গত বছর আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভাটা পড়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে। প্রভাব পড়ে শোবিজ ইন্ডাস্ট্রিতেও। ভিসা জটিলতায় অনেক সিনেমার কাজ স্থগিত হয়ে যায়, সিনেমাও হাতছাড়া হয় অনেক শিল্পীর। দুই ইন্ডাস্ট্রিতেই শঙ্কার মেঘ দেখা দিয়েছিল। তবে এই রোজার ঈদে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার দুই সিনেমা ‘বরবাদ’ ও ‘দাগি’র মাধ্যমে আবারও যৌথ প্রযোজনায় স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।
স্বাধীনতার কয়েক বছর পর শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা নির্মাণ। ২০১০ সালের পর যখন ঢাকাই সিনেমা দর্শকখরায় ভুগছিল, তখন একমাত্র আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছিল যৌথ প্রযোজনা। ‘শিকারি’, ‘নবাব’, ‘বাদশা’ ও ‘বস ২’ সিনেমাগুলো দারুণ ব্যবসা করার পরও নানা অনিয়ম, অভিযোগ আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে থেমে যায় যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণ।
বছর দুয়েক আগে আবারও শুরু হয় যৌথ প্রযোজনা। ‘সুড়ঙ্গ’, ‘দরদ’, ‘স্পর্শ’, ‘ঘুম বারান্দা’সহ বেশ কয়েকটি সিনেমার কাজ শুরু হয়। এ সময় দুই ইন্ডাস্ট্রির আদান-প্রদান ছিল উল্লেখ করার মতো। টালিউডে যেমন জয়া আহসান, মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরীদের কাজের সংখ্যা বাড়ে, তেমনি ওপার বাংলার শিল্পীরাও নিয়মিত কাজ করতে থাকেন এ দেশে। বাংলাদেশের পরিচালকেরাও সিনেমা বানিয়েছেন টালিউডে। আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর যৌথ প্রযোজনা নিয়ে নানা শঙ্কা ও অস্বস্তি দেখা দিয়েছিল। তবে এবার ঈদে দুই ইন্ডাস্ট্রির আদান-প্রদানের পথে নতুন আশা নিয়ে এসেছে ‘বরবাদ’ ও ‘দাগি’।
ভারতের রিধি সিধি এন্টারটেইনমেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের রিয়েল এনার্জি প্রোডাকশন নির্মাণ করেছে বরবাদ। মেহেদী হাসান হৃদয়ের পরিচালনায় এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের দুই দেশের শিল্পীরা। এতে শাকিব খানের সঙ্গে আছেন টালিউডের ইধিকা পাল। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে যেমন আছেন মামুনুর রশীদ, মিশা সওদাগর, শহীদুজ্জামান সেলিম, তেমনি অভিনয় করেছেন ভারতের যীশু সেনগুপ্ত, নুসরাত জাহান, স্যাম ভট্টাচার্য, মানব প্রমুখ। সিনেমার বেশির ভাগ অংশের শুটিং ও সম্পাদনা পর্যায়ের কাজ হয়েছে ভারতে।
দুই দেশের এই কোলাবরেশনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ইধিকা পাল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে তিনি বলেন, ‘আমরা বলে থাকি এপার আর ওপার বাংলা। দুটি শব্দের শেষেই কিন্তু বাংলা আছে। দুই দেশের মধ্যে কাঁটাতার ছাড়া আমি কোনো পার্থক্য দেখি না। আমি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম ঢালিউডের প্রিয়তমা সিনেমা দিয়ে। আমি খুব খুশি যে দুই দেশের শিল্পী ও টেকনিশিয়ানরা আবারও একসঙ্গে কাজ করছেন। দুই দেশের এই কোলাবরেশন বাংলা সিনেমাকে আরও এগিয়ে দেবে।’
অন্যদিকে এসভিএফ আলফা আই এন্টারটেইনমেন্ট বানিয়েছে ‘দাগি’। এটি বাংলাদেশের সিনেমা বলা হলেও এ সিনেমার সঙ্গে সরাসরি জড়িত আছে ভারতের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসভিএফ। শিহাব শাহীনের দাগি সিনেমার অডিও মিক্সিং হয়েছে ভারতে। ইতিমধ্যে এসভিএফ ও আলফা আইয়ের প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু হয়েছে শাকিব খানের নতুন সিনেমা ‘তান্ডব’-এর শুটিং। রায়হান রাফী পরিচালিত সিনেমাটি কোরবানির ঈদে মুক্তি পাবে। এ ছাড়া রাফীর হাতে রয়েছে যৌথ প্রযোজনার আরেক সিনেমা ‘লায়ন’। এতে পশ্চিমবঙ্গের জিতের সঙ্গে দেখা যাবে বাংলাদেশের শরিফুল রাজকে।
সিনেমার কাজের পাশাপাশি এ দেশের বেশির ভাগ ওটিটি কনটেন্ট ও বিজ্ঞাপনের কালার গ্রেডিং, অডিও, সম্পাদনাসহ বিভিন্ন অংশের কাজ হয়ে থাকে ভারতে। তাই দুই দেশের কোলাবরেশনটা খুব জরুরি বলে মনে করেন ভারতের টেকনিশিয়ানরা। অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের নির্মাতা ও শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করছেন ভারতীয় টেকনিশিয়ান সুকান্ত মজুমদার। নূরুল আলম আতিকের ‘পেয়ারার সুবাস’, ‘মানুষের বাগান’, ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’, এন রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতী কথা’, কামার আহমাদ সায়মনের ‘শুনতে কি পাও’, ‘অন্যদিন’, ‘নীল মুকুট’, মোহাম্মদ কাইউমের ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’সহ বেশ কয়েকটি সিনেমার সাউন্ড ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। সুকান্ত মজুমদারের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ছড়িয়ে পড়া গুজব ও মিথ্যা খবর রুখে দিতে দুই ইন্ডাস্ট্রির কোলাবরেশনটা খুব জরুরি। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি কয়েকজন নির্মাতার সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা কাজ শুরু করতে আগ্রহী। আমার মনে হয় দুই ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে যে সম্পর্কটা ছিল, সেটা আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।’