরবান, কুড়িগ্রাম এবং লালমনিরহাট- এই ছয় জেলায় অনলাইন জরিপের মাধ্যমে একশনএইড-এর ওই সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়; যেখানে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩৫৯ জন নারী অংশ নেন। ভুক্তভোগী নারীরা অনলাইন হয়রানি, অপব্যবহার এবং ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং দ্রুত শাস্তির পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়াও অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা, প্রশিক্ষণ এবং নিরাপদ ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা এবং রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ানো জরুরি মনে করছেন।

এসব ঘটনার পেছনে নারীদের অনলাইন ব্যবহার এবং সুরক্ষা প্রোটোকল সম্পর্কে সচেতন অভাবকে দায়ী করা হয়েছে। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিশোর-কিশোরীরা মোবাইল ফোনের মালিক নয়। তারা তাদের বাবা-মা বা বড় ভাই-বোনের ফোন ব্যবহার করতে অভ্যস্ত, যা তাদের হয়রানি নিয়ে কারও কাছে মুখ খুলতে না পারার একটি প্রধান কারণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রামীণ নারীরা ডিজিটাল সাক্ষরতায় পারদর্শী নয়। এমনকি তারা জানেন না, কোথায় অভিযোগ জমা দিতে হবে বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে প্রযুক্তিগতভাবে কীভাবে কোথায় জানাতে হবে।

একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেছেন, অনলাইন সহিংসতায় নারীদের জীবনে সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব হলো- মানসিক আঘাত, হতাশা ও উদ্বেগ; দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রভাব হলো- সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা বা মতামত প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আস্থা হারানো। এসব ঘটনার কারণে সৃষ্ট মানসিক যন্ত্রণা নারীর আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে সংকুচিত করছে। বিশেষ করে কিশোরী ও ১৮ বছরের নিচের কন্যা শিশুরা এসব পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে বেশি। তবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে ডিজিটাল এই সন্ত্রাস মোকাবিলা করে নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

গতবছর বাংলাদেশের ১৬ লাখ মানুষের ওপর অন্য একটি জরিপ পরিচালনা প্ল্ন্যান ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটির ওই জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৯১ শতাংশ নারী বলেছেন, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) অনিরাপদ বোধ করেন এবং প্রায় ৫৩ শতাংশ নারী উত্তরদাতা অনলাইনে হয়রানির সম্মুখীন। এই মাধ্যম ব্যবহারকারী যুবনারীদের একটি বিরাট অংশ এখনো জানেন না- কোথায় এবং কীভাবে অনলাইন হয়রানির রিপোর্ট করতে হয়। এসব সমীক্ষা ছাড়াও অনেক বৈশ্বিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী ভার্চুয়াল ক্ষেত্রে মেয়েশিশু এবং নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।

অনলাইন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণের হার এখনো পুরুষের তুলনায় কম। ভার্চুয়াল জগতে লিঙ্গ সমতা প্রয়োজন। কারণ অনলাইন স্বাধীনতা সব মানুষের অধিকার, এটি কোন লিঙ্গভিত্তিক নাগরিক সুবিধা নয়। অফলাইন বিশ্বের বাস্তবতার সঙ্গে তুলনা করলে, ভার্চুয়াল জগতে নারীদের অবস্থান তুলনামূলক আরও দুর্বল। অফলাইন দুনিয়ার নারীদের অবাধ বিচরণের বাধা-বিপত্তি নিয়ে আমরা অনেক কিছুই জানি। অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় নারীদের পিছিয়ে থাকার কারণগুলোও সবার জানা দরকার।

ভার্চুয়াল বিশ্বের সবকিছুই এক বিশেষ নজরদারিতে থাকে। এখানে কেউ চাইলেই কিছু লুকোতে পারে না, সবার পদচারণারই রেকর্ড আছে। ইংরেজিতে একে বলে সাইবার ফুটপ্রিন্ট। এতো নজরদারির পরও কিন্তু অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যবহারকারী/ভোক্তাদের নেতিবাচক কাজকর্মের ওপর এখনো জবাবদিহিতামূলক পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চাইলেই ফেক আইডি চালু করা যায়। অবশ্যই সবার ছদ্মনাম বা অ্যানোনিমাসভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং তথ্য/সংবাদ জানার স্বাধীনতা রয়েছে। তবে এই সুযোগে একদল মানুষ অনলাইনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীদের মর্যাদা হরণে তৎপর।

