স্বর্ণার ৫ উইকেটে দ. আফ্রিকা দূর্গ জয় বাংলাদেশের

১১ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকাকে টি-টোয়েন্টিতে হারাল বাংলাদেশ। এবার ঘরের মাঠে নয়,দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের মাটিতে হারিয়ে বিজয়ের পতাকা ওড়াল টাইগ্রেসরা। রোমাঞ্চ ছড়ানো এক ম্যাচ জিতে ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নাম লিখলেন নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। বাংলাদেশের জয়ে নায়ক অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তার। বোলিংয়ে ২৮ রানে পেয়েছেন ৫ উইকেট।

বাংলাদেশের দেওয়া ১৫০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা ৮ উইকেটে ১৩৬ রানের বেশি করতে পারেনি। তাতে অতিথি দল ম্যাচ জিতে নেয় ১৩ রানে। তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।

এর আগে টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বাংলাদেশ হারাতে পেরেছিল মাত্র একবার। আগের ১১ বারের মুখোমুখিতে একমাত্র জয়টি এসেছিল ২০১২ সালে প্রথম দেখায় মিরপুরে। এরপর সবকটিতে হার। এর মধ্যে ৮টি ম্যাচ বাংলাদেশ খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। কিন্তু কোনো বারই জিততে পারেননি। লম্বা সময় পর এবার প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তীব্র লড়াই করে ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সঙ্গে নিজেদের এগিয়ে যাওয়ার বার্তাও দিয়ে গেল।

অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের মাটিতে দারুণ জবাব দিচ্ছিল বাংলাদেশকে। উদ্বোধনী জুটিতেই ৬৯ রান জমা করে তারা। ওপেনার আনেকা বশের ফিফটিতে ভর করে লক্ষ্যের পথে ছুটছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু স্বর্ণা আক্তারের এক ওভারে ঘুরে যায় ম্যাচের মোড়। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি প্রোটিয়রা। শেষ দিকে স্নায়ু স্থির রেখে, বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে বাংলাদেশ প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকা দূর্গ ভাঙতে সক্ষম হয়।

ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় ১৮তম ওভারে। ওই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ১৮ বলে লাগত ২৮ রান। টি-টোয়েন্টিতে এই সমীকরণ মিলে যায় সহজে। জয়ের জন্য ফেরানোর দরকার ছিল আনেকা বশকে। ৬৭ রান করে বাংলাদেশকে চোখ রাঙানি দিচ্ছিলেন তিনি। স্বর্ণা আক্তার ওই ওভারের দ্বিতীয় বলে তাকে ফেরান। ক্যাচ নেন লতা মন্ডল। ৪৯ বলে ৬৭ রানে ফেরেন আনেকা। ৯টি চারের সঙ্গে একটি ছক্কাও হাঁকান প্রোটিয়া ওপেনার।

ওই ওভারের পঞ্চম বলে নতুন ব্যাটসম্যান নন্ডামিসো সাঙ্গাসেকে টিকতে দেনননি স্বর্ণা। তাকে স্ট্যাম্পড করেন জ্যোতি। ওভারে ২ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ বাংলাদেশের পক্ষে নিয়ে আসেন এই স্পিনার। এর আগে ৩ উইকেট নেন স্বর্ণা। ১৯তম ওভারে নাহিদা আক্তার বোলিংয়ে ফিরে তুলে নেন মার্কসের উইকেট। ওই ওভারে রান হয় মাত্র ২। দ্রুত রান তুলতে গিয়ে ধারাবাহিক উইকেট হারিয়ে প্রবল চাপে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকা আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। অধিনায়ক তাজমিন ব্রিটস ৩০ রান করে রাখেন অবদান। কিন্তু টাইগ্রেসদের উড়ার দিনে আড়াল হয়ে যায় বাকি সব পারফরম্যান্স।

বল হাতে স্বর্ণা আক্তার ২৮ রানে নেন ৫ উইকেট। বাংলাদেশের চতুর্থ বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টি ফাইফারের স্বাদ পেলেন। নাহিদা আক্তার দুইবার, পান্না ঘোষ ও জাহানারা একবার করে এই ফরম্যাটে ৫ উইকেট পেয়েছেন। এছাড়া ১টি করে উইকেট পেয়েছেন নাহিদা, ফাহিমা ও রাবেয়া।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে মুর্শিদা খাতুনের দুর্দান্ত ফিফটিতে ভর করে ২ উইকেট হারিয়ে ১৪৯ রান করে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বেনোনিতে দারুণ শুরু করেন দুই ওপেনার শামিমা সুলতানা ও মুর্শিদা খাতুন। দুজন মিলে ৪২ বলে গড়ে ৪৪ রানের জুটি। ২৪ বলে ২৪ রান করে শামিমা আউট হলে ভাঙে এই জুটি।

ক্রিজে আসেন সোবহানা মোস্তারি। মোস্তারিকে নিয়েও আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের ধারা বজায় রাখেন মুর্শিদা। দুজন মিলে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৩৭ বলে যোগ করেন ৩৯ রান।  মোস্তারি বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। ১৭ বলে করেন ১৬ রান। এর মাঝেই ৫১ বলে ফিফটি তুলে নেন মুর্শিদা।

অধিনায়ক জ্যোতি চারে নেমে রানের গতি বাড়ান। মুর্শিদাকে নিয়ে প্রোটিয়া বোলারদের উপর চড়াও হন । দুজন মিলে মাঠের চারদিকে বাউন্ডারির পসরা সাজিয়া বসেন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে মাত্র ৪২ বলে ৬৬ রান যোগ করেন দুজন। আর তাতেই দেড়শর কাছাকাছি পুঁজি পায় বাংলাদেশ। মুর্শিদা ৫৯ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৬২ এবং জ্যোতি ৬ চারের মারে ২১ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে এলিজ মারি মার্জ ও নন্দুমশো শাঙ্গাসে ১টি করে উইকেট শিকার করেন।

৬ ডিসেম্বর কিম্বারলিতে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

16 − 4 =