স্পিন জাদুতে তারুণ্য নির্ভর বাংলাদেশ টেস্ট নিয়ন্ত্রণে

সালেক সুফী

বাংলাদেশ নিউ জিল্যান্ড টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে সিলেট জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বদলে যাওয়া উইকেটে বাংলাদেশ স্পিনারদের দাপটে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে আছে টিম টাইগার্স। দিনশেষে সফরকারী দল ২৬৬/৮  করে বাংলাদেশ দলের প্রথম ইনিংস ৩১০ রান থেকে ৪৪ রান পিছিয়ে আছে । তাইজুল ইসলাম, মেহেদী মিরাজ, নাঈম ইসলাম উইকেটের ঘূর্ণি সুবিধা নিয়ে অতিথি দলকে কোণঠাসা করে রেখেছিলো সারাদিন।

সংগ্রামী ১০৪ রান করা ব্ল্যাক ক্যাপ্স দলনায়ক কেন উইলিয়ামসের দেওয়া দুটি ক্যাচের একটি ধরতে পারলে বাংলাদেশ স্বল্প রানে ওদের ইনিংস গুটিয়ে দিতে পারতো। হয়নি সেটি। কিন্তু আজ সকালে দ্রুত অবশিষ্ট দুটি উইকেট তুলে নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫০ রান করতে পারলে ভঙ্গুর উইকেটে চেপে ধরতে পারবে কিউই পাখিদের।  বলা বাহুল্য উইকেটের বর্তমান অবস্থায় অন্তত দুই তিনজন ব্যাটসম্যানকে ধৈর্য্য নিয়ে দীর্ঘ সময় ব্যাটিং করতে হবে। দুই দিনে যতটুকু খেলেছে সাকিব, তামিম, লিটন, তাসকিন বিহিন বাংলাদেশের তরুণ দল প্রশংসা করতেই হবে।

টেস্টের প্রথম দিন ছিল ব্যাটিং করার সেরা সময়। উইকেট একটু ধীর গতির থাকলেও টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা উইকেটে থিতু হয়ে বাংলাদেশকে ৩/১৮০ স্বস্তির অবস্থানে নিয়েছিল। সেখান থেকে দেখে শুনে খেললে বাংলাদেশ ৩৫০-৪০০ রান সংগ্রহ করতে পারতো। তাহলে দ্বিতীয় দিনে যেভাবে উইকেটের চরিত্র পাল্টে গাছে বাংলাদেশ চালকের আসনে থাকতে পারতো। মিডল অর্ডার এবং লেট্ অর্ডার দায়িত্ত্ব নিয়ে ব্যাটিং করেনি।

উইকেটে স্থিতু হয়ে উইকেট বিসর্জন দিয়েছে নাজমুল শান্ত (৩৭), মেহেদী হাসান মিরাজ (৩৭)। মুশফিক, মেহেদী মিরাজ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। বর্তমানে খেলা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে দ্বিতীয় ইনিংসে টপ অর্ডারের অন্তত দুইজনকে দীর্ঘ সময় উইকেটে থেকে অ্যাংক রের ভূমিকা পালন করতে হবে। চতুর্থ ইনিংসে নিউ জিল্যান্ড দলকে ২৫০+ রানের টার্গেট দেওয়া হলে বাংলাদেশের জয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

কাল শুরু থেকেই উইকেটের সুবিধা নিয়ে ব্লাকক্যাপসদের চেপে ধরেছিলো বাংলাদেশ। তিন স্পিনার তাইজুল (৪/৮৯), মিরাজ (১/৫৭), নাঈম (১/৬০) ঘূর্ণি উইকেটে নাজেহাল করেছে কিউই পাখিদের। অধিনায়ক শান্ত অনিয়মিত বোলার মমিনুলের হাতে বল তুলে দিয়ে সাফল্য পেয়েছে।  বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ব্ল্যাক ক্যাপ্স অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন সংগ্রাম করে ১০৪ রানের ইনিংসে দলের ভরাডুবি রক্ষা করেছে।

তবে তাইজুল এবং শরিফুল নাঈমের বল থেকে আসা দুটি সুযোগের একটি লুফে নিলে বাংলাদেশ ভালো লিড নিতে পারতো। হয়নি সেটি। বৈরী উইকেটে ২০৫ বল খেলে উইলিয়ামসনের ১০৪ রানের ইনিংসটি নিউ জিল্যান্ডকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়নি।  পাশাপাশি গেলেন ফিলিপ্স (৪২) এবং ড্যারিল মিচেলের (৪১) ইনিংস দুটির একটি বড় হলে বিপদ হতে পারতো।

প্রশংসা করতে হয় বাংলাদেশের লংগার ভার্শনের সেরা বোলার তাইজুল ইসলামকে। ক্রমাগত সঠিক লাইন লেংথে বোলিং করে উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়েছে তাইজুল। আগেই লিখেছি নাঈমের বলে দুইবার জীবন পেয়েছে উইলিয়ামসন।

আজ সকালে নিউ জিল্যান্ডের অবশিষ্ট দুটি উইকেট তুলে নেওয়ার পর দেখা যাবে কঠিন থেকে কঠিনতর হতে থাকা উইকেটে কেমন ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। মুশফিক, মোমিনুল এবং শান্তকে দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করতে হবে. টেস্টটি বর্তমান অবস্থা থেকে জিতে নেওয়ার সুযোগ হাত ছাড়া যেন না হয় তার জন্য পরিকল্পিত ব্যাটিং বোলিং করা ছাড়া বিকল্প নেই। একটি জয় বাংলাদেশ খুব প্রয়োজন এখন।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

2 × three =