ভার্চুয়াল জগতে বিচরণকারী কুরুচিপূর্ণ ওইসব ব্যক্তি ফেক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অনেক সময় নারীদের নানাভাবে হেনস্তা করছে। তারা কখনো কখনো নিজেদের আসল আইডি দিয়েও নারীদের চরিত্র নিয়ে নানা ধরনের গুজব রটায়, নারীদের পোশাক কিংবা নানা ব্যক্তিগত পছন্দ নিয়ে নানাবিধ মন্তব্য করে থাকে, যা ডিজিটাল ইভ টিজিংয়ের মতো। অনলাইন মাধ্যমে নারীদের ওপর এধরনের যৌন নিপীড়ন ও দুস্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত আইনানুগ কার্যকর ব্যবস্থার উদাহরণ বেশি না থাকায় দিন দিন এসব ঘটনা বেড়েই চলছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের হর্তকর্তা- উভয়পক্ষের সম্মিলিত কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং সাইবার টিনস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সাদাত রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে অনলাইন হয়রানির কারণে গত ২ বছরে ১১ জন তরুণী আত্মহত্যা করেছে। এসব কিশোর-কিশোরীর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলেও, তারা কিন্তু জানে না কীভাবে ওই সহায়তা পাওয়া যাবে। তাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সহায়তা ব্যবস্থাকে আরও সহজলভ্য করার পরামর্শ এই বিশেষজ্ঞের।

অনলাইনে নারী নির্যাতন বন্ধে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন। কারণ বর্তমানে অনলাইন জগতে পিছিয়ে থাকা মানে বৈশ্বিকভাবে পিছিয়ে থাকা। এমনিতেই নারীদের সম্পদের অধিকার নিশ্চিতকরণের পথ পুরুষদের সম্পদ অধিকারী হওয়ার পথের তুলনায় অনেক বেশি কঠিন। ২০২০ সালে প্রকাশিত দ্য মোবাইল জেন্ডার গ্যাপ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৮৬ শতাংশ পুরুষ ও ৬১ শাতাংশ নারীরা মুঠোফোন ব্যবহার করেন। অতএব, মুঠোফোন মালিকানায় নারী-পুরুষের ব্যবধান দেখা যাচ্ছে ২৯ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে পুরুষ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩৩ শতাংশ এবং নারী ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মাত্র ১৬ শতাংশ। অর্থাৎ দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের ব্যবধান ৫২ শতাংশ। অনলাইন জগতেও বাস্তবজগতের মতো পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার আভাস তথা- নারীদের যৌন বস্তু কিংবা সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন ইত্যাদি অবয়বে দেখার নিদর্শন দেখা যায়। এমনকি অনলাইন জগতে এই চিন্তাধারার অধিক বিকৃত প্রকাশের উদাহরণও বিরল ঘটনা নয়।

বাস্তব জীবনে যেমন নারীদের পাবলিক স্পেসে যেতে প্রায়ই নানা বাধা-নিষেধের সম্মুখীন হতে হয়, তেমনি অনলাইন জগতেও নারীদের পদচারণা নিয়ে হাজারো কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। প্রায়ই বাস্তবজীবনের বিখ্যাত নারী ব্যক্তিত্বদের অনলাইন দুনিয়ায়, অফলাইন জগতের থেকেও বেশি লিঙ্গভিত্তিক সমালোচনার শিকার হতে দেখা যায়। এর প্রধান কারণ- অনলাইনে নেতিবাচক মন্তব্য দেওয়া সহজ, যা বাস্তবে কোনো ক্ষমতাশীল নারীর সামনে অবস্থান করে সশরীরে করা প্রায় অসম্ভব।

অনুকরণযোগ্য নারীরা যখন অনলাইন জগতে নানা হয়রানির শিকার হন, স্বাভাবিকভাবেই তখন সাধারণ নারীরা ভার্চুয়াল জগতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করতে ভয় পেয়ে থাকে। নারী-পুরুষ উভয়েই চাইলে নিজেদের পরিচয় গোপন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকতে পারেন। তবে এই চাওয়াটা যদি স্বাধীনতা না হয়ে ভয়ের বশবর্তীর কারণ হয়, তবে তা এক ধরনের শোষণচক্রের মাঝে পড়ে যায়। সামাজিক মনোবিজ্ঞানীদের মতে, অনেক নারীই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন- ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার ইত্যাদি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ঠিকই, তবে এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় নিজেদের কোনো ছবি বা ব্যক্তিগত পরিচয় পাবলিকলি দেওয়ার সাহস পায় না।

পুরুষদের সাধারণত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীদের মতন ভীত হতে দেখা যায় না। অনলাইন জগতের সোশ্যাল মিডিয়ায় মেয়েদের চরিত্রের ওপর ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা বাস্তবজীবন থেকেও তুলনামূলকভাবে সহজ। তাই এখানে নারীরা নিজেদের সামাজিক মর্যাদা হারানো নিয়ে বাস্তব জীবনের থেকেও তুলনামূলক বেশি আতঙ্কে থাকেন। একে ডিজিটাল পুরুষতান্ত্রিকতা বলা যায়। অনলাইন জগৎ এখন অফলাইন জগতের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলা যায়, ডিজিটাল মানবাধিকার নিশ্চিতকরণের স্বার্থেই সোশ্যাল মিডিয়ার ডিজিটাল পুরুষতান্ত্রিকতা দূর করা একান্ত প্রয়োজন।

বিশিষ্টজনরা বলছেন, তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর এসব সন্ত্রাস মোকাবিলায় সরকার, সুশীল সমাজ, এনজিও, আইএনজিও, জাতিসংঘের সংস্থা সবার একযোগে কাজ করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নারী-পুরুষ সব ধরনের মানুষের নিরাপদ প্রবেশাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে অনলাইন জগতের বাইরে থাকা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। নাগরিক হিসেবেও আমরা এখন অনলাইনে নিজেদের বৈশ্বিক নাগরিকত্বের পরিচয় দৃঢ় করে তুলেছি।

বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারির সময় সরাসরি যোগাযোগ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেই সময় থেকে বাস্তব জগতের পাশাপাশি ভার্চুয়াল জগতে সবার বিচরণ বাড়তে থাকে। কারণ একই ছাদের নিচে বাস করেও পরিবার-পরিজনের সান্নিধ্যে যাওয়া বারণ ছিলো। বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-পরিজনের সাথে দেখা করতে হতো ভিডিওকলে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হতো মোবাইল ফোনে/ভিডিওকলে। শিশু-কিশোরদের পড়াশোনায় শিক্ষকদে ক্লাসও চলতো ভার্চুয়ালি। জরুরি খাবার, পোশাক ও পণ্য সরবরাহের জন্য অনলাইনে বেচাকেনাও সেসময় শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

সম্প্রতি করোনার ভয়াবহতা কেটে গেলেও প্রভাব কিন্তু রয়েই গেছে। আমরা এখন অনলাইনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। বাস্তবিক নানা প্রয়োজনেই আমরা অনলাইন জগতে বিচরণ করি এবং নিজেদের আইডেন্টি ও অভিব্যক্তি শেয়ার করে থাকি। অন্যভাবে বলতে গেলে- নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, অবস্থান জানান দেয়া, শুভেচ্ছা বিনিময়, তথ্য আদান-প্রদান, প্রবাসী বন্ধু-স্বজনের সাথে যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানাবিধ প্রয়োজন আমরা মিটিয়ে থাকি অনলাইন মাধ্যমে।

তথ্য প্রযুক্তি এই যুগের অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম এখন সবার মৌলিক অধিকার। কাজেই এই মাধ্যমটি যেন নারীর ভীতিকর হয়ে না উঠে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। নারীর অসম্মান হয়- এমন কোন বার্তা বা ছবি কেউ যেন সোস্যাল মিডিয়ার প্রদর্শন করতে না পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই সোস্যাল মিডিয়ার হয়ে উঠবে- সমাজের সুবিধাবঞ্চিত নারীর অধিকার আদায়ের মাধ্যম, প্রতিবাদী নারীর বার্তা পৌঁছে দেয়ার মাধ্যম, সমাজের শত প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো নারীর- গল্প শোনার মাধ্যম, উদ্যমী নারীকে আরও এগিয়ে নেয়ার সহায়ক শক্তি। আমরা চাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোক নারী অগ্রযাত্রার ডিজিটাল মুখপত্র।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nineteen − 4 =